উইঘুরে মুসলিম নারীদের গণধর্ষণের তীব্র নিন্দা জানাল যুক্তরাষ্ট্র

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চীনের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের বন্দি শিবিরে নারীদের ওপর পদ্ধতিগত ধর্ষণ ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এই ঘটনায় দোষীদের ‘গুরুতর পরিণতি’ দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ‘সহিংসতায়’ তারা ‘গভীরভাবে বিচলিত’। খবর বিবিসির। উইঘুরের শিবিরে পূর্বে আটককৃত নারী ও এক নিরাপত্তাকর্মীর সাক্ষাৎকার নিয়ে গতকাল এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। সেই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এই নিন্দা জানায়। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা’ বলে আখ্যায়িত করে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রতিবেদনে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের বন্দি শিবিরগুলোতে ব্যাপক ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ও সহিংসতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিরপেক্ষ অনুমান অনুযায়ী, দশ লাখের বেশি মানুষ শিবিরগুলোতে বন্দী রয়েছে। শিবিরগুলো উইঘুর ও অন্য সংখ্যালঘুদের ‘পুন-শিক্ষার’ জন্য রয়েছে উল্লেখ করে এগুলোর অস্তিত্ব স্বীকার করেছে চীন।
কী পাওয়া গেছে বিবিসির তদন্তে?
জিনজিয়াংয় থেকে মুক্তির পর সেখান থেকে পালিয়ে আসা এক নারী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘প্রতি রাতে’ তাদেরকে কারাগার থেকে বের করা হত এবং মাস্ক পরিহিত এক বা একাধিক চীনা ব্যক্তি তাদের ধর্ষন করত। ওই নারী বলেন, তাকে তিনবার নির্যাতন ও গণধর্ষণ করা হয় যেখানে প্রতিবার দুই বা তিনজন ধর্ষণে অংশ নিয়েছিল। জিনজিয়াংয়ের শিবিরে এক কাজাখ নারী ১৮ মাস বন্দি ছিলেন। উইঘুর নারীদের চীনা পুরুষদের সঙ্গে একা রেখে যাওয়ার আগে তাদেরকে নগ্ন করে হাতকড়া পরাতে তাকে বাধ্য করা হয়েছিল। শিবিরের এক নিরাপত্তাকর্মী তার পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নির্যাতনের বিস্তারিত তুলে ধরেন। চীনের জিনজিয়াং নীতির নেতৃত্বস্থানীয় বিশেষজ্ঞ আদ্রিয়ান জেনজ বলেন, বিবিসির প্রতিবেদন নিশ্চিত করেছে ‘আমরা আগে যা শুনেছি, পরিস্থিতি তার অনেক বেশি ভয়াবহ।’
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে চীনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানো হয়েছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জিনজিয়াংয়ের উইঘুর ও অন্যান্য মুসলিম নারীদের প্রতি যে পদ্ধতিগত ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের কথা প্রতিবেদনে ও প্রত্যক্ষ্যদর্শীর জবানবন্দিতে উঠে এসেছে তাতে আমরা গভীরভাবে বিচলিত।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই ভয়াবহতা বিবেককে নাড়া দিয়েছে এবং অবশ্যই এর গুরুতর পরিণতি হওয়া উচিত।’ অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিস পাইন বলেছেন, ‘ওই অঞ্চলে জাতিসংঘকে দ্রুত প্রবেশ করতে দেয়া প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছতা বজায় রাখাকে আমরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি এবং চীনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি যেন তারা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দেয়। এদের মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনা মিশেল ব্যাশেলেটকে যেন জিনজিয়াংয়ে দ্রুত, বাধাহীন ও অর্থবহ অনুসন্ধানের সুযোগ দেয়া হয় সেই দাবি জানাই।’ মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, কঠোর তত্ত্ববধান, আটক, মতবাদে দীক্ষা এবং এমনকি জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণের মাধ্যমে চীন ধীরে ধীরে উইঘুরদের ধর্মীয় ও অন্যান্য স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।