জাতি বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান

0
ইকতেদার আহমেদ
বাংলাদেশ একটি সমজাতীয় একক রাষ্ট্র। এ দেশে বসবাসরত বাঙালি জাতির শতকরা ৯০ শতাংশের বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বী। আট ভাগ হিন্দু। দুই ভাগ খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় ছাড়া বাদবাকি সবাই বাঙালি। বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংখ্যা সারা দেশের জনসংখ্যার তুলনায় শতকরা ১ ভাগ। বাংলাদেশের ন্যায় সমজাতীয় একক দেশ পৃথিবীতে বিরল। মোগল ও ব্রিটিশ আমলে বঙ্গের অন্তর্ভুক্ত ছিল বাংলাদেশ। মোগল ও ব্রিটিশদের অধীন পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ সমন্বয়ে গঠিত ছিল বঙ্গ। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক মর্যাদায় পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান নামকরণ করা হয়। অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গ পশ্চিম বাংলা নামে রাজ্যের মর্যাদায় ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে প্রাদেশিক মর্যাদাসম্পন্ন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামে অভ্যুদয় ঘটে। পশ্চিম বাংলার বর্তমান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যটির নাম বাংলা নামকরণের সপক্ষে বিধান সভায় প্রস্তাব পাশ করেছে। এটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন করলে পশ্চিম বাংলা রাজ্য বাংলা নামে অভিহিত হবে।
ব্রিটিশ শাসনামলে সামগ্রিকভাবে বঙ্গ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ হলেও পূর্ববঙ্গ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং পশ্চিমবঙ্গ হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। সে সময় শিক্ষা, চাকরি ও ব্যবসায় মুসলিমদের চেয়ে হিন্দুরা এগিয়ে ছিল। উভয় বাংলায় এই তিন ক্ষেত্রে হিন্দুদের প্রাধান্য ছিল। অনগ্রসর মুসলিমদের এগিয়ে নেয়ার জন্য ব্রিটিশরা ১৯০৫ সালে ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম সমন্বয়ে একটি পৃথক প্রদেশ গঠন করে। তৎকালীন হিন্দু সুশীল সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গকে তাদের মাতৃভূমির দ্বিখণ্ডন হিসেবে অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়। তাদের কঠোর অবস্থানের প্রতি সমব্যথি হয়ে সে বছরই রবীন্দ্রনাথ ক্ষোভে, দুঃখে, অপমানে, অভিমানে বাংলার অখণ্ডতা অক্ষুণ্ন রাখতে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’- গানটি লেখেন। ওই সময় বাংলার অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন ব্যক্তের প্রতিটি অনুষ্ঠানের শুরুতে গানটি গাওয়া হতো। দাদরা তালের গানটির সুর ১৯৮৯ সালে গাওয়া গগন হরকরার ‘আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে’ গানটির সূর থেকে নেয়া হয় এমনটিই দাবি সাহিত্য ও সঙ্গীতজ্ঞদের। কুষ্টিয়ার শিলাইদহে পৈতৃক জমিদারি দেখাশুনার সময় সেখানকার ডাকপিয়ন বাউল গগন চন্দ্র দাসের সাথে চিঠিপত্র বিলির সূত্রে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে। সে সময় ডাকপিয়নকে হরকরা বলা হতো বিধায় তিনি হরকরা হিসেবে পরিচিতি পান। হিন্দু সুশীল সম্প্রদায়ের কঠোর আন্দোলনে ছয় বছরের মাথায় ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়। বঙ্গভঙ্গ রদের কারণে পূর্ববঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা বিক্ষুব্ধ হলে তাদের ক্ষোভ প্রশমনে ব্রিটিশরা ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে; যার ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নামে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। হিন্দু সুশীলসমাজ বঙ্গভঙ্গের ন্যায় ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে। তাদের এই অবস্থানে রবীন্দ্রনাথকে তারা সহযোগী হিসেবে পাশে পায়। ভারত বিভাজনের সময় প্রথম সিদ্ধান্ত হয় যে পূর্ব ও পশ্চিমের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ এবং মধ্য ও দক্ষিণের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ সমন্বয়ে এ সি ও বি নামক তিনটি আলাদা দলভুক্ত প্রদেশ কেন্দ্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। এই সিদ্ধান্ত বিফল হলে পরে সিদ্ধান্ত হয় যে হিন্দু ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ সমন্বয়ে পৃথক হিন্দু ও মুসলিম রাষ্ট্র হবে এবং করদ মিত্র রাজ্যগুলো স্বাধীন ইচ্ছা অনুযায়ী ভারত বা পাকিস্তান যেকোনো রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। ব্রিটিশদের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ হিসেবে পাঞ্জাব ও বঙ্গ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাঞ্জাব ও বঙ্গে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে বঙ্গ ও পাঞ্জাবকে বিভাজনে ব্রিটিশদের বাধ্য করা হয়। ইতিহাসের নির্মমতা বঙ্গভঙ্গের সময় যে হিন্দু সুশীল সমাজ বঙ্গের অখণ্ডতার পক্ষে অবস্থান ছিল; সেই তারাই ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় বঙ্গ বিভাজনের সপক্ষে অবস্থান নেয়। বাংলা ভাগের অবস্থানকারীদের অগ্রজ ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভাতিজি জামাতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্যাম প্রসাদ মুখার্জি। ভারতবর্ষ বিভাজনের অব্যবহিত আগে বঙ্গ ও আসাম উভয় প্রদেশে মুসলিম লীগের যথাক্রমে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও স্যার সাদ উল্লাহ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। উভয় মুখ্যমন্ত্রীর বঙ্গ ও আসাম সমন্বয়ে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের সপক্ষে জোরালো অবস্থান ছিল।
১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিবিষয়ক অংশে অনুচ্ছেদ নং ২৫ আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতির উন্নয়নবিষয়ক। অনুচ্ছেদটিতে বলা হয়েছে- জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের ও জাতিসঙ্ঘের সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা- এসব নীতি হবে রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি এবং এসব নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র (ক) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য চেষ্টা করবে; (খ) প্রত্যেক জাতি স্বাধীন অভিপ্রায় অনুযায়ী পথ ও পন্থার মাধ্যমে অবাধে নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনের অধিকার সমর্থন করবে; এবং (গ) সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বা বর্ণ বৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করবে। সংবিধানের এ অনুচ্ছেদটি অবলোকনে প্রতীয়মান হয় মূল অনুচ্ছেদটির সাথে এর দফা (খ) সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশের ন্যায় ভারত ও পাকিস্তান সমজাতীয় একক রাষ্ট্র নয়। ভারতের প্রতিটি রাজ্যেই পৃথক একক জাতি রয়েছে। একটি রাজ্যের একক জাতির সাথে অন্য রাজ্যের একক জাতি একই ধর্মাবলম্বী হলেও তাদের ভাষা, কৃষ্টি, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে ভিন্নতা রয়েছে। ভারতের অনুরূপ পাকিস্তানের প্রদেশগুলোতে পৃথক একক জাতি থাকলেও এবং তারা সমধর্মাবলম্বী হলেও তাদের ভাষা, কৃষ্টি, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে ভিন্নতা রয়েছে। জাতি অধিকাংশ দেশের ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক হলেও জাতীয়তা একটি দেশের ভূখণ্ডভিত্তিক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভারত বহুজাতিভিত্তিক একটি দেশ। দেশটির বিভিন্ন জাতি অঞ্চলভিত্তিক রাজ্যগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী, যেমন- বাঙালির ক্ষেত্রে পশ্চিম বাংলা, পাঞ্জাবিদের বেলায় পাঞ্জাব, তামিলদের তামিলনাড়ু, গুজরাটিদের গুজরাট, নাগাদের নাগাল্যান্ড প্রভৃতি। ভারতের অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন জনগোষ্ঠী আঞ্চলিক জাতি হিসেবে অভিহিত হলেও জাতীয়তার ক্ষেত্রে ভারত নামের ভূখণ্ডে বসবাসরত সব জাতিই ভারতীয়। ভারতে বসবাসরত নাগরিকদের জাতীয়তা ভারতীয় হলেও সেখানে ভারতীয় নামে পৃথক সত্তাবিশিষ্ট জাতি নেই। অনুরূপ পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের নাগরিক সিন্ধি, পাঞ্জাব প্রদেশের নাগরিক পাঞ্জাবি, বেলুচিস্তান প্রদেশের নাগরিক বেলুচ এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের নাগরিক পাঠান নামে অভিহিত। কিন্তু জাতীয়তার ক্ষেত্রে তারা সবাই পাকিস্তানি এবং সেখানেও পাকিস্তানি নামে পৃথক সত্তাবিশিষ্ট জাতি নেই। কোনো একটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী একটি জাতির অন্তর্ভুক্ত হলে অনেকসময় দেখা যায় জাতিভিত্তিক দেশটির নামকরণ হয়, যেমন- বাঙালির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, ইংরেজদের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড, সিংহলির ক্ষেত্রে সিংহল, ফিনিশদের ক্ষেত্রে ফিনল্যান্ড প্রভৃতি। আবার এমনো দেখা যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে দেশের নামকরণ হলেও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী উপজাতি নামে অভিহিত হয়।
ইংরেজরা তাদের মূল ভূখণ্ড ইংল্যান্ডের বাইরে চারটি রাষ্ট্র যথা- আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড গঠন করলেও ওই সব দেশের নাগরিক তাদের মূল জাতিসত্তাবহির্ভূত ভূখণ্ডগত জাতীয়তায় পরিচিত, যেমন- আমেরিকার ক্ষেত্রে আমেরিকান, কানাডার ক্ষেত্রে কানাডিয়ান, অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ান এবং নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডার। আমেরিকা অভিবাসীদের দেশ। সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ইংরেজ বংশোদ্ভূত হলেও বিভিন্ন অঞ্চল বা দেশ থেকে আগতদের অঞ্চল বা দেশভিত্তিক পরিচয় রয়েছে, যেমন- ভারতীয় অভিবাসীদের বলা হয় ভারতীয় আমেরিকান, বাংলাদেশী অভিবাসীরা বাংলাদেশী আমেরিকান, চীনা অভিবাসীরা চায়নিজ আমেরিকান, আফ্রিকা মহাদেশের অভিবাসীদের ক্ষেত্রে আফ্রিকান আমেরিকান অথবা কালো আমেরিকান প্রভৃতি। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় ভূখণ্ডের দু’জন বাঙালি দুটি ভূখণ্ড হতে আমেরিকায় অভিবাসী হলে তারা তাদের জাতি বাঙালির পরিবর্তে দেশভিত্তিক জাতীয়তা ভারতীয় আমেরিকান ও বাংলাদেশী আমেরিকান নামেই অভিহিত হয়। আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসরত সব নাগরিকের জাতীয়তা আমেরিকান। সেখানেও ভারতীয়দের অনুরূপ আমেরিকান নামে কোনো পৃথক জাতিসত্তা নেই। পৃথক জাতিসত্তার বাঙালি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি হয়েছিল। পাকিস্তান সৃষ্টির ২৩ বছরের মাথায় প্রমাণিত হলো যে একই ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন জাতির ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে একক রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্তি সময়ের পরিক্রমায় সঠিক নয়।
বাংলাদেশের প্রথমত, মুক্তি ও স্বাধিকার এবং পরে স্বাধীনতা আন্দোলন চলাকালীন ভারত ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে এ দেশবাসীর প্রতি মানবিক, আর্থিক ও সামরিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। ভারতের প্রত্যক্ষ সামরিক অংশগ্রহণের মধ্যে অল্পসময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। প্রণিধানযোগ্য যে, অবিভক্ত ভারতের করদ রাজ্য হায়দরাবাদ ক্যাবিনেট মিশন প্রণীত নীতির আলোকে ভারত বা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে যাত্রা করে। এক বছরের মাথায় ভারত সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে হায়দরাবাদের শাসক নিজামকে পরাভূত করে রাজ্যটি নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। অন্তর্ভুক্তি-পরবর্তী ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওয়াহের লাল নেহরু দেশটির পার্লামেন্টে বলেছিলেন, পূর্বপাকিস্তানও তাদের সাথে চলে আসবে। হায়দরাবাদের ঘটনাবলির আলোকে অনেকেই ধারণা পোষণ করেন, সে সময় পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে হায়দরাবাদের ন্যায় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটলে এর পরিণতি অনুরূপ হতো। ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলিম। সেখানে জাতিসঙ্ঘ বা কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার অধীন নির্বাচনের আয়োজন করা হলে কাশ্মিরিরা ভারতে অন্তর্ভুক্ত না থাকার সপক্ষে যে অবস্থান ব্যক্ত করবে এটি দিল্লির অজানা নয়। এ কারণেই দেখা যায়, ভারত অধিকৃত কাশ্মির একটি অস্থিতিশীল অঞ্চল। সেখানকার নাগরিকরা ভারতের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার হতে চূড়ান্তভাবে বঞ্চিত। কাশ্মির ছাড়াও ভারতের সেভেন সিস্টারসের অন্তর্ভুক্ত মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও আসামে সশস্ত্র বিদ্রোহ বিরাজমান। এসব রাজ্যের নাগরিকদের বড় অংশ স্বাধীনতার সপক্ষে। এগুলোতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অবস্থান যে স্বাধীনতার সপক্ষে হবে তা ভারতের কেন্দ্রীয় শাসকরা অনুধাবনে সক্ষম। ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের তামিল জাতিগোষ্ঠী এবং পাঞ্জাবের শিখ সম্প্রদায়ের অবস্থানও স্বাধীনতার সপক্ষে। রাজ্য দু’টির নাগরিকরা অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলে তাদের অবস্থান নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। ভারতের যেসব রাজ্য বা অঞ্চলের নাগরিকরা স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার তাদের বিষয়ে আমাদের অবস্থান ১৯৭১ সালে আমাদের বিষয়ে ভারতের যে অবস্থান ছিল তার বিপরীত কিছু হলে তা আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ২৫(খ) এর চেতনাকে ক্ষুণ্ন করে।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: [email protected]