ওরাকলের টিকটক অধিগ্রহণ চুক্তি বাতিল হতে পারে

    0

    লোকসমাজ ডেস্ক॥শর্ট ভিডিও তৈরির সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম টিকটক চাপে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম ওরাকলের কাছে বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এ চুক্তি স্থগিত কিংবা পুরোপুরি বাতিল হতে পারে। খবর বিবিসি ও টেকক্রাঞ্চ।
    গত বছরের ৬ আগস্ট তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধে এক নির্বাহী আদেশে সই করেন। ওই আদেশে চীনভিত্তিক বাইটডান্স নিয়ন্ত্রিত টিকটক অ্যাপকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি উল্লেখ করা হয়। অ্যাপটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম স্থানীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির সময় বেঁধে দেয়া হয়।
    ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম কিনতে একগুচ্ছ মার্কিন কোম্পানি রীতিমতো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। শুরুতে বৈশ্বিক সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট অ্যাপটির কার্যক্রম কিনতে আলোচনা শুরু করলেও পরে এ প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার ও ওরাকল করপোরেশন। ওরাকল শুধু টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম নয়; একই সঙ্গে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কার্যক্রমও কেনার প্রস্তাব দেয়। একই সঙ্গে টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম কিনতে অ্যাপটির কয়েকটি মার্কিন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ শুরু করে ওরাকল।
    গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম বিক্রির জন্য ওরাকল করপোরেশন ও ওয়ালমার্টের একটি জোটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় টিকটক। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের নির্দেশ থাকলেও ওই সময় অধিগ্রহণ চুক্তিটির শর্ত চূড়ান্ত ছিল না। তবে টিকটক কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণ চুক্তিটির মূল্য ৬ হাজার কোটি ডলার (৬০ বিলিয়ন ডলার) নির্ধারণের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিল। অধিগ্রহণ চুক্তি স্থগিত কিংবা বাতিলের বিষয়ে টিকটক কিংবা ওরাকল কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়নি।
    ওই সময় চায়না ডেইলিতে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে দাবি করা হয়, টিকটক-ওরাকলের মধ্যে হওয়া ‘অন্যায্য’ চুক্তিতে অনুমোদন দেয়ার কোনো কারণ দেখছে না চীন। এ চুক্তির বলে অপকৌশলে টিকটকের মালিকানায় বসতে চলেছে ওরাকল ও ওয়ালমার্ট জোট।
    সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়, বাইটডান্সের টিকটক খুব অল্প সময়ে ব্যবসায় সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো একটি অ্যাপ। টিকটকের এমন অভূতপূর্ব ব্যবসায় সাফল্য ওয়াশিংটনের অস্বস্তির প্রধান কারণ। যে কারণে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে টিকটক নিষিদ্ধে নির্বাহী আদেশে সই করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং অপকৌশলে অ্যাপটির যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রমের মালিকানা বাগিয়ে নিতে বিক্রির জন্য চাপ দেয়া হয়।
    চীন টিকটক ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে সই করার সময়ই জানায় অপকৌশলে টিকটক ছিনিয়ে নেয়া তারা মেনে নেবে না। টিকটক ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো পদক্ষেপ তারা নাকচ করতে সক্ষম।
    চীনের দাবি, বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পে প্রতিযোগিতা নয়; একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুসরণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত হেনস্তার শিকার হচ্ছে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রগতি থামাতে একের পর এক অন্যায় অভিযোগ করা হচ্ছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেক্কা দিতে সক্ষম সব চীনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন তথ্য নিরাপত্তার অভিযোগ তুলছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসার দিক থেকে দাবিয়ে রাখতে পরিকল্পিত ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে ওয়াশিংটন।
    বেইজিং হুঁশিয়ার করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অজুহাত ও অপকৌশলের জবাব দেয়ার যথেষ্ট সুযোগ ও পন্থা চীনের হাতে রয়েছে। চীন প্রশাসন তাদের পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চালানো শুরু করলে তা মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য খুব একটা ইতিবাচক হবে না।
    ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের চলমান প্রযুক্তি যুদ্ধের সর্বশেষ দৃশ্যমান পদক্ষেপ ছিল টিকটক ও মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিশোধ হিসেবে চীন বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের ভাষায় যেসব বিদেশী প্রতিষ্ঠান চীনের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবে, সেগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এমন পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে।
    প্রযুক্তি বিশ্বে চীনের ক্রমাগত আধিপত্যের লাগাম টেনে ধরতে কার্যক্রম জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রযুক্তি নিয়ে এ যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা ঘনীভূত হতে শুরু করে চীনা জায়ান্ট হুয়াওয়ের ওপর মার্কিন বাজার ও মিত্র দেশগুলোতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে। এর পরই একের পর এক হুয়াওয়েসহ চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর পথে প্রতিবন্ধকতার দেয়াল তুলতে রীতিমতো উঠেপড়ে লাগে ট্রাম্প প্রশাসন।
    ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে এর আগে টিকটকের প্রধান কার্যালয় চীন থেকে সরানোর উদ্যোগ নিয়েছিল বাইটডান্স। চীনের বাইরে প্রধান কার্যালয় নির্মাণে টিকটকের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল লন্ডন। তবে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর বিষয়টি ঝুলে যায়। পাশাপাশি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে এর আগে ওয়াল্ট ডিজনির সাবেক কো-নির্বাহী কেভিন মেয়ারকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ দেয় টিকটক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন। টিকটকের নতুন সিইও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ওঠা চীন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ এড়াতে চীনের বাইরে কার্যালয় নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর কেভিন মেয়ার টিকটকের সিইওর পদ ছাড়েন।