শাল্লায় হিন্দু বাড়িঘরে হামলার মূলহোতা যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশের বহুল আলোচিত সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও হিন্দু পল্লীর ঘর-বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আলোচিত সেই ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা শহীদুল ইসলাম স্বাধীনকে গ্রফতার করা হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’ (পিবিআই)।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়, শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামে হামলায় মূল আসামি শহীদুল ইসলাম স্বাধীনকে কুলাউড়া থেকে গ্রেফতার করে সিলেটে নিয়ে আসা হচ্ছে। গত ১৭ মার্চ সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার পর থেকেই হামলাকারী হিসেবে ওঠে আসে স্বাধীন মেম্বারের নাম। হামলার পর দিন স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়েরকৃত মামলায়ও স্বাধীন মেম্বারকে আসামি করা হয়। শহীদুল ইসলাম স্বাধীনের বাড়ি শাল্লার পাশের দিরাই উপজেলার নাচনি গ্রামে। তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের সূত্রে ও তাদের দেয়া একটি ভিডিও ভাইরালে জানা গেছে, হামলাকারীদের বেশিরভাগই আসে স্বাধীনের গ্রাম দিরাইয়ের নাচনি থেকে। স্বাধীন মেম্বারও হামলাকারীদের দলে ছিলেন। তার উপস্থিতিতেই হামলা হয়। স্থানীয়দের সাথে কথা বলার পর নেপথ্যের ঘটনা বেরিয়ে আসায় ধোঁয়াশা কাটতে শুরু করেছে। জানা গেছে, দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম স্বাধীন বরাম হাওরের কুচাখাই বিলের পানি শুকিয়ে মাছ ধরায় ফসলি জমির পানি সঙ্কট দেখা দেয়। অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ করায় নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুটন দাসসহ গ্রামের অনেক কৃষকই প্রতিবাদ করেন। জলমহালে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ ও পানিমহালের পানি শুকানোর ফলে চাষাবাদে সেচের পানির সঙ্কটের ব্যাপারে নোয়াগাঁওয়ের হরিপদ দাশ ও মুক্তিযোদ্ধা জগদীশ দন্দ্র দাস শাল্লা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে স্বাধীন মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এতে প্তি হয়ে উঠেন দিরাই উপজেলার নাচনী গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ও একই গ্রামের মতাধর আরেক ব্যক্তি পক্কন মিয়া।
এদিকে, হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব গত ১৫ মার্চ দিরাই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। হেফাজতের এই নেতাকে নিয়ে শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুটন দাস আপন নামে এক ব্যক্তি গালমন্দ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। স্বাধীন মেম্বার ফেইসবুকের স্ট্যাটাসকে কাজে লাগিয়ে চার গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে দেয়। প্রতিশোধের নেশায় মত্ত হয়ে ধর্মকে ব্যবহার করে নোয়াগাঁও গ্রামে স্বাধীন মেম্বারের নেতৃত্বে বেশ কিছু বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর গত বৃহস্পাতিবার গভীর রাতে ২২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। হেফাজতকে পুঁজি করে তার নেতৃত্বে এত বড় ঘটনার জন্ম হলো কিভাবে? এ প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। নোয়াগাঁও গ্রামের অসিম চক্রবর্তী জানান, স্বাধীন মেম্বার অবৈধভাবে বিল সেচে দীর্ঘ দিন ধরে মৎস্য আহরণ করছেন। বিলের পাশে নৌকা আনা নেয়া করে তিনি ফসলি জমি নষ্ট করছেন। এ কারণেই নোয়াগাঁও গ্রামের সাথে তার বিরোধ রয়েছে। পানিমহালকে কেন্দ্র করেই এ হামলা হয়েছে তিনি মনে করেন। এলাকাবাসী প্রকৃত ঘটনার কারণ খুঁজে বের করে দুষ্কৃতিকারীদের শাস্তির দাবি জানান। জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে ঝুমন দাস আপন ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে ধর্মীয় উস্কানি ও হেফাজতে ইসলামের নেতা আল্লামা মামুনুল হককে অপমান করেছে এমন অভিযোগ তুলে ঝুমনকে গ্রেফতারের দাবি তোলা হয়। ওই রাতেই পুলিশ স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে আটক করে। এরপর দিন বুধবার সকালে নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমনসহ অন্তত ৩০টি হিন্দু বাড়িঘরে চলে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট। বিষয়টি তখন নিছক ধর্মীয় কারণে বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা হলেও এখন ভিন্ন দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। তিগ্রস্তরা সাংবাদিকদের কাছে একটি ভিডিও বক্তব্যে স্বাধীন মেম্বর ও পক্কন মিয়ার কথা বলেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ওই হামলার নেপথ্যের রহস্য বেরিয়ে আসে। স্থানীয় অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা ও প্রভাবশালী ইউপি সদস্য স্বাধীনের সাথে ঝুমনদের পূর্ববিরোধই হামলার অন্যতম কারণ হতে পারে। জানা যায়, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার সাথে মামুনুল হক বিরোধী ফেসবুক স্ট্যাটাসের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং জলমহাল নিয়ে বিরোধের জের ধরেই এই অমানবিক হামলা হয়। ওই ঘটনায় এরই মধ্যে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সরকারের ঊধ্বর্তন ব্যক্তিরাও বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন। দেশজুড়ে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড়।