শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ হচ্ছে বুলিং ও র‌্যাগিং

0

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র‌্যাগিং বন্ধে কার্যকর বিধান যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে ‘শিক্ষা আইন-২০১’ এর চূড়ান্ত খসড়ায়। আইনের আওতায় প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষার সব প্রতিষ্ঠান বুলিং ও র‌্যাগিং বন্ধ করতে পারবে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে নিজেরাই নীতিমালা বা নির্দেশিকা জারি করবে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে কলেজ পর্যন্ত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা অধিদফতর নীতিমালা বা নির্দেশিকা জারি করবে। এছাড়া প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে শিক্ষা আইনের চূড়ান্ত খসড়ায়। মঙ্গলবার (১৬ ফ্রেব্রুয়ারি) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল যুক্ত ছিলেন। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা বৈঠকে যুক্ত হন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র‌্যাগিং বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো, আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ও বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো বুলিং ও র‌্যাগিং বন্ধে নিজেরা ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে তারা বিধিমালা বা নির্দেশিকা জারি করবে। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নীতিমালা বা নির্দেশিকা জারি করে বুলিং ও র‌্যাগিং বন্ধ নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়।’ চূড়ান্ত খসড়ায় নিগ্রহ (বুলিংও র‌্যাগিং) এর সংজ্ঞায় বলা হয়, কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনও শিক্ষার্থীকে উন্মুক্ত শিক্ষাঙ্গনে, ছাত্রবাবাস/ছাত্রীনিবাসের আবাসিক কোনও শিক্ষার্থীকে একই ছাত্রবাবাস/ছাত্রীনিবাসের শিক্ষার্থী শক্তি প্রয়োগ বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে আঘাত করা, মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন করা বা যন্ত্রণা দেওয়া, লাঞ্ছিত করা, অথবা এমন অশোভন বা অশালীন আচরণ করতে বাধ্য করা বা চেষ্টা করা, যা ওই শিক্ষার্থী অপর শিক্ষার্থী কর্তৃক শক্তি প্রয়োগ বা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা না হলে স্বেচ্ছায় করতেন না। বুলিং ও র‌্যাগিং বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আইনের খসড়ায় বলা হয়, শিক্ষার্থীর মাধ্যমে যেকোনও ধরনের নিগ্রহ (বুলিং/র‌্যাগিং) প্রতিরোধে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিগ্রহ (বুলিং/র‌্যাগিং) প্রতিরোধে সরকার সময় সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনুসরণের জন্য নীতিমালা বা নির্দেশিকা করতে পারবে। আগের খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছিল— মাধ্যমিক, স্নাতক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবাসিক ছাত্রাবাস/ছাত্রীনিবাসে অবস্থানকারী কোনও শিক্ষার্থী যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনও শিক্ষার্থীরার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিগ্রহের (বুলিং ও র‌্যাগিং) শিকার না হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চিত করবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান, আবাসিক ছাত্রাবাসের দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষক, প্রাধ্যক্ষ বিষয়টি নিয়মিত পরীবিক্ষণ করবেন। নিগ্রহের কোনও ঘটনা ঘটলে নিগ্রহের শিকার শিক্ষার্থী অচিরেই ঘটনা সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও প্রাধ্যক্ষকে অবহিত করবেন, এর অববহিত পরই সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা প্রাধ্যক্ষ বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রাধ্যক্ষ সমীচিন মনে করলে নিগ্রহ প্রদানকারী শিক্ষার্থীর অভিভাবককে অবহিত করে সহায়তা চাইবেন। নিগ্রহের কোনও ঘটনা ঘটলে নিগ্রহের শিকার শিক্ষার্থী ছাড়াও ঘটনা সম্পর্কে অবহিত যে কেউ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে বা গোপনে অবহিত করতে পারবেন। আগের খসড়ায় শিক্ষার্থী নিগ্রহের বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ ছিল। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শিক্ষা আইনের অধীনে নীতিমালা বা নির্দেশিকায় বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধে বিস্তারিত ব্যবস্থা ও শাস্তির বিষয় নির্ধারিত থাকবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইনের আলোকে নীতিমালা বা নির্দেশিকা প্রস্তুত করে প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারবে। মঙ্গলবারের (১৬ ফেব্রুয়ারি) বৈঠকে খসড়ার বিভিন্ন অংশে পরিমার্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুলিং ও র‌্যাগিং বন্ধে খসড়ায় পরিমার্জন নিয়ে আলোচনা হয়।