খুলনায় বিএনপির মহাসমাবেশ : এক সংগ্রাম, এক ডাক আওয়ামী সরকার নিপাত যাক : ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর

0

খুলনা ব্যুরো॥ বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি সরকারের উদ্দেশ্যে স্লোগান দিতে বলেছেন, ‘এক সংগ্রাম, এক ডাক, আওয়ামী সরকার নিপাত যাক।’ তিনি বলেন, এ সরকারের কাছে কোন দাবি করা মানে ভিক্ষা চাওয়া। কিন্তু জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন, বেগম খালেদা জিয়ার দর্শন, আমরা ভিক্ষা চাওয়ার লোক না। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করতে হবে।
তিনি ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী খন্দকার মোশতাকের ভোটের বাকস্ ঢাকা এনে ইঞ্জিনিয়ার রশিদকে পরাজিত করে ওনাকে জয়ী করেছিল। সেই ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি যে বিনাভোটে, বিনাপরিশ্রমে এমপিদের বানিয়েছেন- তারাও যে কবে আপনার সাথে বেঈমানী করবে, সেইদিন বেশি দূরে নয়। এমনকি আওয়ামী লীগ কোনদিন জনগনের ভোটে ক্ষমতায় আসতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন শাহজাহান ওমর।
গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর কে.ডি ঘোষ রোডস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বীরউত্তম খেতাব বাতিলের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশের ছয় সিটিতে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের নেতৃত্বে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি এ মহাসমাবেশের আয়োজন করে।
ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর আরও বলেন, মেজর জিয়ার খেতাব বাতিলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ অচিরেই আন্দোলন গড়ে তুলবে। ব্যাংক লুটকারী ও জাতীয় সম্পদ লুটকারী আওয়ামী লীগের পতনের সময় এসে গেছে। সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নিতাই রায় চোধুরী ও যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এছাড়া সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বরিশাল সিটির মেয়র প্রার্থী অ্যাড. মোঃ মজিবর রহমান সরোয়ার, রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, চট্টগ্রামের ডাঃ শাহাদাত হোসেন, ঢাকা উত্তরের তাবিথ আওয়াল ও ঢাকা দক্ষিণের ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।
সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, খুলনার মহাসমাবেশে কর্মীদের আসতে পুলিশ পথে পথে বাধা দিয়েছে। তারপরও হাজার হাজার জনতা সমাবেশে উপস্থিত হয়ে সরকার পতনের ডাক দিয়েছে। তিনি বলেন, এ বছরই সরকারের শেষ সময়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছেন। ১৬ কোটি মানুষ ভোট দিতে পারছেন না। রাতের অন্ধকারে জনগণের ভোট ছিনিয়ে নিয়ে দলের এমপি বানিয়েছেন। তারাই ব্যাংক লুট করছেন। শেয়ারের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ প্রশাসন দেশকে সর্বনাশের দিকে নিয়েছে। শহীদ জিয়ার খেতাব বাতিলের নিন্দা করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সমাবেশ পন্ড করার জন্য পুলিশ বাড়ি বাড়ি যেয়ে ভয়-ভীতি এবং দু’দিনে ৩১ জন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। তারপরও মহাসমাবেশ সফল করেছে। তিনি এ ঘটনাকে দুঃখজনক বর্ণনা দিয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের খাবার হোটেলে পুলিশ তালা দিয়েছে। খেয়াঘাট-বাস বন্ধ করে দিয়েছে। এটি তাদের প্রতিহিংসার ফল। আগামীতে নির্বাচনকে অর্থবহ করতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের দাবি করেন বিএনপির এ নেতা।
মহাসমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক হুইপ মশিউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব ও বরিশালের মেয়র প্রার্থী মুজিবর রহমান সরোয়ার, যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খুলনা বিভাগীয় বিএনপির
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, রাজশাহীর মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, চট্টগ্রামের মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন, ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়াল, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী রুমি, বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দীন, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবৃদ শামীমুর রহমান শামীম। কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা আব্দুল গফ্ফার।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান, নগর বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, জেলা শাখার শেখ আবু হোসেন বাবু ও নগরের আসাদুজ্জামান মুরাদ।
এদিকে, বিএনপি’র এই সমাবেশ ঘিরে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কার অজুহাতে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬ পর্যন্ত খুলনার ১৮টি রুটে ২৪ ঘন্টা বাস চলাচল বন্ধ রাখে বাস মালিক সমিতি। এমনকি নৌ-রুটেও সকল পরিবহন চলাচল ২৪ ঘন্টার জন্য বন্ধ করেছে মালিকপ। ফলে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে সড়ক ও নৌ পথের গণপরিবহন বন্ধের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
অপরদিকে, জেলার প্রত্যন্ত এলাকা কয়রার মদিনাবাদ ও জোড়শিং এবং সাতীরার নীলডুমুর এ তিনটি রুটে লঞ্চ চলাচল সাময়িক স্থগিত করে কর্তৃপ। এমনকি শনিবার সকাল থেকে পূর্ব-পশ্চিম রূপসা ঘাট এবং জেলখানা ও সেনেরবাজার ঘাটেও ট্রলার পারাপার বন্ধ রেখেছেন ট্রলার মাঝিরা। যাত্রীবাহী পরিবহন বন্ধে অল্প সময়ের এই ঘোষণা পৌঁছায়নি যাত্রী সাধারণের কাছে। যে কারণে হঠাৎ পরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারার অনিশ্চিয়তায় ােভ প্রকাশ করেন। এমনকি সোনাডাঙ্গা ও রূপসা টার্মিনালে এসে বাস না পেয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে অনেক যাত্রীকে।