রাজনীতিতে কিশোর নিষিদ্ধ হলে অপরাধ কমবে

0

দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ‘কিশোর গ্যাং’। সারা দেশে ভয়াবহ আকারে বাড়ছে কিশোর অপরাধের ঘটনা। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরোনোর আগেই অনেকে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধীচক্রের সঙ্গে। ঘটাচ্ছে ভয়ংকর সব অপরাধ। কিশোরদের একটি অংশের বেপরোয়া আচরণ এখন সর্বত্র পাড়া-মহল্লায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয় তারা। কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে পুলিশ অধিদপ্তরের প থেকে নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে সংসদীয় কমিটির দুটি বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। পুলিশের তথ্য থেকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, খোদ রাজধানীতেই প্রতি মাসে যেসব হত্যার ঘটনা ঘটছে তার বেশির ভাগ ঘটনায় কিশোর অপরাধীরা জড়িত বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। ২০১৮ সাল থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীতে হওয়া ৩৬৩টি ছিনতাইয়ের নেপথ্যেও ছিল কিশোর অপরাধীরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাসমান ছিনতাইকারীদের বড় অংশই কিশোর। তারা ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, ইভ টিজিং, শ্লীলতাহানিতেও জড়িত। ঢাকার শিশু আদালতের নথি অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে রাজধানীতে কিশোর-তরুণদের সিনিয়র ও জুনিয়র দ্বন্দ্বে ৮৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। আর পুলিশের তথ্য মতে, গত ১৭ বছরে ঢাকায় কিশোর অপরাধীদের হাতে ১২০ জন খুন হয়েছে। রাজধানীতে ৩৩টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় বলেও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সূত্র মতে, দেশের সব জেলা, উপজেলা, এমন কি ছোট-খাটো বাজার এলাকাতেও সক্রিয় রয়েছে কিশোর গ্যাং।
কিশোরদের এভাবে অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠার কারণ কী? সামাজিক মূল্যবোধের অবয় যে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজে নানা অসংগতি রয়েছে আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে। নিজেদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে কিশোররা। তাদের আচরণে পরিবর্তন হচ্ছে। আবার কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের ‘গ্যাং কালচার’ গড়ে উঠছে। মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত অনেকেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করেন। আবার যখন তারা দেখে যে অপরাধ যারা করছে তারা সমাজে বেশি লাভবান হচ্ছে, তারা তা অনুসরণ করে। তাদের ওপর পারিবারিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বিশেষজ্ঞরা একই সঙ্গে এটাও বলছেন যে আগের অনুশাসনগুলো সমাজে কাজ করছে না। সমাজের ভেতর পরিবার, প্রতিবেশী, এলাকাভিত্তিক সংস্কৃতিচর্চা, খেলাধুলা, ধর্মীয় শিক্ষা সবই আজ নষ্ট হয়ে ছন্দপতন ঘটছে। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, খেলাধুলা একেবারেই নেই। এসব কারণে কিশোর-তরুণরা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এরা খুন, ধর্ষণের মামলায় আটক হয়ে সেখানেও হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে। সেখানেও তারা সংঘবদ্ধ অপরাপধ ঘটাচ্ছে।
অপরাধ ও সমাজ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবার ও সামাজিক পর্যায়ে সঠিক পরিচর্যা ও পর্যবেণ কিশোর অপরাধ কমাতে অনেক সাহায্য করবে। পরিবার ও সমাজে যদি নিয়মিত পর্যবেণ থাকে, তাহলে কিশোররা অপরাধমূলক ঘটনায় কম জড়াবে। সেই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীকেও কঠোর হতে হবে। আমরা মনে করি, ররিবার থেকে কিশোর সংশোধন শুরু করা উচিত। লেখাপড়া কেউ ছেড়েই দেয় তাহলে তাকে তার পছন্দ অনুযায়ী কাজে লাগাতে হবে। রাজনীতিতে কিশোর নিষিদ্ধ হলে সব থেকে উপকার হবে সমাজের।