শটগান ও গাড়িসহ একজন পুলিশ হেফাজতে : যশোরে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ধান ব্যবসায়ীকে অপহরণের চেষ্টা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গতকাল বুধবার যশোরে প্রকাশ্যে শটগান ও পিস্তল উঁচিয়ে আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীকে ধাওয়া করে অপহরণের চেষ্টা চালায় একটি চক্র। প্রাণ বাঁচাতে ওই ব্যবসায়ী শহরতলীর হাইকোর্ট মোড়ে নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের একটি কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানে গিয়েও তাকে অপহরণের চেষ্টা চালানো হয়েছিলো। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সজল নামে এক ব্যক্তিকে হেফাজতে নিয়েছে। তার কাছ থেকে একটি শটগান ও একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘুরুলিয়া গ্রামের মৃত নুর আলমের ছেলে আলমগীর হোসেন জানান, তিনি ধানের ব্যবসা করেন। হাশিমপুর বাজারে তার আড়ৎ রয়েছে। শহরের রেল রোড আশ্রম মোড় এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে রাজিব ওরফে রাজন তার বন্ধু। এক সময় তারা দুজনে একসাথে ক্রিকেট খেলতেন। ক্রিকেট খেলার সুবাদে তাদের মধ্যে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বন্ধুত্বের কারণে দ্’ুবছর আগে রাজন তার কাছ থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ধার নেন। পরে তাকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন রাজন। কিন্তু বাকি টাকা তাকে ফেরত দেয়া হয়নি। টাকা দাবি করায় ৬ মাস আগে রাজন তাকে ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর তারিখের ওয়ান ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৪০ টাকার একটি চেক প্রদান করেন। কিন্তু তার অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় চেকটি প্রত্যাখ্যাত হয়। বিষয়টি রাজনকে জানিয়ে তার কাছে পাওনা টাকা দাবি করেন তিনি। এরপর গতকাল বুধবার দুপুরে রাজন তাকে পাওনা টাকা দেয়ার জন্য পূর্ব বারান্দীপাড়ায় তার ইজিবাইক চার্জের গোডাউনে যেতে বলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাকে তিনি পাননি। মোবাইল ফোন করলেও রাজন তার সাথে দেখা করেননি। ফলে তিনি এবং তার এক সঙ্গী পরে মোটরসাইকেলে করে দুপুর পৌনে দুটোর দিকে শেখহাটিস্থ হাইকোর্ট মোড়ে যান। সেখানে তার জন্য আগে থেকে অপেক্ষা করছিলেন নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আসমত। মেম্বারের কাছে মোটরসাইকেল ছিলো। তারা এক সাথে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় দুটি মোটরসাইকেল এবং একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকারে করে রাজন, উপশহরের বেড়ে বাবু এবং নড়াইলের সজলসহ ৬-৭ জন সেখানে আসেন। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই সজল পিস্তল এবং বেড়ে বাবু শটগান হাতে তার উদ্দেশ্যে তেড়ে আসেন। অন্যরাও তাদের সাথে আসতে থাকেন। পরিস্থিতি খারাপ আঁচ করতে পেরে তিনি দৌড়ে পাশে নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে একটি কক্ষের ভেতর ঢুকে পড়েন। এ সময় বিপদ বুঝতে পেরে সেখানে উপস্থিত রিপন নামে একজন ইউপি মেম্বার কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। সজল-বেড়ে বাবুরাও অস্ত্র হাতে এসে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য দরজা ধাক্কাধাক্কি করতে থাকেন। কিছু সময় ধাক্কাধাক্কির পর লোকজন জড়ো হয়ে গেলে তারা সেখান থেকে চলে যান। ইউপি মেম্বার আসমত জানান, তার সামনেই আচমকা এ ঘটনা ঘটে যায়। আলমগীর হোসেন নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের কক্ষে আশ্রয় নিলে অস্ত্রধারীরা কিছু সময় ধরে দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন। পরে তারা চলে যান। এ ঘটনার পর পুলিশ সেখানে এসে খোঁজখবর নেন এবং ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনকে সাথে করে থানায় নিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই সময় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন দোকানে চা পান করছিলেন তালবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই আল ইমরান। শটগান দেখে তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন, অস্ত্রধারীরা হয়ত ডিবি পুলিশের লোক। কিন্তু এগিয়ে গিয়ে বুঝতে পারেন, অস্ত্রধারীরা পুলিশ নয়। সাথে সাথে এএসআই আল ইমরান ওয়্যারলেসে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানান। এরপরই কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় আশেপাশের অসংখ্য লোকও সেখানে জড়ো হয়ে যান। পরে পুলিশ সেখান থেকে আলমগীর হোসেনকে সাথে করে নিয়ে যান। কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. তাজুল ইসলাম জানান, ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনকে কয়েকজন অপহরণের চেষ্টা করেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। এ কারণে ঘটনার সাথে জড়িত অভিযোগে তারা শহরের পৌরপার্ক সংলগ্ন এলাকার পার্কভিউ নামে একটি রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে সজল নামে এক ব্যক্তিকে ধরে থানায় নিয়ে এসেছেন। তার কাছ থেকে একটি শটগান ও একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সজল নামে ওই ব্যক্তি এখন তাদের হেফাজতে রয়েছেন। প্রাইভেটকারের ভেতর তার শটগানের একটি লাইসেন্স পাওয়া গেছে। যা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। অপরদিকে অভিযুক্ত রাজন জানান, আলমগীর হোসেন তার বন্ধু একথা সত্য। দু’বছর আগে তিনি তার কাছ থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকার ফিশফিড বাকিতে নিয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনি ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি টাকার জন্য আলমগীর হোসেন তাকে চাপ দেওয়ায় বিষয়টি সমাধানের জন্য সজল নামে তার এক বড়ভাই দায়িত্ব নেন। তিনদিন আগে উপশহরস্থ বাবলাতলায় সজল নামে ওই বড়ভাইয়ের সামনেই আলমগীর হোসেন এবং তার কয়েকজন মাস্তান সঙ্গী সিনক্রেট করেন। তিনি অভিযোগ করেন, গতকাল বুধবার দুপুরে টাকার জন্য আলমগীর হোসেন দলবল নিয়ে পূর্ব বারান্দীপাড়ায় তার শ্বশুর ইউসুফের বাড়িতে যান। তারা এ সময় সেখানে তাকে খোঁজখবর এবং তার স্ত্রীর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। ওই সময় তিনি শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন না। পরে খবর পেয়ে ‘বড় ভাই’ সজলসহ কয়েকজন বিষয়টি সমাধানের জন্য হাইকোর্ট মোড়ে আলমগীর হোসেনের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু এ ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে আলমগীর হোসেন তাদের বিরুদ্ধে এখন মিথ্যা কথা বলছেন।