জলাবদ্ধতায় নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সংকট সাতক্ষীরার ৯৫ গ্রামে

0

তালা (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা॥ সাতীরার কয়েকটি ইউনিয়নের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার মানুষ জলাবদ্ধবার কারণে ভুগছেন সুপেয় পানি, নিরাপদ শৌচাগারসহ স্বাস্থ্য সংকটে। এ কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। সাতীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের ১৭টি গ্রাম, ঝাউডাঙ্গার ২১টি গ্রাম ও আগরদাড়ি ইউনিয়নের ২৩টি গ্রাম মিলে মোট ৩ ইউনিয়নের ৬২ গ্রাম এবং সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩৩টি গ্রামের শ’ শ’ পরিবার এখনো নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা এবং হাইজিন সমস্যায় আক্রান্ত। বেসরকারি সংস্থা উত্তরণের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বল্লী ইউনিয়নের কাঁঠালতলায় ৯৪পরিবার, মুকুন্দপুর গ্রামে ৫১৩পরিবার ও রায়পুরে ৫২১পরিবার মিলে ১,১২৮পরিবারের মোট ৫,৬৪০ জন মানুষ নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা এবং হাইজিন থেকে বঞ্চিত হয়ে ভুগছেন নানা রোগে। আগরদাড়ি ইউনিয়নের বাবুলিয়া গ্রামে ৪৬৫ পরিাবর, ইন্দ্রিরায় ৪৭২ পরিবার, চুবাড়িয়া গ্রামে ৮৫০ পরিবার, রামেরডাঙ্গায় ৫৮৭ পরিবার ও কাশিমপুর গ্রামে ১২৮৯ পরিবার সর্বমোট ৩,৬৬৩ পরিবারের নারী, শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী এবং পুরুষ মিলে প্রায় ১৮,৩১৫জন নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও হাইজিন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
অপরদিকে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়ায় ৬৯৬ পরিবার, বলাডাঙ্গা য় ৬৮৬ পরিবার, মাধবকাটি গ্রামে ১৮০ পরিবার, আখড়াখোলায় ২৯৮পরিবার ও ওয়ারিয়া গ্রামে ৫৯৬ পরিবার মিলে সর্বমোট ২,৪৫৬ পরিবারের মোট ১২,২৮০ জন সদস্য ভুগছেন নানা রোগে। পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি তারা ডায়রিয়া, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, চুলকানি, পাচড়া, উচ্চ রক্তচাপ, হাপানীসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বল্লী ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামের মেছের গাজীর স্ত্রী লাইলী বেগম, তোহিদুল গাজীর স্ত্রী হোসেনেয়ারা খাতুন, ঝাউডাংগা ইউনিয়নের বলাডাংগা গ্রামের কাশেম সরদারের স্ত্রী শরবানু বেগম, আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী রহিমা খাতুন, আকিমুদ্দীনের স্ত্রী আঞ্জুমানারা খাতুন, কলেজ ছাত্রী রুপা পারভীন,আগরদাড়ি ইউনিয়নের বকচরা গ্রামের শহিদুল্লাহ সরদার, সালাম সরদারের স্ত্রী বিলকিস বেগম, হাফিজুর রহমানের স্ত্রী সেলিনা খাতুনহ অনেকেই বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ও হাইজিন সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, তাদের এলাকা জলাবদ্ধতা (বৃষ্টির সময় ৭/৮মাস জলাবদ্ধ থাকে) এবং লবণাক্ত থাকায় খাবার পানির কোন ব্যবস্থা নেই। প্রায় ২/৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এক কলস খাবার পানি আনতে হয়। আবার এক ড্রাম পানি ৩০ টাকা দিয়ে কিনে খাওয়া লাগে। বর্ষা মৌসুমে ভিটেবাড়িতে পানি জমে থাকায় ল্যাট্রিন করার মতো জায়গাও থাকেনা। আর লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, চুলকানী, পাচড়া, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তারা। তারা আরও বলেন, বেতনা নদী ভরাট হওয়ায় এবং এলাকায় শত শত মাছের ঘেরের কারণে পানি সঠিকপথে নিষ্কাশন হতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আগরদাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজনুর রহমান মালি জানান, এলাকায় খাবার পানির সমস্যা প্রকট। তাদের খাবার পানি ও স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করতে সরকারি বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। উত্তরণ দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় হতদরিদ্র ও সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন এডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। সাতীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, বল্লী, ঝাউডাঙ্গাসহ কয়েকটি এলাকায় লেয়ার না পাওয়ায় ডিপটিউবওয়েল বসানো সম্ভব হয়ে উঠছেনা। তবে নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা আগের চেয়ে বর্তমানে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। খোলা স্থানে মলত্যাগের হারও প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।