পিকে হালদারের বান্ধবী শুভ্রারানী মণিরামপুরের পুত্রবধূ

0

মজনুর রহমান,মনিরামপুর (যশোর)॥ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া পলাতক পিকে হালদারের (প্রশান্ত কুমার হালদার) কথিত বান্ধবী আটক শুভ্রা রানী যশোরের মনিরামপুরের পুত্রবধূ। শুভ্রা রানী মনিরামপুর উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের সুব্রত দাসের স্ত্রী। মোবারকপুর গ্রামেরও রয়েছে তার আলিশান বাড়ি। শুভ্রারানী ও তার স্বামী সুব্রত দাস ওয়াকামা লিমিটেড নামের ভুয়া কোম্পানি দেখিয়ে পিকে হালদারের সহায়তায় ৯০ কোটি টাকা ঋণ নেন। বাস্তবে ওয়াকামা কোম্পানির কোন হদিস পাওয়া যায়নি। ওয়াকামা লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুব্রত দাস এবং পরিচালক ছিলেন স্ত্রী শুভ্রারানী দাস। শুভ্রারানী আটক হলেও বিদেশে পালিয়ে রয়েছেন তার স্বামী সুব্রত দাস। সুব্রত ও তার স্ত্রী শুভ্রার চাঞ্চল্যকর ঋন জালিয়াতির খবরে এলাকবাসী হতবাক হয়েছেন।
শুভ্রা রানী দাসের স্বামী সুব্রত দাস এলাকায় সাধন নামে পরিচিত। তিনি মনিরামপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল মোবারকপুর গ্রামের মৃত দুলাল হরি দাসের বড় ছেলে। দুলাল দাস পারিবারিকভাবে ছিলেন অস্বচ্ছল। তিনি যশোর শহরের সম্মিলনী ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করতেন। তবে এলাকায় সুব্রত দাসের বাবা দুলাল দাস ছিলেন একজন সজ্জন ব্যক্তি। সুব্রতের ছোট ভাই দেবব্রত দাস ঢাকায় একটি গার্মেন্টস কোম্পানিতে চাকরি করেন। সুব্রত দাসের স্ত্রীর শুভ্রার বাবার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়।
ওয়াকামা লিমিটেড নামের ভুয়া কোম্পানি দেখিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং কোম্পানি থেকে শুভ্রারানী দাস ও তার স্বামী সুব্রত দাস ৯০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে। এই দম্পতির সাথে মোফাজ্জেল নামে অপর এক ব্যক্তির নামও উঠে এসেছে। গত ২২ মার্চ আমেরিকা থেকে দেশে আসলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুভ্রারানী দাসকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আটক করে। ওয়াকামা লিমিটেড নামের এই ভুয়া কোম্পানির চেয়ারম্যান সুব্রত নিজেই এবং স্ত্রী শুভ্রারানী দাস পরিচালক। কিন্তু ঋণ নেয়ার সময় যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছে তার কোনটিই সঠিক নয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে এই আত্মসাৎকৃত প্রায় ৯০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। টাকা পাচারের উদ্দেশ্যেই এই দম্পতি গত তিন বছরে ৫ বার আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন বলে দুদকের কাছে তথ্য প্রমান রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে পিকে হালদারের সাথে মিলে মিশে শুভ্রা দম্পতি বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শুভ্রা রানীর স্বামীর পিসি (ফুফু) হাসি রানী জানান, তার বড় দাদা মৃত দুলাল হরি দাসের দুই ছেলে সুব্রত দাস ও দেব্রত দাস দু’জনই দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বসবাস করেন। সেখানে দুই ভাই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন বলে তারা জানতেন। আর সুব্রতের স্ত্রী শুভ্রা গৃহিনী বলেই জানেন তারা। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব খবর জেনে তারা হতবাক হয়েছেন। কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা (সুব্রত-শুভ্রারানী) এমন কাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে। পূজা-পার্বণে বছরে এক/দুইবার তারা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসে। তার আলিশান বাড়িটিতে বর্তমান কেউ থাকেননা। বাড়িটিতে এখন তালা মারা রয়েছে।