সরকারকে দ্রুত পদত্যাগের আহ্বান জানালো বিএনপি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চলতি বছরেই বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। এ সময় তারা সরকার পতনে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহীর নাইস কনভেনশন সেন্টারের সামনে এক সমাবেশে তারা এ দাবি জানান। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বাঙালি হচ্ছে বীরের জাতি। বাঙালি কখনো কারো কাছে মাথা নত করে না। আমরা এই স্বৈরাচার সরকারের কাছেও মাথা নত করবো না। এই অবৈধ সরকারকে হটাতে হলে রাজপথের আন্দোলনের বিকল্প নেই। তাই সকলকে প্রস্তুত হতে হবে। সবাই আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন।’ সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘আমরা এই অবৈধ সরকারকে বলতে চাই, সময় থাকতে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। নয়তো জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে আপনাদের ক্ষমতা থেকে নামাতে বাধ্য হবে।’ তিনি বলেন, ‘আজকে সমাবেশে আসার সময় বেশ কয়েকবার আমার গাড়ি বহরে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ জন্য কি আমরা যুদ্ধ করছিলাম? পুলিশ বাহিনীকে বলতে চাই, আপনারা যা করছেন সেটা আপনাদের নামের সাথে মানায় না। আমি আপনাদের বলি, আপনারা আমাদের ভাই। তাই আপনারা আপনাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করুন।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ বলেন, ‘রাজশাহীর সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার সব বন্ধ করে দেয়াতে মানুষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও যেতে পারছে না। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। আর এই সরকারকে সময় দেয়া যাবে না। আমাদের নেতা তারেক রহমান যেদিন বলবেন সেদিনই সংসদ থেকে পদত্যাগ করে সরকার পতনের জন্য যা যা লাগে তাই নিয়ে যুদ্ধ শুরু করবো।’ এ সময় সরকার পতনের জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
খুলনা সিটি করপোরেশনে বিএনপির সাবেক মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ভোট ডাকাতির চিত্র তুলে ধরতে ছয় সিটিতে সমাবেশের করছে জনতার মেয়ররা। সমাবেশের অনুমতি দিলেও পথে পথে বাথা বাধা দিচ্ছে পুলিশ। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পরিবহন হোটেল-মোটেলও। তিনি বলেন, বিএনপি কারচুপির নির্বাচনে আর যাবে না বলে যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসময় সরকার পতনের জন্য সবাইকে রাজপথে নেমে আন্দোলনে করার প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান তিনি। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা: শাহাদাত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর ১০ হাজার কোটি টাকার বাজেট এখন ৫৪ হাজার কেটি টাকা। এসব দুর্নীতির টাকা যায় বেগম পাড়াতে। মামলা-হামলার জন্য সরকারকে জবাবদিহিতা করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তার না করে পুলিশ দিয়ে নির্বাচন করছে আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার পালানোর জন্য দরজাও খুঁজে পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বীরশ্রেষ্ঠদের নামে আরফাত রহমানের কোকের করা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নামগুলো পরিবর্তন করে ফেলছে এ সরকার।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে গত নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, ডিজিটাল আইন করে লেখক মুশতাককে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। সরকার জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করতে চাচ্ছে দেশের মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর জন্য। তিনি বলেন, এ সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। পাশের দেশের সাপোর্ট নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। গত আড়াই বছরে আড়াই কোটি নতুন ভোটার হয়েছে। কিন্তু তারা ভোট দিতে পারেননি। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আঘাত এলে তার প্রতিরোধক করা হবে রাজপথে। চোখ বুজে সহ্য করা হবে না। এসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অবিলম্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, ওবায়দুর রহমান চন্দন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল প্রমুখ। সমাবেশে অংশ নিতে মঙ্গলবার সকালে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে রাজশাহীতে যান সর্বশেষ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। সমাবেশে যাওয়ার সময় বিভিন্ন স্থানে দুই মেয়র প্রার্থীকে বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।