মোংলা বন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের মামলা নিয়ে দু’গ্রুপে উত্তেজনা

0

মোংলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা ॥ পরস্পর বিরোধী দু’টি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে মোংলা বন্দরের জাহাজের পুরাতন মালামাল ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে পরিবেশ ক্রমশই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এ মামলা দু’টির একটির এক আসামিকে পুলিশ আটক করলেও অপর মামলার কোন আসামিকে পুলিশ এখন পর্যন্ত আটক করেনি। আসামি আটক না করার মামলার আসামিরা মামলা তুলে নেয়াসহ নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দেয়ায় মামলার বাদী ও তার স্বজনরা জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ অবস্থায় সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আহত মিঠু হাওলাদার তার বাড়ি ফিরতে পারছেন না।
অভিযোগ উঠেছে, বন্দরের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজমান শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে জাহাজ কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা একটি আন্ডারগ্রাউন্ড চক্র নিজেদের কতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ চক্রটি নিজেদের স্বার্থে আঘাত আসায় নারীঘটিত ঘটনাকে পুঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে নানা চক্রান্ত চালাচ্ছে। থানায় দায়ের হওয়া মামলা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ জানুয়ারি গভীর রাতে শহরের বাজার মসজিদ রোড এলাকায় মো. আলামিন ফকিরের সাথে নারীঘটিত বিষয় নিয়ে কতিপয় লোকের বাদানুবাদ হয়। এর কিছুক্ষণ পর ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন মোংলা বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী মিঠু হাওলাদার। এ সময় কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই নারীঘটিত ঘটনার জের ধরে আলামিন ফকির, মো. আশিক, মোশারেফ ওরফে মোশা, সেলিম ফকির, মহিদ ও সেলিম গোলদারের নেতৃত্বে একদল লোক ধারালো অস্ত্র নিয়ে মিঠু হাওলাদারের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে খুন করার উদ্দেশ্যে রক্তাক্ত জখম করে টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনা দু’টিতে আলামিন ফকিরের পক্ষ থেকে একটি ও মিঠু হাওলাদারের পক্ষ থেকে মোংলা থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আলামিন ফকিরের মামলায় পুলিশ ফোরকান হাওলাদার নামে এক আসামিকে আটকের পর আদালতে সোপর্দ করলেও মিঠু ফকির আহত হওয়ার ঘটনার মামলায় কোন আসামিকে এখন পর্যন্ত আটক করেনি। এদিকে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, আলামনি ফকির, মো. আশিকসহ মিঠু ফকিরের ওপর হামলাকারী যুবকরা বন্দরের জাহাজের পুরাতন মালামাল ক্রয়-বিক্রয়কারীর ব্যবসার নামে আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যবসার সাথে জড়িত। এ ব্যবসায় কোন বৈধ কাগজপত্র তাদের নেই। পেশীশক্তি ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এরা অবৈধভাবে জাহাজে গিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার করে। গত বছর খানেক আগে এ চক্রের সদস্যরা মোংলা বন্দরের একজন শিপিং ব্যবসায়ীকে শহর এলাকায় প্রকাশ্য অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে জীবননাশের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিল। এ ঘটনায় ওই ব্যবসায়ী থানায় মামলা করলেও শেষ পর্যন্ত এদের সাথে আপোষ মীমাংশা করে নেন। এ ছাড়া এ চক্রের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা ধরনের সন্ত্রাসী ও জাহাজ কেন্দ্রিক চোরাচালানের অভিযোগ।
বন্দরের জাহাজের পুরাতন মালামাল ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আলামিন ফকির ও তাদের সহযোগীরা অন্য ঘটনাকে পুঁজি করে আহতের নাটক সাজিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যবসায়ীদের দমনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ চক্রটি তাদের অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বজায় রাখতে এখন ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজমান শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে নানা নীল নক্সশা তৈরি করছে। অন্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিঠু হাওলাদারদের নামে থানায় মামলা দায়ের এ এ নীল নক্সারই অংশ। এ ব্যাপারে মোংলা থানা পুলিশের ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, দু’টি ঘটনার অভিযোগ ভিত্তিতে থানায় পৃথক মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। একটি মামলার আসামিকে আটক করার পাশাপাশি অপর মামলার আসামিদের আটকেও পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তবে কেউ যাতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতে না পারে সে জন্য পুলিশ সজাগ রয়েছে।