পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন কুমাররা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥মাটির পাত্রের চাহিদা আর আগের মতো নেই। নামেমাত্র কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের চাহিদা আছে। কিন্তু টিকে থাকার মতো বাজারদর নেই। তার ওপর করোনার প্রভাব। মাটিসহ কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা, চড়া দাম অবস্থাকে আরো কঠিন করে তুলেছে। তাই বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে আর সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন পাবনার চাটমোহরের মৃিশল্পের কারিগররা।সংসার চালানোর মতো যথেষ্ট আয়রোজগার না হওয়ায় ‘কুমার’ খ্যাত পেশাটাই ছাড়ছেন তাদের অনেকে। সরেজমিনে কথা বলে এমন চিত্রই দেখা গেল।
মৃত্পণ্যের জায়গাটা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, মেলামাইন ও অ্যালুমিনিয়াম। তাই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটির আজ করুণ দশা। আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ সরকারি সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং চলমান করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব। স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ পেলে এ শিল্পের এখনো টিকে থাকার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন পেশা সংশ্লিষ্টরা।
পেশাটির সঙ্গে জড়িত অমূল্য পাল, নারায়ন পাল, মহিতোষ পালসহ বেশ কয়েকজন বললেন, মৃত্পণ্য তৈরিতে বিশেষত দরকার হয় এঁটেল মাটি, বালি, রঙ, জ্বালানি (কাঠ, শুকনো ঘাস ও খড়)। এখন এসব পণ্যের দাম বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েক গুণ। মাটি সব সময় পাওয়াও যায় না। দূর-দূরান্ত থেকে আনতে খরচ অনেক পড়ে যায়। কিন্তু তৈরি পণ্য বিক্রিকালে যে দাম চাওয়া হয়, সে দামে কিনতে চায় না ক্রেতারা। চাহিদামতো দামে পণ্য কিনতে পারলে লাভ মোটামুটি হয়। কিন্তু বেশি দর-দামে কমতে থাকে লাভের পরিমাণ। লাভের কথা ভেবে খুব বেশি দাম হাঁকা হয় না।
তাদের আক্ষেপ, আর্থিক সংকটে দিন পার করলেও সরকারিভাবে সহযোগিতা তেমনটা পাওয়া যায় না। বছরের বর্ষা মৌসুুমে ঘরে হানা দেয় অভাব। তখন বেচাকেনা কম হয়। তার ওপর এবার করোনার প্রভাবে সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে।
এ শিল্পের অতীতটা বলতে গিয়ে এলাকাবাসী জানিয়েছে, এক সময় তো মাটির তৈরি জিনিসপত্রে বহুমাত্রিক ব্যবহার ছিল। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হতো। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মাটির পণ্যবোঝাই ‘ভার’ নিয়ে গ্রাম ও মহল্লায় গাওয়াল করতেন কুমাররা। ভারে থাকত পাতিল, গামলা, দুধের পাত্র, ভাঁপাপিঠা তৈরির পণ্য সরা, চাড়ি (গরুর খাবার পাত্র), ধান-চাল রাখার ছোট-বড় পাত্র, কড়াই, মাটির ব্যাংক, শিশুদের জন্য রকমারি নকশার পুতুল, খেলনা ও মাটির তৈরি পশুপাখিসহ নানা পণ্য। ধান বা খাদ্যশস্য ও টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন সেসব পণ্য। সন্ধ্যায় ধানবোঝাই ভার নিয়ে ফিরতেন বাড়ি। ওই ধান বিক্রি করে চলত তাদের সংসার খরচ।
অতীতের মতো অবস্থা এখন না থাকলেও এ পেশায় জড়িতদের আশা, হয়তো কোনো একদিন আবারো কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। তখন হয়তো পরিবারে ফিরবে সচ্ছলতা। এখন মানবেতর দিনানিপাত করলেও সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজো সকাল-সন্ধ্যা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।