“খেতাব বাতিলের এখতিয়ার জামুকা’র নেই”

0

মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের কোনো এখতিয়ার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) নেই বলে জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপি’র দুই ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শাহজাহান ওমর। বৃহস্পতিবার বিকালে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জামুকা’র এগুলো কাজ না। হু ইজ জামুকা। কে এদের চিনে? কোথায় জিয়াউর রহমান, কোথায় এগুলো। ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, কী কারণে হঠাৎ করে জামুকা একটা প্রস্তাব করলো আমার বোধগম্য নয়। জামুকা কি? মুক্তিযুদ্ধের সময় তিন ধরনের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
একটা হচ্ছে মিলিটারি ফোর্স, আরেকটা হলো ফ্রিডম ফাইটার, তিন নম্বর হলো যুদ্ধের শেষদিকে বিএলএফ নামে একটা সংগঠন গঠন করা হয়েছিল যেটার বাংলা মুজিব বাহিনী। আমরা যারা মিলিটারি ফোর্স আমাদের কন্ট্রোল করে কোর নামে একটা সংস্থা আছে- সেন্টার অফিসার্স রেকর্ড অফিস। আমাদের সঙ্গে জামুকা’র কোনো সম্পর্ক নাই। জামুকা হলো যেমন, ফ্রিডম ফাইটার তৎকালীন ছাত্র-কৃষক-যুব-শ্রমিক যারা যুদ্ধে গেছেন, ট্রেনিং করেছেন, যুদ্ধ করেছেন- তাদের ভাতা, তাদের সম্মানী, তাদের সুযোগ-সুবিধা কীভাবে অধিক থেকে অধিকতর দেয়া যায় দিস ইজ দ্যা জব অব জামুকা। জামুকা’র কোনো এখতিয়ার নেই আমাদের মিলিটারি অফিসার যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের বিষয়ে কিছু বলা, সিদ্ধান্ত নেয়ার। তিনি বলেন, জামুকা তাদের নিজস্ব বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত এবং আমাদের ?মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী যে কথা বলেছে এটাও তার এখতিয়ারবহির্ভূত। এখন প্রশ্ন দাঁড়ালো- বীর উত্তম, বীর শ্রেষ্ঠ, বীর বিক্রম, বীর প্রতীক- মামা বাড়ির আবদার নাকি? না ছেলে বাড়ির মোয়া। যখন চাইবেন মামার বাড়ির হারটা কেড়ে নেবেন। এটা তো আমরা যুদ্ধ করে অর্জন করেছি। জিয়াউর রহমান যুদ্ধ ঘোষণা এবং নিজে যুদ্ধ করেছেন। তিনি এই মেজর হাফিজসহ সিলেট সেক্টর, সিলেট শহর মুক্ত করেছেন। জিয়াউর রহমানের কল পেয়ে যুদ্ধে নেমেছি। জিয়াউর রহমান তার ফ্যামিলি ছেড়ে, বাচ্চা রেখে যুদ্ধে গেছেন। আমরাও আমাদের ফ্যামিলিকে বাঘের মুখে রেখে যুদ্ধ করেছি। ৯ই ডিসেম্বর আমার নেতৃত্বে বরিশাল মুক্ত হয়েছে। আমি তিনবার গুলিবিদ্ধ হয়েছি। আমাকে বীর উত্তম দিয়েছে। কেউ আমাকে এই খেতাব দয়ায় দেয়নি। এই খেতাব কেড়ে নেয়ার আপনারা কে?
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করি, জনগণকে আর হাস্যাস্পদ করবেন না। এই উদ্যোগ যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে আপনি আপনার পিতাকে অসম্মান করছেন। খেতাব কেড়ে নিলেও জিয়াউর রহমান জিয়াউর রহমানই থাকবেন, লক্ষ-কোটি মানুষের কাছে, অনাগত ভবিষ্যতের কাছে তিনি এই দেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রূপেই ইতিহাসে চিহ্নিত থাকবেন এবং জনগণের হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসন তার চির অম্লান থাকবে।
১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে তৎকালীন উপ-সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কখনো সম্পৃক্ত ছিলেন না দাবি করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তো বিচার হয়েছে। কই, কোনো সাক্ষী, কোনো ব্যক্তি কেউ কী বলেছে যে, উনি এই ধরনের হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন বা এটা করেছেন। বর্তমান সরকার দেউলিয়াত্বের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, জাতিকে দেয়ার কিছুই নেই। আন্তর্জাতিকভাবে তাদের কেলেঙ্কারির কথা ফাঁস হচ্ছে। জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে নিবদ্ধ করার জন্য আজকে জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মতো একজন ব্যক্তি সম্পর্কে এই ধরনের অলিক মিথ্যা তথ্য জাতির কাছে হাজির করেছে। এটা দুঃখজনক। জিয়াউর রহমান কোনো ধরনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। হি ওয়াজ এ ন্যাশনাল হিরো। শাহজাহান ওমর বলেন, দুইটা বাঙালি এই ভারত বর্ষে যুদ্ধ করেছে। একজন হলো ভারতবর্ষের নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, আরেকজন হলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কয়েকদিন পরে আরো কিছু বলবে, তিনি নাগরিকও না। তাতেও জিয়াউর রহমানের কিছু আসে যায় না, বীর উত্তম নিলেও তার কিছু আসে যায় না- জিয়া ইজ জিয়া, তিনি বাংলাদেশের একাত্তরের ৭ কোটি মানুষের অন্তরে গাঁথা, তার অবদান হৃদয়ে গাঁথা।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বীর উত্তম জিয়াউর রহমান যে প্রথম সেক্টর কমান্ডার এবং প্রথম ফোর্সেস কামান্ডার ছিলেন- এটা ঐতিহাসিক সত্য। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তার সক্রিয় অংশগ্রহণ, বুদ্ধিদীপ্ত পরামর্শ এবং সাহসী নেতৃত্বের গাঁথা লিপিবদ্ধ আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় নেতাদের প্রকাশিত গ্রন্থ এবং সেই সময়কার পত্রিকায় সাময়িকীতে। দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, সাংবাদিকদের বক্তব্য এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বদলে দেয়ার বৃথা চেষ্টা যারা করেছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। মহান স্বাধীনতার ঘোষক, অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা, সাহসী সেনাপতি এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার বীর উত্তম জিয়াউর রহমানের সাফল্য কারো জন্য মর্মপীড়ার কারণ হতে পারে কিন্তু ইতিহাস বিকৃত করার কিংবা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান কিংবা অসম্মান করার অধিকার কারো নেই এবং এমন অপপ্রয়াস কখনো সফল হবে না। জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এদেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন চিরকাল। জামুকা’র সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের এই সিদ্ধান্ত শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমান ও অবমাননা। এমনকি এই সিদ্ধান্ত তাকে খেতাব প্রদানকারী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বিচার-বুদ্ধির প্রতিও অশ্রদ্ধা প্রকাশ। যেসব কারণে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের খেতাব কেড়ে নেয়ার কথা জামুকা বলেছে, তার কোনোটাই যুক্তি কিংবা বাস্তবসম্মত নয়। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।