স্কুলে-মাদ্রাসায় শিশুদেরকে নির্যাতন রোধে নজরদারী বাড়ানোর নির্দেশ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশে স্কুলে-মাদ্রাসায় যাতে শিশুদের ওপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন যাতে না হয় সেজন্য নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। শিশু আইনে শিা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ওপর নির্যাতন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও সম্প্রতি এ ধরণের কিছু ঘটনা সামনে আসায় এই নিদের্শনা দেন হাইকোর্টের বেঞ্চ। সম্প্রতি চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমি নামে একটি মাদ্রাসায় একটি শিশুকে অকথ্য নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর অভিযুক্ত শিককে বরখাস্ত ও গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার আদালতের নজরে আনেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ওইদিনই আদালত চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন রবিবারের মধ্যে এ বিষয়ক অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে।
গতকাল সেই প্রতিবেদন দেয়ার পর আদালত যেসব নির্দেশনা দেয় :
দেশের সকল মাদ্রাসা ও শিা প্রতিষ্ঠানে সংবিধান ও দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলতে হবে। মাদ্রাসা বা শিা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের মারধর করা, ভয়ভীতি দেখানো যাবে না এমন সরকারি নির্দেশনার বাস্তবায়ন। শিা মন্ত্রণালয়, শিা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা বোর্ড বিষয়টি নজরদারি করবে, এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। শিশুটির নিরাপত্তা বিধানের অংশ হিসেবে তার বাড়িতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করতে হবে। নির্যাতনের শিকার শিশুটির পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয় সেটি মনিটরিং এ রাখা। নির্যাতনের ঘটনা যাতে শিশুটির ভবিষ্যতের ওপর কোন নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে সেজন্য জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমির প্রিন্সিপালকে সতর্ক করা হবে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বিবিসিকে বলেন, আদালত তার নির্দেশনায় বলেছেন, শিানীতিতে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও মাদ্রাসা ও বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের মারধর করা, ভয়ভীতি দেখানোর মত ঘটনা ঘটছে। এ ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে সেটি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। নির্যাতনের শিকার শিশুটির বাবা মোহাম্মদ জয়নাল বিবিসিকে বলেছেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে তার বাড়িতে তিন জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মি. জয়নাল বলেছেন, তাকে জানানো হয়েছে তার ছেলের নিরাপত্তায় ২৪ ঘণ্টা নিয়োজিত থাকবেন ওই পুলিশ সদস্যরা। এদিকে, শিশুটিকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরীা-নিরীা করে প্রথিমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।তার বাবা জানিয়েছেন, শিশুটি এখন শারীরিকভাবে সুস্থ আছে। কিন্তু সে মাদ্রাসায় ফিরে যেতে চাচ্ছে না। তিনি বলেন, “ভয় পাইছে তো, তাই মাদ্রাসায় ফেরত যাইতে চাইতেছে না। আমরা ভাবছি এখন না গেলে না যাক, এক-দুই মাস পরে একটু ভয় কমলে পাঠাবো তাকে।”
গত ৯ই মার্চ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া তেত্রিশ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, লম্বা সাদা আলখাল্লা পরা এক ব্যক্তি ছোট্ট একটি শিশুকে ঘাড়ের কাছের কাপড় ধরে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে একটি ঘরে ঢোকায়। এরপর ওই শিক শিশুটিকে মাটিতে ফেলে বেত দিয়ে নির্দয়ভাবে পেটাতে দেখা যায়। ভাইরাল ভিডিও দেখ হাটাহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন ওই শিার্থীকে মাদ্রাসা থেকে নিয়ে আসেন এবং অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক ও পরিচালককে নিয়ে আসেন। রাতে শিশুটির পরিবার মামলা না করলেও, পরদিন ১০ই মার্চ মি. জয়নাল বাদী হয়ে অভিযুক্ত শিক মোহাম্মদ ইয়াহিয়ার নামে বাংলাদেশ ফৌজদারি দণ্ডবিধি ও শিশু আইনে মামলা করেন। ১০ই মার্চ ওই শিককে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। ওই শিককে তার প্রতিষ্ঠান থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সংবাদ সূত্র : বিবিসি বাংলা।