সরকার ভারতকে শুধু দিচ্ছে, কিছুই পাচ্ছে না : মির্জা ফখরুল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার ভারতকে শুধু দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু ভারত থেকে কিছুই আনতে পারছে না। এ জিনিসগুলো দেশের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই। ক্ষমতা দখল করে বসে থাকা এই সরকার অবৈধ সরকার। তারা বেআইনীভাবে নির্বাচনের আগের রাতে ভোট করে নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। এখন সরকার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে তারা আইনের আশ্রয় নিয়ে দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের ষ্টীম রোলার চালিয়ে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পাঁচুরিয়া গ্রামে বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কবর জিয়ারত ও দোয়া অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এমন কতগুলো আইন তারা তৈরি করেছেন, আইনগুলো বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুন্ন করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করে তারা দেশের মানুষের কথা বলার ও সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে দিয়েছে। তারা দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছে। ফখরুল বলেন, আজকে সময় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষকে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের দেখানোর পথে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে এই স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করে প্রকৃত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের ক্ষমতা জামুকা ও সরকারের নেই। তার খেতাব বাতিল করা হলে স্বাধীনতার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করা হবে এবং মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা হবে। ১০ বছর আগে কোনো তিস্তা চুক্তি হয়নি। তাই দেশ তিস্তার পানি থেকে বঞ্চিত। আর তিস্তা চুক্তি হবে না। সরকারের যারা তিস্তা চুক্তি করার কথা বলছে তা মিথ্যা বলছে। এখনও সীমান্তে আমাদের নাগরিক হত্যা বন্ধ করতে পারেনি। তিস্তাসহ ভারত থেকে যে নদীগুলো আমাদের দেশে প্রবাহিত হচ্ছে সে নদীরগুলো কোনো হিস্যা আমরা এখনো পাইনি। এ সময় বিএনপি চেয়াররসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, নির্বাহী কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক কৃষিবীদ শামীমুর রহমান শামীম, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি আফরোজা খান রিতা, বিএনপির প্রয়াত মহাসচিবের বড় ছেলে ড. খন্দকার আকবর হোসেন বাবলু এবং মেঝো ছেলে খন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আজাদ হোসেন খান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার গোলাম মহিয়ার শিপার, জেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান মিলন, ঘিওর উপজেলা বিএনপি সভাপতি মীর মানিকুজ্জাম মানিক, জেলা আইনজীবি সমিতির ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুল আলিম খান মনোয়ার, ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো: সেলিম মিয়া, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাজ্জাদ হোসেনসহ বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ দফদর সম্পাদক কৃষিবীদ শামীমুর রহমান শামীম বলেন, জিয়াউর রহমানের খেতাব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। গণতন্ত্রের মানুষকন্যা দেশ নেত্রী খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দীদের মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা থেকে মুক্তি চাই। দেশের সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছে। এদেশের জনগণকে সাথে নিয়ে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করা হবে।
এসময় বক্তারা বলেন, মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা ও আদর্শনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ। দৃঢ়তা, অটুট মনোবল এবং ব্যক্তিত্বে তিনি ছিলেন অনন্য উচ্চতার একজন ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জনগণের মুক্তির সকল সংগ্রামে তিনি রেখেছেন অসামান্য অবদান। ১/১১-তে দেশের এক চরম রাজনৈতিক সঙ্কটকালে বিএনপি মহাসচিব হয়েও খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত রুখে দিতে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দেশবাসী তাকে চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের এই দিনে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর খোন্দকার দেলোয়ার বিএনপির মহাসচিব নিযুক্ত হন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুরো সময় বিএনপির নানা সঙ্কটে খালেদা জিয়ার পক্ষে তিনি জোরালো ভূমিকা পালন করেন। তৎকালীন সরকার জোর করে বিএনপির নেতৃত্ব বদল করতে চাইলেও শুধুমাত্র খোন্দকার দেলোয়ারের জোরালো ভূমিকায় সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। দেলোয়ারই সে যাত্রায় বিএনপিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।