কুয়েতে পাপুলের সাজা দেশের জন্য লজ্জার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের কারাদণ্ড হওয়াকে বাংলাদেশের জন্য ‘দুঃখজনক ও লজ্জাজনক’ আখ্যায়িত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। পাপুলের সাজার দুই দিন পর শনিবার ওই রায় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন উনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন না, উনি স্বতন্ত্র ছিলেন। এটা খুবই দুঃখজনক, অবশ্যই এটা দুঃখজনক, লজ্জাজনক।” অর্থ ও মানবপাচার এবং ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গত বছর গ্রেফতার পাপুলকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে কুয়েতের ফৌজদারি আদালত।
এটা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের কোনো আইনপ্রণেতার শাস্তির প্রথম কোনো ঘটনা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বড় ধরনের তির মুখে পড়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় প্রথম বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমেটিক টেনিস টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তিনি বলেন, রায়ের বিষয়ে কুয়েত সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। “উনার বিচার হয়েছে সেখানে, যেটা আমরা পত্রপত্রিকার মারফতে শুনেছি। ওদেশের সরকার ওনার সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু বলেনি। “প্রথম দিকে জানতে চেয়েছিলাম, তারা তখন রেসপন্ডও করে নাই। আর এখন পেপারে দেখলাম ওনার শাস্তি হয়েছে, উনি জেলে আছেন অনেক দিন ধরে। আমরা সরকারিভাবে জানার জন্য আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বলেছি।” রকারিভাবে জানলে তখন পরবর্তী পদপে নেওয়া হবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বিষয়টা তারা আমাদের সরকারিভাবে জানাক, জানালে পরে আমরা সংসদকে জানাব। তখন বিধি মোতাবেক উনার সম্পর্কে কী করা হবে, দেখব।” ুয়েত সরকারের প থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানার জন্য রাষ্ট্রদূতকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে গত বছর ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে বসবাসের অনুমতি রয়েছে। পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনে কুয়েতি প্রসিকিউশন। ুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশনের তদন্তে পাপুলসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, মানবপাচার, ঘুষ বিনিময় ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে দায়িত্ব পালন করে আসা আবদুল মোমেন বলেন, “স্বদেশের নাগরিক বিদেশে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলে আমাদের লজ্জা লাগে। আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমাদের লোক যখন বিদেশে যদি খুব সম্মান পায়, আমরা সবাই খুব খুশি হই। নিউ ইয়র্কে যখন ট্যাক্সি ড্রাইভার সম্মানিত হয়, কেউ তার গাড়িতে ফেলে গেছে টাকা-পয়সা, সে ফেরত দিয়েছে। তখন মেয়র সাহেব আমাদের বাংলাদেশের নাগরিককে সম্মান দেয়, আমাদের কলিজাটা একেবারে গর্বে ভরে ওঠে। “আমাদের দেশের কেউ যদি বিদেশে ক্রাইম করে, তাহলে আমাদের প্রত্যেকের জন্য এটা একটা লজ্জার বিষয়।” বে পাপুলের সাজার ফলে কুয়েতের সঙ্গে সম্পর্কে ‘ভাটা’ পড়বে না বলে মনে করেন মোমেন। তনি বলেন, “কারণ কুয়েতের সাথে আমাদের বিভিন্নভাবে সম্পর্ক এবং খুব সলিড ও পুরোনো সম্পর্ক। বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে আমাদের একটি ভালো সম্পর্ক। এই একটি ঘটনায় আমাদের সম্পর্কে কোনো ঘাটতি হবে না। “তবে আমাদের দেশের জন্য একটা লজ্জাকর ঘটনা, দুঃখের ব্যাপার।” পাপুলের বিচার চলার মধ্যেই গত সেপ্টেম্বরে কুয়েত সফরের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি এর মধ্যে ঘুরে এসেছি। তারা এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি। কারণ আমাদের দেশের লোক অতো খারাপ না। অধিকাংশ লোক ভালো, একটা-দুটা খারাপ বলেইতো আইনকানুনের দরকার। তারাও সেটা জানে। এটা নিয়ে তারা কোনো কথা বলেনি।” অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পাপুলের মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হয়েছিল। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর মামলার রায় ঘোষণার জন্য তারিখ ঠিক করে দিয়েছিলেন বিচারক। সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরতি আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি। তার মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানি পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেওয়ার কাজ করলেও কুয়েতে অন্যান্য ব্যবসার কাজও বাগিয়েছিলেন পাপুল।