শাহীন চাকলাদার ও থানার ওসির অডিও ক্লিপ : নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করলেন কেশবপুরের সেই আইনজীবী

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোর-৬ কেশবপুর আসনের সংসদ সদস্য কর্তৃক ‘থানায় বোমা মারার মিথ্যা মামলায় জড়ানোর চক্রান্তের’ খবরে নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন পরিবেশবাদী আইনজীবী শেখ সাইফুল্লাহ। গতকাল শনিবার (৩০ জানুয়ারি) কেশবপুর থানায় তিনি এ সাধারণ ডায়েরি করেন। যার নম্বর-১০৬৪। ডিউটি অফিসার এএসআই মোমিন সাধারণ ডায়েরিটি নথিভুক্ত করেছেন।
সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ সাইফুল্লাহ, পিতা শেখ আব্দুল জলিল কেশবপুর উপজেলার সাতবাড়ীয়া গ্রামের অধিবাসী। ২৯ জানুয়ারি অনলাইন সংবাদপত্রের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার কেশবপুর থানার ওসিকে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার জন্য মোবাইল ফোনে চাপ প্রয়োগ করছেন। সাতবাড়ীয়া গ্রামের লাইসেন্স ও পরিবেশের ছাড়পত্রহীন ‘সুপার ব্রিকস’ নামে একটি ইটভাটার পরিবেশ দূষণের ঘটনায় এলাকাবাসী আন্দোলন করেন। এলাকাবাসী বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানিয়ে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-‘বেলা’তে আইনি সহায়তা চান। এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেেিত বেলা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থমূলক মামলা করেন। হাইকোর্ট শুনানি শেষে ইটভাটাটি অপসারণের নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর ও কেশবপুর থানা যৌথ অভিযান চালিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর ইটভাটাটি অপসারণ করে। তিগ্রস্ত এলাকাবাসীর সাথে শেখ সাইফুল্লাহও বেলাকে তথ্য সহায়তা দেন। যে কারণে সংসদ সদস্য তার ওপর প্তি। সংবাদটি পড়ার পর থেকে শেখ সাইফুল্লাহ জান-মালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যে কারণে নিরাপত্তা চেয়ে তিনি এ সাধারণ ডায়েরি করছেন বলে উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে আইনজীবী শেখ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘সংবাদটি পড়ে আমি আতংকিত হয়ে পড়েছি। সরকার দলীয় একজন সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যে আমি জীবনের নিরপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। যে কারণে বেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে সাধারণ ডায়েরি করেছি।’ কেশবপুর থানার ডিউটি অফিসার এএসআই মোমিন সাধারণ ডায়েরিটি নথিভুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চত করেছেন। সম্প্রতি একটি অডিও কিপ ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে কেশবপুর থানায় বোমা মেরে শেখ সাইফুল্লাহকে ফাঁসাতে ওসিকে পরামর্শ দিতে শোনা যায় যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারকে। এই বিষয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
সম্পূর্ণ ফোনালাপটি তুলে ধরা হলো:
যশোরের এমপি শাহিন চাকলাদারের সঙ্গে কেশবপুর থানার ওসির ফোনালাপ
‘থানায় বোম মারেন একটা, মারায়ে মামলা করতে অইবে’
ওসি: স্লামালাইকুম স্যার।
শাহীন চাকলাদার: ঘুম?
ওসি: না স্যার। ঘুমাইনি স্যার।
শাহীন চাকলাদার: সাতবাড়িয়ার সাইফুল্লাহ কেডা?
ওসি: সাতবাড়িয়া…সাইফুল্লাহ আছে, স্যার ওই বেটার একটা বিষয় নিয়ে সাইফুল্লাহ, বেলায় যে মামলা টামলা করে আরকি, বাজে একটা ছেলে স্যার।
শাহীন চাকলাদার: সাইফুল্লাহ..আপনি এখন রাত্রি থানায় একটা বোম মারেন একটা। মারায়ে ওর নামে মামলা করতে হইবে। পারবেন? (ফাঁকে ওসি স্যার বললেন) আপনি থাকলে এগুলো করতে অইবে। না অইলে কোন জায়গায় করবেন? আমি যা বলছি, এডা লাস্ট কথা ইডাই। যদি পারেন ওই এলাকা ঠান্ডা রাখতি, আমি বন ও পরিবেশ বিষয়ক ইস্থায়ী (স্থায়ী) কমিটির সদস্য। ওখানে কারও বাপের মতা নেই। এ্যাঁ বারবার যেয়ে কেন করে, আপনি কী করেন?
ওসি: ও তো স্যার হাইকোর্টের কাগজ নিয়া আসে বারবার।
শাহীন চাকলাদার: আরেহ..কোথার হাইকোর্ট-ফাইকোর্ট। কোর্টফোর্ট যা বলুক, বলুইগ্যা। অন্য…আমাদের খেলা নাই? খেলা নাই?
ওসি: হাইকোর্টে স্যার…
শাহীন চাকলাদার: ওসি হলি, ওসি কিন্তু ডায়নামিক হইতে অয়। আজকে বাগারপাড়া ওসি আসছিলো আমার কাছে। ওরে আবার চৌগাছায় দিয়ে দিচ্ছি আবার। ও ওসি..চেনেন? বাগাড়পাড়া ওসিকে চেনেন?
ওসি: চিনি না স্যার? মামুন সাহেবরে?
শাহীন চাকলাদার: কথা বইলেন, তার সাথে। তাকে নিয়ে আসতেছি চৌগাছায়। আপনে ওকে যেকোনও ভাবে, যেকোনও লোক দিয়ে, কাইলকে যেকোনও দুর্ঘটনা ঘটায়ে কালকে কাজটা করেন, ওকেহ?
ওসি: স্যার, দেখি স্যার। কি হয়েছে স্যার। ওর কি ডিস্টার্ব করতেছে আবার?
শাহীন চাকলাদার: ও কী ডিস্টার্ব করবে। আচ্ছা, বন ও পরিবেশ অফিসে আমি আছি। কার বাপের মতা আছে এখানে আসবে। আমি বলছি কী, একটা আপনি খেলা খেলে ওকে ভেতরে নিয়ে আসেন। কথা বুঝেন নাই?
ওসি: স্যার, স্যার। দেখবোনে স্যার।
শাহীন চাকলাদার: কেমন অফিসার আপনি আল্লাই জানে। কাজ দিলি কাজ পারেন না।
ওসি: উহমম হাহাহাহা স্যার। সব কাজই তো করি স্যার।
শাহীন চাকলাদার: সব কাজ করেন না? তালিপরে যেকোনও ঢাকায় যেয়ে, দরকার হলি পুলিশের দিয়ে লোক দিয়ে সিভিলে বোম ফাটায় দিয়ে চলে আসুক। বলতে হবি যে, হামলা করেছে ডাকাতি করার জন্য। এটা ছিলো অমুক। একটা বানাই দিলে অয়া গেলো।
ওসি: ও স্যার, ওইযে, ওইযে, বেলার যে কাগজটা আসছে ওডা দেখছেন স্যার, আপনে? হাইকোর্টের কাগজটা।
শাহীন চাকলাদার: বেলাফেলা আমি দেখবোনে, আমি তো স্থায়ী কমিটির সদস্য।
ওসি: হাইকোর্টের কাগজটা স্যার। হাইকোর্ট।
শাহীন চাকলাদার: হাইকোর্টের কাগজে কী বলেছে?
ওসি: রিসেন্টলি, গতকালকে একটা কাগজ আসছে হাইকোর্টের থেকে স্যার।
শাহীন চাকলাদার: কী আছে?
ওসি: আমি দেখাবো নে স্যার কালকে। বা হোয়াটসঅ্যাপে দিয়ে দেবোনে আপনারে স্যার। হাইকোর্ট থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা আসছে ওইযে, সুপার ব্রিকস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিসে স্যার।
ওসি: হাইকোর্টের…
শাহীন চাকলাদার: আমাদের এলাকায় স্কুল কলেজ বাদে আমি আমার এলাকায় কোনও ব্রিকস বন্ধ করবো না। যে যেই দিগ্যা। আমি করবো না।
ওসি: কাগজটা তো দেখবেনই স্যার। কী লিখছে স্যার।
শাহীন চাকলাদার: ঠিক আছে, ওকে।
ওসি: আচ্ছা।