স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আজ

0
সুন্দর সাহা
আজ সেই দিন। আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আজ। বাঙালির আনন্দের দিন, উচ্ছ্বাসের দিন, বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার প্রকাশ করার দিন। মার্চ, উনিশশো একাত্তর। ইতিহাসের ছাপাখানায় বড্ড ব্যস্ততা। বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই একটুও। আশা আর আশঙ্কার অদ্ভুত এক সময়। অন্ধকার চিরে বেরিয়ে আসছে আলো। পদ্মা, মেঘনায় উথালপাথাল ঢেউ। তীব্র প্রসব বেদনা। জন্ম নিচ্ছে নতুন দেশ, নতুন জাতি। যেদিন থেকে চিরকালের জন্য পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হলো সেই মহান স্বাধীনতা দিবসের ৫০ বছর পূর্ণ (সুবর্ণজয়ন্তী) হলো আজ শুক্রবার (২৬ মার্চ)। আজ জাতীয় দিবস। স্বাধীনতার এই দিনে বাঙালি জাতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে দেশমাতৃকার জন্য আত্মদান করা বীরসন্তানদের। স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার এই সময়টি জাতি নিবিড় আবেগের সঙ্গে স্মরণ করে প্রকাশ করার দিন আজ। একটি পতাকা। জাতীয় সংগীত। স্বপ্নে বিভোর সাত কোটি বাঙালি। মানুষের ঘুম ভাঙলো অস্ত্রের ঝনঝনানির শব্দে। লাশের মিছিল। গোঙানির শব্দ। প্রতিরোধের চেষ্টাও হলো কোথাও কোথাও। গ্রেপ্তার করা হলো বঙ্গবন্ধুকে। ছাব্বিশে মার্চ উনিশশো একাত্তর। জন্ম নিলো একটি নতুন দেশ। আজ তার সুবর্ণ জয়ন্তী। শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ। প্রতিবছর পেছনে তাকিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় ২৬ মার্চ। স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির ওপর একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চালিয়েছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সেই মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে এক হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল দেশের মানুষ। পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করে বাঙালিরা। সেই পটভূমিতে বায়ান্নতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধিকারের চেতনার উন্মেষ ঘটে পূর্ববাংলায়। ধাপে ধাপে তা স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। সামরিক শাসন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফার আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনসহ নানা ঘটনাপ্রবাহের ভেতর দিয়ে এগিয়ে আসে একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের আহ্বানে জেগে ওঠে নিরীহ বাঙালি। যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে তারা শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেয়। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় চালায় বর্বর গণহত্যা। ওই রাতেই গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু। তার আগেই বার্তা পাঠিয়ে দেন স্বাধীনতার ঘোষণার। এরপর গঠিত হয় প্রবাসী সরকার। তাদের নেতৃত্বে সংগঠিত রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদান, তিন লাখ নারীর সম্ভ্রম আর বিপুল ক্ষতির মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বিজয়। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশেরই কিছু লোক বিশ্বাসঘাতকতা করে হাত মিলিয়েছিল পাকিস্তানি ঘাতকদের সঙ্গে। তারা অংশ নেয় গণহত্যা, নারী নির্যাতন ও লুটতরাজ-অগ্নিকাণ্ডের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে। সেই চিহ্নিত শত্রুদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রত্যয় নিয়ে চার দশকের বেশি সময় ধরে স্বাধীনতা বা বিজয় দিবস পালিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার অবশেষে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল বিশাল। বাঙালি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র চেয়েছিল। চেয়েছিল এমন একটি রাষ্ট্র, যা প্রতিষ্ঠিত হবে কিছু আদর্শের ভিত্তির ওপর। স্বাধীনতা দিবস আবার এসেছে অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সেসব আদর্শের দিকে ফিরে তাকানোর দাবি নিয়ে। চরম নিষ্ঠুরতা। মৃত্যুর ঘন অন্ধকার। ধর্ষণ, ধ্বংসযজ্ঞ। মুক্তির স্বপ্ন। অসীম সাহসিকতার জনযুদ্ধ। অপরিসীম ত্যাগ। বিনিময়ে আজকের বাংলাদেশ। পঞ্চাশ বছর পর কোথায় দাঁড়িয়ে আমরা। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে এ এক বিস্ময়কর উত্থানের গল্প। এতোটাই যে বলা হচ্ছে, সহসাই বিশ্বের পঁচিশতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। মেগা প্রকল্প। সামাজিক সূচকেও প্রশংসনীয় অগ্রগতি। কিন্তু এটাই কি গল্পের সবটা? আজ একটি প্রশ্ন বহু মানুষের মনে-এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম। গরিব দেশের চক্র ছিন্নভিন্ন করা দেশে গণতন্ত্র কোথায়? মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমতা আর ইনসাফের গল্পও কি হারিয়ে গেল। কে না জানে এসবই ছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার।