স্বরগরম দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম চিংড়ি পোনার হাট

0

আলী আকবর টুটুল, বাগেরহাট॥ দণি-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চিংড়ি পোনার হাট বাগেরহাটের রামপালের ফয়লাহাট। কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হ্যাচারি থেকে আনা হয় বাগদা ও গলদা পোনা। নদী থেকে পাওয়া চিংড়ির পোনাও পাওয়া যায় এই হাটে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। দণি-পশ্চিমাঞ্চলের সিংহভাগ চিংড়ি চাষি এ হাটের পোনার উপর নির্ভর করেন। বছরে ৬ মাস থাকে গলদা ও বাগদা পোনা বিক্রির মৌসুম। এই মৌসুমে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার পোনা বিক্রি হয় এই হাটে। তবে সম্ভাবনাময় এই হাটের নানা সংকটের কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
ফয়লায় প্রতিদিন ভোর থেকে পোনার হাট বসে। বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চিংড়ি চাষিরা ছুটে আসেন এই চিংড়ি পোনার আড়তে। এখান থেকে পোনা কিনে নিয়ে চলে যান মৎস্য ঘেরে। হ্যাচারীর পোনার পাশাপাশি ও প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে আহরণকৃত পোনাও বিক্রি হয় এই হাটে। তবে হ্যাচারির চেয়ে গুণগত মান ভালো হওয়ায় নদী থেকে পাওয়া পোনার চাহিদা বেশি। তাই দামও দ্বিগুণ। প্রতি হাজার হ্যাচারি পোনা বিক্রি হয় সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা দরে। আর নদীর পোনা বিক্রি হয় ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা পর্যন্ত। চিংড়ি পোনা গণনার জন্য রয়েছেন হাজারেরও বেশি মানুষ। শুধু গণনা করেই দিনে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত আয় করেন তারা। পোনা ব্যবসায়ী শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, ভোর বেলা থেকে এখানে পোনা বিক্রি শুরু হয়। বিভিন্ন দামে পোনা ক্রয় করে চাষীরা। সারাদিন কয়েকশ মানুষ এখানে এই বেচাকেনার সাথে জড়িত থাকেন। বাগেরহাট, সাতীরা, পাইকগাছা, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার চিংড়ি চাষীরা এখান থেকে পোনা কেনেন। পোনা কিনতে আসা ঘের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই হাট থেকে চিংড়ির পোনা কিনে ঘেরে চাষ করি। আমাদের আগ্রহ থাকে নদীর পোনার উপর। কিন্তু বিভিন্ন কারণে নদীর পোনার সংকট থাকায় আমরা বাধ্য হয়ে হ্যাচারির পোনা ক্রয় করি। তবে নদীর পোনায় উৎপাদন ভাল হয় বলে দাবি করেন তিনি। অপর দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাকৃতিক উৎসের মাধ্যমে আহরিত পোনা গাড়িতে করে আসে এই হাটে। এখান থেকে পোনা ক্রয় করে নিয়ে যাওয়ার সময় কিছু প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার অনৈতিক চাহিদা না মেটানোর কারণে এই পোনা ঢেলে ফেলে দেয়। এতে চাষীরা মারাত্মক ভাবে তিগ্রস্থ হয়। অনেক সময় নদীর পোনার ব্যবসায়ীদের হাড়িও ফেলে দেয় ঠুনকো অজুহাতে। ফয়লাহাট বাজার মৎস্য সমিতির সভাপতি গাজী রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে বাজার এখন জমজমাট। বাগেরহাটসহ আশপাশ এলাকার হাজার হাজার চাষি এই হাট থেকে পোনা ক্রয় করেন। ফয়লাহাটে প্রায় দুই শতাধিক মাছের পোনার আড়ৎ (দোকান) রয়েছে। পোনা পরিবহন, পোনা গোনাসহ বিভিন্ন কাজের সাথে সহস্রাধিক মানুষ যুক্ত রয়েছে। এই হাট থেকে প্রতি বছর সাড়ে তিনশ’ কোটি পোনা বিক্রি হয়। কিন্তু অনেক সময় প্রশাসনের লোকজন হাটের ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের অহেতুক হয়রানি করে থাকে যা মোটেই কাম্য নয়। আমরা মৎস্য বিভাগ ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে এই হয়রানি বন্ধের দাবি জানাই। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম রাসেল বলেন, বাগেরহাটের সব থেকে বড় পোনার হাট ফয়লাহাট। এখানের পোনার উপর চাষীরা একধরণের নির্ভর করেন। কোন ভাবে এই হাট ও হাটের উপর নির্ভর করা চাষীদের তি হয় এমনকিছু করা যাবে না। জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথা বলে নদীর পোনার বিষয়টির একটি সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।