বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধিতে ভারতীয় পণ্যের ক্রয়াদেশ বেড়েছে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥কভিড-১৯ মহামারী আঘাত হানার পর বৈশ্বিক বাণিজ্যে কার্যত স্থবিরতা নেমে আসে। থমকে যায় আমদানি-রফতানিসহ অর্থনৈতিক কার্যক্রম। তবে গত বছরের শেষ দিক থেকে সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পণ্যের তীব্র চাহিদা তৈরি হয়। ফলে চলতি অর্থবছর ভারতীয় পণ্যের ক্রয়াদেশ করোনাপূর্ব সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এক্ষেত্রে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, রাসায়নিক পদার্থ, কার্পেট, হস্তশিল্প, সিরামিক ও সুতি উপকরণগুলো ক্রয়াদেশের শীর্ষে ছিল। এটা বিশ্বজুড়ে চলা মন্দার মধ্যেও ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম চলমান থাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে ভারতীয় পণ্যের ক্রয়াদেশ বৃদ্ধির এমন খবর প্রকাশিত হলো। তাছাড়া ভাইরাসটির নতুন স্ট্রেন শনাক্তের মধ্যে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং এ বৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল থাকা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
ভারতীয় রফতানি সংস্থার (এফআইইও) মহাপরিচালক অজয় সাহাই বলেন, প্রাক-কভিড স্তরের তুলনায় আমাদের রফতানিকারকদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ ৪০ শতাংশ বেড়েছে। প্লাস্টিক, রাসায়নিক পদার্থ, ইঞ্জিনিয়ারিং আইটেম এবং কার্পেট ও চামড়াবিহীন জুতার মতো স্বল্পমূল্যের পণ্যদ্রব্যে স্মরণ রাখার মতো ক্রয়াদেশ পাওয়া গেছে। এছাড়া শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রগুলোর হস্তশিল্প, সিরামিক পণ্য, সুতা ও সুতার উপকরণ তীব্র চাহিদার সাক্ষী হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান এ পুনরুদ্ধার ভারতের রফতানি খাত নিয়ে আশাবাদ তৈরি করেছে। চীন, সিঙ্গাপুর, জার্মানি ও থাইল্যান্ডে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য দুই অংকের চাহিদার দেখা পেয়েছে। এক্ষেত্রে লোহা, ধাতব, তামা, কপার ও গাড়ির যন্ত্রাংশের মতো পণ্যগুলো চাহিদার শীর্ষে ছিল।
চলতি জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে হস্তশিল্প খাতের রফতানি প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে হস্তশিল্পের পুনরুদ্ধার করোনাপূর্ব সময়ের স্তরে পৌঁছে যাবে। হস্তশিল্প প্রচার কাউন্সিলের (ইপিসিএইচ) গভর্নমেন্ট ডিরেক্টর রাকেশ কুমার বলেন, হস্তশিল্পের ক্রয়াদেশের পরিমাণ সন্তুষ্টিজনক। তবে কাঠ ও ধাতব পণ্যের সরবরাহ ব্যয় ও শ্রমব্যয় ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ বেড়ে গেছে।
ভারতের বৃহত্তম জুতা প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক ফরিদা গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিক আহমেদ বলেন, বর্তমান চাহিদা করোনাপূর্ব সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশে এসে পৌঁছেছে। বিশ্বজুড়ে চাহিদা পুনরুদ্ধারের সঙ্গে চাহিদা আগের মৌসুমে ৫০ থেকে ৭০ হাজার জোড়ার তুলনায় বর্তমানে ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ দশমিক ১৬ শতাংশ কমেছে। তবে মহামারী বাণিজ্যের কিছু বৈশিষ্ট্যও পরিবর্তন করে দিয়েছে। রফতানিকারকরা বলছেন, মহামারীর আগে যেমন ক্রয়াদেশগুলো কয়েক মাস আগে দেয়া হতো, সেগুলো এখন স্বল্প সময়ের মধ্যে দেয়া হচ্ছে এবং খুব দ্রুত সেই চাহিদা সরবরাহ করতে হচ্ছে। ফলে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পরিকল্পনায়ও পরির্বতন আনতে হচ্ছে।
গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতের রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ কমে ২৫ হাজার ৬১৮ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এফআইইও আশা করছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের রফতানি ২৮ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ২৯ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছবে। যদিও এটি আগের অর্থবছরে ৩১ হাজার ৪৩০ কোটি ডলারের তুলনায় কম।
কার্পেট রফতানি প্রচার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সিদ্ধ নাথ সিং বলেছেন, মহামারীতে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনের অর্থনীতি অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। ফলে এমন প্রভাব পড়েছে। যদিও কার্পেট রফতানি চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে।