ম্যাজিস্ট্রেট স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার স্বামীর নির্যাতনে নাজিরা ইসলাম রাতুল (৩২) নামে এক গৃহবধূ গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে গতকাল যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে যশোর সদর উপজেলার কুয়াদা বাজারে নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নাজিরা ইসলাম রাতুল কুয়াদার বিএম তারেকুজ্জামান সৈকতের স্ত্রী। তিনি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি থাকার পর গত ১৩ জানুয়ারি তিনি খুলনায় যোগদান করেন।
দু’সন্তানের জননী নাজিরা ইসলাম জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কুয়াদা বাজারে বাড়ির সামনে চা দোকানে তার স্বামী বিএম তারিকুজ্জামান সৈকত কয়েকজনের সাথে গল্প করছিলেন। সেখানে মহিলাও ছিলেন। এ সময় তিনি স্বামীকে খাওয়ার জন্যে ডাকেন। কয়েকবার ডাক দেয়ার পর তারিকুজ্জামান সৈকত ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বাড়িতে এসে নাজিরা ইসলাম রাতুলকে মেহেগনি গাছের ডাল দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করেন। মাথার চুল ধরে টানাটানি করে একটি একটি করে চুল তুলে ফেলেন। সৈকতের মা পলি বেগম ও তার পিতাও তাকে মারধোর করেন। স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি শারীরিক নির্যাতনের পর তার একটি হাত অবশ হয়ে যায়। মাথায়ও প্রচন্ড আঘাত পেয়েছেন তিনি। তারপরও তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাতে থাকেন। সেখানে অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় নাজিরা ইসলামকে তার ভাই যশোর শহরের শংকরপুরের বাসিন্দা মৃদুল ইসলাম গতকাল বেলা ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দেলোয়ার হোসেন ভর্তি করার সময় বলেন, নাজিরা ইসলামকে মারপিট করা হয়েছে। তিনি আহত। স্বামী ও স্ত্রীর গোলযোগের ঘটনা তাকে জানানো হয়েছে। মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক মো. আশরাফ জানিয়েছেন, তার একটি হাত নাড়াতে পারছেন না। মাথাও আঘাত লেগেছে বলে মনে হচ্ছে। এক্স-রেসহ অন্যান্য পরীক্ষা দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলে আঘাতের ধরন সম্পর্কে বলা যাবে।
শহরের শংকরপুর ইসহক সড়কের বাসিন্দা নজরুল ইসলামের কন্যা নাজিরা ইসলামের অভিযোগ, তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে ইতিহাস বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি পাশ করেছেন। বিএম তারিকুজ্জামান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফাইন্যান্স মাস্টার্স ডিগ্রি পাশ করেন। রাজশাহীতে থাকা অবস্থায় তাদের ভেতর প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং নিজেদের ইচ্ছায় অভিভাবকদের অবর্তমানে ২০০৫ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরে ২য় বারের মতো বিয়ে পড়িয়ে অভিভাবকরা তাদের মেনে নেন। এ অবস্থায় বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে তারেকুজ্জামান নির্বাহী ম্যাজস্ট্রিট হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন জয়পুরহাটে। সেখান থেকে নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তারিকুজ্জামান বদলি হন। নওগাঁ সার্কিট হাউজে ইয়াবা ব্যবসায়ী মেয়েদের সাথে ওঠাবসা নিয়ে বিএম তারিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। সিসিটিভিতেও ধরা পড়ে। এছাড়া স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করাসহ নানা বিষয় উল্লেখ করে নাজিরা ইসলাম স্বামীর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। নওগাঁর তৎকালীন জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশিদ ও বিএম তারেকুজ্জামানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দিলে গত বছরের নভেম্বরে তারেকুজ্জামানকে ওএসডি করা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। নাজিরা ইসলাম আরও জানিয়েছেন, পরে তারেকুজ্জামান নানা ছলনা করে তাকে (স্ত্রীকে) দিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করিয়ে নেন। এরপর তাকে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বদলি করা হয়।
এরপর তিনি পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছেন। নাজিরা ইসলাম রাতুল আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তাকে মারার সময় তারেকুজ্জামান স্ত্রীকে হুমকি দিয়ে বলেন, তোকে মার্ডার করবো। এরপর ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সব মিটিয়ে নেব। নাজিরা ইসলাম তার ওপর এ ধরনের নির্যাতনের কাহিনী বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার বিএম তারেকুজ্জামানের সাথে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক লোকসমাজকে বলেন, এটা তাদের পারিবারিক ঘটনা। তার আচরণে কোন পুরুষ মানুষ ঠিক থাকতে পারে না। আপনিও পারবেন না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওএসডির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, স্ত্রী অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে ঠিক না। তদন্ত হয়েছে। তদন্তের পর ঘটনা মিথ্যা হওয়ায় তাকে তিরস্কৃত করে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি তার পদ ও সম্মানের কথা উল্লেখ করে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।