শিক্ষানবিশ আইনজীবীর মৃত্যু : পুলিশের কাছ থেকে তদন্তভার যে কারণে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ পুলিশি হেফাজতে থাকার সময় মৃত্যুর ঘটনায় সুযোগ রয়েছে আদালতের কাছে অভিযোগ দায়েরের। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যদি পুলিশকেই তদন্ত করতে দেওয়া হয়, তবে ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। সম্প্রতি বরিশালে ডিবি পুলিশের হেফাজতে থাকার সময় শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিম রেজার (৩০) মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তভার দেওয়া হয় পুলিশের আরেকটি বিভাগ পিবিআই’কে। কিন্তু এক্ষেত্রে ন্যায়বিচার ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় মামলা গড়ায় হাইকোর্টে। শুনানি শেষে মামলার তদন্তভার পুলিশের কাছ থেকে এনে দেওয়া হয়েছে বিচারকের হাতে।
অভিযোগ রয়েছে, গত ২৯ ডিসেম্বর রাত ৮টায় রেজাউল করিমকে ধরে তার বাবার সামনে শারীরিকভাবে নির্যাতন শুরু করে সাদা পোশাকে থাকা তিন পুলিশ সদস্য। এরপর তাকে তারা ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান। পরদিন তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। কোর্ট হাজতে থাকাকালীন রেজাউল করিম তার ভাইকে জানান, তাকে সারারাত এসআই মহিউদ্দিনসহ আরও দুই জন ডিবি পুলিশ লাঠি দিয়ে পেটায়। অমানুষিক নির্যাতনে তিনি সেখানেই পায়খানা-প্রশ্রাব করে দেন। সারারাত তাকে কোনও খাবার দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলে যান, ‘বাবা-মাকে দোয়া করতে বলো। আমি বাঁচবো না।’ এমনটাই জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির। শিশির মনির জানান, পরে রেজাউল করিমকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তার বাবা ইউনুস মুন্সিকে জানায়। তখন পরিবারের সদস্যরা গিয়ে দেখেন, আঘাতের কারণে তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে এবং তিনি মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। পরদিন (গত ১ জানুয়ারি) রাত ১২টায় তিনি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে ভিকটিমের বাবা ইউনুস মুন্সি এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দিতে গেলে কর্তৃপক্ষ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে বাধ্য হয়ে রেজাউল করিমের বাবা বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা দায়ের করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আদালত পিবিআইকে মামলার তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু সঠিক তদন্ত হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ করেন ভিকটিমের পরিবার ও আইনজীবীরা। আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেটির বিষয়ে শুনানি নিয়ে মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। কিন্তু হত্যার অভিযোগে যেহেতু পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সেহেতু সেটির তদন্তভার আবার পুলিশের ওপরেই দেওয়া সমীচীন নয়। পুলিশ পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত করলে সঠিক তথ্য উঠে আসা বা ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এই মামলার ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১ এর (ক) ধারার ক্ষমতাবলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে এ আবেদন জানানো হয়।’ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১ এর (ক) ধারায় বলা হয়েছে- ‘এই বিধির অধীন প্রদত্ত কোনও আদেশ কার্যকর করার জন্য বা কোনও আদালতের কার্যক্রমের অপব্যবহার রোধ করার জন্য বা অন্য কোনোভাবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনও আদেশ প্রদানের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের যে সহজাত ক্ষমতা আছে, এই বিধির কোনও কিছু তা সীমাবদ্ধ বা ক্ষুণ্ন বা প্রভাবিত করবে বলে গন্য করা যাবে না।’ অর্থাৎ এই ধারার অধীনে হাইকোর্ট বিভাগকে ন্যায়বিচারের স্বার্থে সহজাত ক্ষমতা প্রয়োগে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এরপর ওই আদেশের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের আশায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের আরজি জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ভুক্তভোগীর বাবা। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলাটির অভিযোগের তদন্তভার পুলিশের পিবিআই শাখার পরিবর্তে বরিশালের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে (চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) অর্পন করেন। আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘আশা করছি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ঘটনার আসল সত্যতা উঠে আসবে।’