বিকল্প প্রস্তুতি প্রয়োজন পোশাক শিল্পে

0

গত কয়েক মাসে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক খবর মিলেছে পোশাক খাতে। করোনা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি পরিলতি না হলেও জীবন-জীবিকার স্বার্থে বাংলাদেশসহ অনেক দেশই লকডাউন প্রত্যাহারে বাধ্য হয় অথবা সীমিত করে। সে অবস্থায় দেশে দেশে শুরু হয় কর্মচাঞ্চল্য। চলতে শুরু করে অর্থনীতির চাকা। সচল হয় শিল্প-কারখানা। দোকানপাট, হোটেল-রেস্তরাঁও খুলতে শুরু করে। পুরোদমে না হলেও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যেও গতি ফিরে আসে। এহেন পরিস্থিতি ব্যাপক আশার সঞ্চারসহ কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে। করোনা পরিস্থিতির কারণে যেসব বিশ্বখ্যাত নামী-দামী ব্র্যান্ড তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল, স্থগিত অথবা কমিয়ে দিয়েছিল, তারা আবার ফিরে এসেছে। পুরনো কার্যাদেশ দিচ্ছে নতুন করে। দিচ্ছে নতুন কার্যাদেশও। বিজিএমইএর প থেকে বলা হয়েছে, করোনার কারণে স্থগিত রফতানি আদেশের অন্তত ৮০ শতাংশই ফিরে এসেছে। চীন থেকে যেসব ক্রয়াদেশ সরে গেছে করোনার কারণে, তারও একটি বড় অংশ আসছে বাংলাদেশে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, করোনায় ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছিল কমপে ৩১৮ কোটি ডলারের। এখন আবার সেসব অর্ডার আসছে অথবা পথে রয়েছে। তাতে তি পুষিয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে বাংলাদেশের পোশাক খাত। তবে দ্বিতীয় ঢেউ তীব্র ও দীর্ঘায়িত হলে কি হয় তা বলা যায় না।
এদিকে, তীব্র শীতে জবুথবু প্রায় পুরো বিশ্ব। মাত্রাতিরিক্ত তুষারপাত, ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত ইউরোপ-আমেরিকা-কানাডা। এর সঙ্গে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে যুক্ত হয়েছে করোনা ‘মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ’। উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশগুলো রীতিমতো নাজেহাল হচ্ছে করোনা মোকাবেলায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেসব দেশে সীমিত পরিসরে হলেও আরোপিত হয়েছে লকডাউন, নৈশকালীন কারফিউ ইত্যাদি। এর বিরুদ্ধে ােভ-বিােভ হচ্ছে। স্বভাবতই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও গতিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় সেসব দেশে বাংলাদেশের অন্যতম রফতানি শিল্প পোশাক খাতও পড়েছে রীতিমতো সঙ্গীন অবস্থায়। একমাত্র নেদারল্যান্ডস বাদে অন্যসব দেশই তৈরি পোশাকের কার্যাদেশ কমিয়েছে। দামও কম দিচ্ছে। এর সমূহ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে। একটানা ৬৬ দিন লকডাউন, তদুপরি কার্যাদেশ বাতিল এবং দাম কমানোয় নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম পোশাক শিল্প মালিকদের। অবশ্য সরকারী প্রণোদনা ও স্বল্পসুদে ঋণ সহায়তা তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। সরকার দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়েও অগ্রসর হচ্ছে। তবু বাস্তবতা এই যে, ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে নতুন বাজার খুঁজতে হবে পোশাক শিল্প মালিকদের। এেেত্র রাশিয়া, তুরস্ক, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আসিয়ান হতে পারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বিকল্প বাজার। এর জন্য সর্বাত্মক বহুমুখী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এেেত্র সরকারের স্বল্পসুদে ঋণসহ প্রণোদনা তহবিলও যথেষ্ট সহায়তা করেছে। সুতরাং পোশাক শিল্পে আর শ্রমিক ছাঁটাই নয়। বেতন-ভাতা পরিশোধে গড়িমসিও প্রত্যাশিত নয়। সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার, মালিক-শ্রমিক ও ক্রেতাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।