ব্যয়সংকোচনে নতুন যুগে এগোচ্ছে ব্রিটেন?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥কভিড-১৯ মহামারী ও ব্রেক্সিটের প্রভাবের মধ্যে চলতি মাসের শুরুতে বাজেট ঘোষণা করেন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বাজেট বিশ্লেষণের পর পরিষেবার মতো খাতগুলোয়ও ব্যাপক আকারে সরকারি ব্যয় কমিয়ে আনার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। মহামারীজনিত সংকট থেকে পুনরুদ্ধারে যেখানে বাড়তি সহায়তার প্রয়োজন, সেখানে ব্যয়সংকোচন নীতি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতিকে ধীর করতে পারে। কর ও ব্যয়বিষয়ক শীর্ষস্থানীয় একটি থিংকট্যাংক সতর্ক করেছে, এর মাধ্যমে ব্যয়সংকোচনের নতুন যুগের দিকে যেতে পারে ব্রিটেন। খবর গার্ডিয়ান।
ইনস্টিটিউট ফর ফিসক্যাল স্টাডিজ (আইএফএস) বলেছে, কভিড-১৯ সৃষ্ট বিভিন্ন সংকট সত্ত্বেও অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বাজেট প্রাক-মহামারী পরিকল্পনার তুলনায় ৮ শতাংশ কমানো হয়েছে। ব্রেক্সিটের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর অতিরিক্ত সহায়তার প্রয়োজন হলেও বেশ কয়েকটি বিভাগে উল্টো ব্যয়সংকোচনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
আইএফএসের গবেষণা অর্থনীতিবিদ বেন জারাঙ্কো বলেন, বর্তমান ব্যয়সংকোচনের এ পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হতে পারে। তবে এ পরিকল্পনায় অনেক সরকারি পরিষেবা ২০২০-এর দশকের প্রথমার্ধে ২০১০-এর দশকের মতো ব্যয়সংকোচন নীতির মুখোমুখি হতে পারে।
যদিও এটা সুনিশ্চিতভাবে ব্যয়সংকোচনের পর্যায়ে যায়নি বলে দাবি করেছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়। ট্রেজারি বলেছে, চলতি বছর এবং পরবর্তী বছরগুলোয় ৭ হাজার ২০০ কোটি পাউন্ড দিয়ে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি এ সংসদ অধিবেশনের বাকি অংশে ব্যয় বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ২০২২ সালের পর বিভাগীয় বাজেট নির্ধারণ করা হয়নি। সরকার গুরুত্বপূর্ণ জনসেবায় বিনিয়োগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবুও কোনো বিষয় যদি ব্যয়সংকোচনের নীতির দিকে ইঙ্গিত করে তবে তা বিভ্রান্তিকর।
বাজেট ঘোষণার পর অফিস ফর বাজেট রেসপন্সিবিলিটিস জানিয়েছে, সুনাক ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে জনসেবামূলক খাতে ৪০০ কোটি পাউন্ড কমিয়ে দিয়েছে। এর আগে গত নভেম্বরে অর্থমন্ত্রী ১ হাজার কোটি পাউন্ড ব্যয়সংকোচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ট্রেজারি বলেছে, এ ব্যয়সংকোচন নীতি যান্ত্রিক পরিবর্তনের ফলস্বরূপ। এ কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি আগের পূর্বাভাসের চেয়ে কম হবে। সুনাক এখনো ২০২১-২২-এর তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি ব্যয় ২ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবেন।
আইএসএফ জানিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পূর্বাভাসের তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি হবে না বলে মনে করছে ট্রেজারি। বাস্তবে তারামূলত বিষয়টি উপেক্ষা করছে এবং প্রক্রিয়াটিতে প্রতি বছর ৪০০ কোটি পাউন্ড সাশ্রয়ের পরিকল্পনা করছে।
সামগ্রিকভাবে পরিষেবা খাতে সরকারি ব্যয় এখন পরিকল্পনামাফিক প্রাক-মহামারীর চেয়ে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি পাউন্ড কমিয়ে আনা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের বাইরে সহায়তা কমিয়ে দেয়ার মাধ্যমে ৫০০ কোটি পাউন্ড এসেছে। জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো কিছু খাতকে এ ব্যয়সংকোচন নীতির বাইরে রাখা হয়েছে। তবে কারাগার, পরিবেশ ও পরিবহনের মতো বিভাগগুলোয় প্রাক-মহামারীর পরিকল্পনার তুলনায় সরকারি ব্যয় ৯০০ কোটি পাউন্ড কমিয়ে আনা হবে। মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় কমিয়ে আনা হবে।
জারাঙ্কো বলেন, বিভাগগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পূর্ব-বিদ্যমান চুক্তির মাধ্যমে সুরক্ষিত হওয়ার মতো ভাগ্যবান নয়। অর্থমন্ত্রীর ব্যয়ের পরিকল্পনাগুলো প্রাথমিকভাবে দৃশ্যমান হওয়ার চেয়ে আরো বেশি কঠোর। এতে বিভাগগুলো স্পষ্টভাবেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। আর এটা মহামারীজনিত চাপের কারণে নয়।