যশোর পৌরনির্বাচনে আ.লীগের প্রার্থী হায়দার গণি খাঁন পলাশ খবরে চমক !

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চমক দিয়েই যশোর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়েছেন হায়দার গনি খাঁন পলাশ। ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করা যশোর শহরের ঘোপ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হায়দার গনি খাঁন পলাশ বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার এ মনোনয়ন পাওয়ার ঘটনা যশোরে বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো ঘটনা হিসেবে দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগেই। গতকাল এ সংবাদ যশোরে পৌঁছানোর পরই শহরময় দলের মধ্যে এবং দলের বাইরেও নানানমুখি আলোচনা-গুঞ্জন সৃষ্টি হয়। অধিকাংশই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। অনেকের প্রশ্ন এত প্রভাবশালীরা থাকতে এটা কীভাবে সম্ভব? হায়দার গনি খাঁন পলাশ যশোর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এমপি কাজী নাবিল আহমেদের অনুগামী হিসেবে পরিচিত।
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোর পৌরসভার নির্বাচন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা যশোর শহরের সুপ্রাচীন এ পৌরসভার নির্বাচনকে ঘিরে অনেক আগে থেকেই মানুষের মাঝে বেশ আলোচনা চলে আসছে। বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচনে কে মেয়র হিসেবে মনোনয়ন পাচ্ছেন বা পাবেন না তা নিয়ে আগ্রহ ছিলো প্রায় সকলের। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটের দাবিদার ছিলেন যশোর আওয়ামী লীগের ৮ নেতা। তারা হলেন, বর্তমান মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরী, জেলা যুব মহিলালীগের সভাপতি মঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবীর কবু, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আসাদুজামান মিঠু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হায়দার গনি খাঁন পলাশ, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি কাজী আব্দুস সবুর হেলাল ও যশোর ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোকসিমুল বারী অপু।
দলের জেলা পর্যায়ের ৮ নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশার দৌঁড়ে থাকলেও যশোরের সর্বত্র আলোচনা ছিলো এবারও বর্তমান মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে যশোরে আসছেন। কেননা জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু দলীয় রাজনীতিতে যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের একজন ঘনিষ্ট অনুগামী। বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক রেন্টু যশোর পৌরসভার একজন প্রভাবশালী মেয়র হিসেবেও সর্বমহলে পরিচিত ছিলো। যে কারণে সবার কাছে অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় রেন্টু চাকলাদারই আবার যশোর পৌরসভার মেয়র হিসেবে মনোনয়ন পাচ্ছেন। তবে বর্তমান মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার যাতে মনোনয়ন না পান সে বিষয়ে যশোর আওয়ামী লীগের অপর পক্ষ যশোর সদর আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ পক্ষের নেতাকর্মীদেরও তৎপরতা ব্যাপক ছিলো। এরই মাঝে শনিবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তে সকল হিসেব-নিকেশ উল্টে যায়। বেলা ১১টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় পঞ্চম ধাপে ৩১টি পৌরসভা, চারটি উপজেলা ও তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। এই তালিকায় যশোর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হায়দার গনি খাঁন পলাশের নাম উঠে আসে। এর কিছুক্ষণ পরেই দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত প্রার্থী তালিকাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। যা নিয়ে যশোরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। হতাশা দেখা দেয় যশোর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী বলয় চাকলাদার শিবিরে। তাদের কাছে বিষয়টি বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো দেখা দেয়।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানাগেছে, হায়দার গনি খাঁন পলাশের মনোনয়নের বিষয়টি দলীয় নেতাকর্মীদের একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিলো। বর্তমান মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুর বাইরে মনোনয়ন দৌঁড়ে আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবীর কবু বা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আসাদুজ্জামান মিঠুর নাম জোরেশোরে শোনা গেলেও হায়দার গনি খাঁন পলাশের নাম তেমন উচ্চারিত ছিলো না। কিন্তু সব হিসেব পাল্টে দিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনিই দলীয় মনোনয়ন লাভ করে যশোরের রাজনৈতিক অঙ্গণে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন। এদিকে বর্তমান মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুর বদলে আওয়ামী লীগ নেতা হায়দার গনি খান পলাশের মনোনয়ন পাওয়ার নেপথ্যে কী কারণ আছে তা নিয়ে যশোরে সব মহলে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বর্তমান মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুর মনোনয়নের বিষয়টি গত এক সপ্তাহ ধরে ঝুলে যায়। বিশেষ করে ৬ টি আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্যে শুধুমাত্র যশোর-৬ ও যশোর-২ আসনের এমপি বাদে সকলেই রেন্টুকে মনোনয়ন না দেওয়ার ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে দাবি করেন। তারা রেন্টুর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও উত্থাপন করেন। এক পর্যায়ে এসব অভিযোগের বিষয় চলে যায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে। এসময় দলীয় প্রধান বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, সাংগঠনিক চ্যানেল ও নিজস্ব সূত্র থেকে যশোর পৌরসভা মেয়রের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করেন। এসব তথ্য রেন্টু চাকলাদারের বিপক্ষে যাওয়ায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বিকল্প প্রার্থী খুঁজতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত পদ পদবী ও বয়সে বড় ও প্রধানমন্ত্রীর পূর্ব পরিচিত হায়দার গনি খাঁন পলাশকে যশোর পৌরসভার মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। এবিষয়ে আওয়ামী মনোনীত প্রার্থী হায়দার গনি খাঁন পলাশের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, যশোর পৌরসভার মতো একটি ঐতিহ্যবাহী পৌরসভার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আমি মাননীয় প্রধামন্ত্রীর কাছে চির কৃতজ্ঞ। তিনি নিজেই আমাকে ডেকে আমার হাতে মনোনয়ন তুলে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন দলের সাথে রয়েছি। জীবনে কখনও দলের নীতি আদর্শের সাথে বেঈমানী করেনি। নেত্রী এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমাকে শেষ বয়সে এসে সম্মানিত করেছেন। ইনশাআল্লাহ নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে পারলে আমি যশোর পৌরসভার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবো।