খাদ্য বিষক্রিয়ায় বাড়ছে হৃদরোগ

0

সরকারের দাবি, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। মাঠে উৎপাদন বেড়েছে। উৎপাদনে এসেছে আধুনিকতা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে চাষাবাদ লাভজনক হয়ে উঠেছে। কৃষি বাজার ব্যবস্থাপনায়ও এসেছে নতুনত্ব। নতুন নতুন ফসলের প্রতি কৃষকের আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন নতুন ফসল বাজারে আসছে। একই মাঠে একাধিক ফসল উৎপাদনের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। নতুন নতুন গবেষণা থেকে দেশের কৃষি উৎপাদনে রীতিমতো বিপ্লব এসেছে বলা যেতে পারে। এতো সাফল্যের পর জনমনে প্রশ্ন কী খাচ্ছি আমরা? এ প্রশ্নটা এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জাতীয় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সারা দেশ থেকে ৪৩টি ভোগ্য পণ্যের মোট পাঁচ হাজার ৩৯৬টি নমুনা সংগ্রহ করে নিজেদের ল্যাবে পরীা করে। সেখানে ৪৩ ধরনের পণ্যেই ভেজাল পাওয়া যায়। এসব নমুনায় ভেজালের পরিমাণ গড়ে ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে ১৩টি পণ্যে ভেজালের হার প্রায় শতভাগ। এর অর্থ এগুলো খাদ্য সাদৃশ বিষ।
আমরা জানি, অনেক আগে থেকেই খাদ্যে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত সব রাসায়নিক দ্রব্য। এসব খাবার খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, খাদ্যপণ্যে উচ্চমাত্রার ‘ট্রান্সফ্যাট’ ব্যবহার করছে দেশি-বিদেশি কম্পানি। বেকারি, শিঙাড়া-সমুচা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চানাচুর, চিপস, বার্গারের মতো মুখরোচক খাবারে ব্যবহৃত অতিমাত্রার ট্রান্সফ্যাট হৃদরোগজনিত অকালমৃত্যু ডেকে আনছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণায় ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পিএইচও ব্র্যান্ডের ২৪টি নমুনা বিশ্লেষণ করে ৯২ শতাংশ নমুনায় ডাব্লিউএইচও সুপারিশকৃত ২ শতাংশ মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, শুধু ট্রান্সফ্যাট ঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ডাব্লিউএইচও’র ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণে বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে পাঁচ হাজার ৭৭৬ জন মানুষ মারা যায়। দেশে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি এখন বড় চ্যালেঞ্জ। খাদ্য ছাড়া মানুষের পে বাঁচা সম্ভব নয়। আবার বাঁচার জন্য গৃহীত খাদ্য মৃত্যুর কারণ হবে—এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। এখন নিরাপদ খাদ্য নিয়ে ভাবতে হবে। খাদ্যপণ্য যেন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা না দেয় সেদিকে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। খাদ্য, স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে জেলায় জেলায় টিম গঠন করে বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে ভেজালের দাপট কমতে পারে।