বারোবাজারে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ৩০

0

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা ॥ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বারোবাজারে বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন। বুধবার বিকেল ৩টার দিকে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের বারোবাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলেই ৯ জন এবং হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও এক জন মারা যান। নিহতদের মধ্যে নারী এবং শিশুও রয়েছে। আহতদের ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার মাগুরাগামী জিকে পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস (ঢাকা মেট্রো গ-১১০২১৪) যশোর থেকে মাগুরার দিকে যাচ্ছিল। বাসটি বারোবাজার পার হয়ে আমজাদ আলী ফিলিং স্টেশনের সামনে আসলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ওপর উল্টে পড়ে যাত্রীরা হতাহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই সড়কটিতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলের উভয় পাশে শ’ শ’ বাস ট্রাক আটকা পড়ে। খবর পেয়ে স্থানীয় জনতার সাথে কালীগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের সদস্যরা হতাহতদের উদ্ধার করে। কালীগঞ্জ দমকল বাহিনীর স্টেশন অফিসার শেখ মামুনুর রশিদ জানান, আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৯জনের মরদেহ উদ্ধার করি এবং উদ্ধারকৃত রোগীদের মধ্যে একজন যশোর নেয়ার পথে মারা গেছেন। সব মিলিয়ে ১০জন মারা গেছেন। পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাসের মধ্যে থেকে হতাহতদের উদ্ধার করি। আহতদের কালীগঞ্জ ও যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান জানান, আহতদের উদ্ধার করে যশোর ও কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, কালিগঞ্জ সুন্দরপুর গ্রামের ইসহাক আলীর ছেলে মোস্তাাফিজুর রহমান (২৫) ঝিনাইদহের সদর উপজেলার নাথকুন্ডু গ্রামের ওয়াহেদ আলীর ছেলে ইউনুস আলী (২৪) চুয়াডাঙ্গা জেলার ডিঙ্গেদাগ্রামের আব্দুর রশিদীর মেয়ে রেশমা খাতুন (২৫), চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নগদা গ্রামের জিন্নাত বিশ্বাসের ছেলে শুভ (২২), কালীগঞ্জের রণজিৎ দাসের ছেলে সনাতন দাস (২৫), কোটচাঁদপুর উপজেলার হরিণদিয়া গ্রামের নতুন মসজিদ পাড়ার মীর মোহাম্মদের ছেলে সোহাগ হোসেন (২৫), শৈলকুপার আব্দুল আজিজ (৬০) ও মাগুরা ড্রাইভার উজ্জল হোসেন (৩৭)।আহত ৮ জনকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের ভেতর ৬জনই যশোর সরকারি এমএম কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। মাস্টার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে তারা ওই বাসে বাড়ি ফিরছিলেন। আহতরা হচ্ছেন সরকারি এমএম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের খঞ্জের আলীর পুত্র আব্দুর রহিম (২৪), একই উপজেলার ঘুরপাল এলাকার রোস্তম আলীর পুত্র কাবিল হোসেন (৩০), কালীগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ (৩০), রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কালীগঞ্জের চাদড়া একতারপুরের আদিলউদ্দিনের পুত্র শিমুল হোসেন (২৬), আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগের শিক্ষার্থী আড়পাড়া গ্রামের মির্জা শরীফের স্ত্রী শারমিন সুলতানা শান্তা (২৫), বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী একই গ্রামের আতিকুর রহমান বুলবুলের স্ত্রী শাহজাদী খাতুন আলো (২৫), সমাজ কল্যাণ বিভানের শিক্ষার্থী হরিণাকুণ্ডু উপজেলার তাহেরহুদা গ্রামের নায়েব আলী মন্ডলের কন্যা বিউটি খাতুন (২৫) ও কোটচাঁদপুর উপজেলার রামচন্দ্রপুরের আব্দুল হকের পুত্র মাহফুজ (২৫)। এদের ভেতর আব্দুল আজিজ, শিমুল হোসেন ও কাবিল হোসেনের অবস্থার অবনতি হলে তাদের ৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বদরুদ্দোজাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।