নিজের গাছের খেজুর রস মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে তৃপ্তি পান কাজী ফারুক

0

আকরামুজ্জামান ॥ ভোরের হাড় কাঁপানো শীতকে ভুলে গাছে উঠে খেজুরের রস সংগ্রহ করেন কাজী ফারুক হোসেন। এরপর সেই রসের ভাড় কাঁধে নিয়ে নিজ গ্রামসহ আশপাশের মানুষদের পর্যায়ক্রমে বিলিয়ে দেন। ‘যশোরের যশ খেজুরের রস’। এই ঐতিহ্যকে হৃদয়ে ধারণ করে তিনি এ মহতি কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন। তার এ সামাজিক কর্মকান্ডে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে।
যশোরের বাঘারপাড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম বহরমপুরে তার বাস। প্রতি শীত মৌসুমে ৬০টি খেজুরগাছ নিজ হাতে কাটেন তিনি। দুই ছেলে নাজমুস সাকিব ও মাহবুব হেলাল এবং এক মেয়ে উম্মে হাবিবা তার এই শুভ কাজের সহযোগী। ফারুক হোসেনের ইচ্ছা আগামীতে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন গ্রামে দ ‘গাছি’ তৈরি করা। কাজী ফারুক জানান, তিন বছর ধরে এই কাজ করে তিনি। এর জন্য তিনি কারো কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেন না। এমনকি রস সংগ্রহ করার ভাড়সহ অন্যান্য উপকরণও কেনেন নিজ পকেটের টাকায়। নিরাপদে পান করার উপযোগী রস সংগ্রহ করতে গাছে ভাড়ের ওপর খাঁচা লাগানোর ব্যবস্থাও করেন তিনি। যশোরের সুস্বাদু খেজুরের রস ও গুড় টিকিয়ে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে অভিনব এই উদ্যোগ কাজী ফারুক হোসেনের।
ভোরে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনেই গ্লাস, মগ, কাপ, ছোট ঘটি, বোতল নিয়ে অপেমান একদল শিশু-কিশোর। খেজুরের রস পান করতেই এসেছে সবাই। ফারুক হোসেন খাঁটি খেজুরের রস নিয়ে মাঠ থেকে ফিরবেন সেই অপোতেই তারা। একপর্যায়ে শিশুদের দলবদ্ধ আনন্দ-চিৎকারে বোঝা গেল তিনি আসছেন। হল্লা-চিল্লা করে শিশুরদল তাকে ঘিরে ধরে ঢুকল বাড়িতে। এরপর তিনি ছাকার জন্য রসভর্তি ভাড়ের মুখে পরিষ্কার কাপড় বাঁধলেন। শুরু হলো শিশুদের হুড়াহুড়ি, কে কার আগে রস পান করবে। তা দেখে তিনি বিরক্ত তো হলেনই না, বরং এসব দেখে আনন্দ আর মুগ্ধতার ঝিলিক ফুটল মানুষটির মুখে। কাজী ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমার এই কাজের পেছনে অবশ্যই উদ্দেশ্য আছে। সেটা হলো, বেশ কয়েক বছর ধরে ল্য করছি যশোরের খেজুর রস ও গুড়ের যে ঐতিহ্য তা দিন দিন বিলুপ্তির পথে হাঁটছে। এমনকি গ্রামেও এখন ভালো মানের রস পাওয়াটাও দুর্লভ। এর অন্যতম কয়েকটি কারণ হলো, খেজুর গাছ কমে যাওয়া। আবার যে সংখ্যক খেজুর গাছ আছে তার অধিকাংশই রস সংগ্রহ করতে কাটা হয় না দ গাছির অভাবে। কিন্তু সুস্বাদু রস পান করতে সবাই আগ্রহী।’ এ ব্যাপারে কথা হয় শিশুপুত্র নিয়ে খেজুর রস পান করতে আসা অভিভাবক সাবিনা খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, ‘ফারুক কাকা আমাদের ফ্রি খেজুরের রস খাওয়ান। গ্রামেও এখন খাঁটি রস পাওয়া কঠিন। কিন্তু ফারুক কাকার জন্য আমাদের গ্রামের বাচ্চারা রস খেতে পারে। আমরাও খাঁটি রস খাচ্ছি। আবার এর জন্য তিনি কোনো টাকা-পয়সা নেন না।’ গ্রামের বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, তিনি তিন বছর শীতকালে গ্রামের খেজুরগাছ নিজে কাটেন। এই রস গ্রামের মানুষদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করেন। তিনি টাকার জন্য এই গাছ কাটেন না। তিনি এই অঞ্চলের খেজুরের রস ও গুড়ের পুরনো দিন ফিরিয়ে আনতে, টিকিয়ে রাখতে, মানুষের সেবার জন্য এই খেজুর গাছ কেটে খাঁটি রস মানুষদের খাওয়ান। তিনি গ্রামে ৫ হাজার তালের চারা রোপণ করেছেন। এছাড়াও তিনি এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথেও যুক্ত।