কেশবপুরে ইদ্রিস হত্যায় ব্যবহৃত গাছের ডাল উদ্ধার, আটক শাহিনের স্বীকারোক্তি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের কেশবপুর উপজেলার শ্রিফলা গ্রামের কিশোর ভ্যানচালক ইদ্রিস আলী হত্যাকাণ্ডে জড়িত শাহিনুর রহমান ওরফে শাহিন গাজী নামে এক দুর্বৃত্ত গত শনিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। চুরির উদ্দেশ্যে ইদ্রিস আলীর ভ্যান ভাড়া এবং গাছের ডাল দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেছিলো বলে জবানবন্দিতে সে আদালতকে জানিয়েছে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সাইফুদ্দীন হোসাইন তার জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। এর আগে শাহিন গাজীর স্বীকারোক্তিতে গত শুক্রবার রাতে কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের ঘটনাস্থল থেকে ইদ্রিস আলীর মাথায় আঘাত করার কাজে ব্যবহৃত একটি গাছের ডাল উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। ভ্যানচালক ইদ্রিস আলী হত্যাকাণ্ডে জড়িত শাহিন গাজী খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চাকুন্দিয়া গ্রামের শওকত হোসেন গাজীর ছেলে। বর্তমানে সে যশোরের কেশবপুর উপজেলার রাজনগর (বাকাবর্শি) গ্রামের বাসিন্দা।
ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, ইদ্রিস আলী হত্যাকাণ্ড ও ভ্যান ছিনতাই ঘটনায় ইতোপূর্বে আটক নাজমুল ইসলাম ওরফে ইমরান গত ১৮ মার্চ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তার জবানবন্দিতে ভ্যান ছিনতাই ও চালক ইদ্রিস আলী হত্যাকা-ে জড়িত হিসেবে শাহিন গাজীর নাম প্রকাশ পায়। তবে ইদ্রিস আলী খুনের এক মাস পর গত ৩১ জানুয়ারি কেশবপুর থানার অন্য একটি চুরি মামলায় সে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর কারাগারে যায়। ফলে সে কারাগারে আটক রয়েছে এমন তথ্য পেয়ে তাকে ইদ্রিস আলী হত্যা মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। এরপর আদালতে তার ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে গত ২৪ মার্চ শুনানি শেষে বিচারক দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে শাহিন গাজী ভ্যানচালক ইদ্রিস আলী হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে তারই স্বীকারোক্তিতে গত শুক্রবার রাতে কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের ঘটনাস্থল থেকে মাথায় আঘাত করার কাজে ব্যবহৃত একটি গাছের ডাল উদ্ধার করা হয়। এরপর গত শনিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
শাহিন গাজী জবানবন্দিতে জানিয়েছে, মূলত ভ্যান কেড়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ঘটনার দিন তারা কয়েকজন (শাহিন গাজী, রাসেল, সোহাগ ও নাজমুল ইসলাম ওরফে ইমরান) মিলে ইদ্রিস আলীর ভ্যান ভাড়া করে। এরপর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি শেষে মঙ্গলকোট গ্রামের ঘটনাস্থলে গিয়ে পেছন থেকে সে এবং রাসেল গাছের ডাল দিয়ে পেছন থেকে ইদ্রিস আলীর মাথায় আঘাত করে। এর ফলে ইদ্রিস আলী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন তারা ভ্যানটি নিয়ে যায়। তবে পরে শুনেছে যে, ইদ্রিস আলী মারা গেছে। উল্লেখ্য, ইদ্রিস আলী কেশবপুর উপজেলার শ্রীফলা গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সকালে সে প্রতিদিনের ন্যায় ভ্যান চালানোর জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু রাতে বাড়ি ফিরে আসেনি। পরদিন গত ১ জানুয়ারি সকালে মঙ্গলকোট গ্রামে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ ঘটনায় নিহতের বড়ভাই আব্দুল কুদ্দুস অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কেশবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তদন্তকালে ডিবি পুলিশ ইদ্রিস হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ জড়িত ৩ জন এবং চোরাই ভ্যান বিকিকিনি সিন্ডিকেটের আরো ৩ সদস্যকে আটক করে। গত ১৭ মার্চ যশোর ও মনিরামপুরে আলাদা অভিযান চালিয়ে এই ৬ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে কেশবপুর থেকে ইদ্রিস আলীর ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়। এরপর গত ১৮ মার্চ আটক মূলহোতা নাজমুল ইসলাম ওরফে ইমরানসহ ৩ জনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এর মধ্যে নাজমুল ইসলাম ওরফে ইমরানের জবানবন্দিতে শাহিন গাজীর নাম প্রকাশ পায়।