ন্যায় বিচার না পাওয়ার শঙ্কা খুবির তিন শিক্ষকের

0

খুলনা সংবাদদাতা॥ ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সহমত পোষণের অভিযোগে শাস্তির মুখোমুখি হতে যাওয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) তিন শিক্ষক তদন্ত কমিটির কাছে তাদের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেছিলেন। তদন্ত কমিটির সভাপতি নিজ হাতে সেই পত্র গ্রহণ করলেও প্রতিবেদনে লিখেছেন ভিন্ন কথা। ফলে ন্যায় বিচার না পাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওই তিন শিক্ষক। এই তদন্ত কমিটির ওপর অনাস্থা জ্ঞাপনও করেছিলেন তারা। অভিযুক্ত ওই তিন শিক্ষক হলেন- বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজল, বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী। খুবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহমত পোষণের অভিযোগে গত সোমবার (১৮ জানুয়ারি) বিশেষ সিন্ডিকেট মিটিংয়ে ওই তিনজন শিক্ষককে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অভিযুক্ত শিক্ষকরা জানান, তদন্ত কমিটির সভাপতি অভিযুক্ত শিক্ষকদের গত ৩১ ডিসেম্বরে একটি পত্র দেন। সেই চিঠিতে বলা হয়, আগামী ১২ জানুয়ারি বেলা সোয় দুইটায় তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে, অথবা আপনার সুবিধাজনক কোনো স্থানে কমিটির সদস্য/সদস্যবৃন্দের উপস্থিতিতে, অথবা এই সময়ের মধ্যে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে উপরে বর্ণিত আপনার এই কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যসমূহের ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য আপনাকে আহ্বান করা যাচ্ছে। আপনি কোন মাধ্যমে আপনার ব্যাখ্যা প্রদান করতে চান তা নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে ফোনে অথবা ইমেইলে ১০ জানুয়ারি বেলা দুইটার মধ্যে নিশ্চিত করার জন্য বলা হচ্ছে। কমিটির উক্ত নির্দেশ অনুযায়ী অভিযুক্ত তিনজনই ১০ জানুয়ারি সকাল দশটায় মেইলের মাধ্যমে উক্ত কমিটিকে জানান যে, আপনার আদেশকে শিরোধার্য মেনে, আপনার নির্ধারণ করে দেয়া তারিখ ও সময়ের মধ্যেই আমি বিষয়োক্ত পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে আমার প্রদত্ত ব্যাখ্যা লিখিতভাবে প্রদান করতে চাই। এছাড়া, ১০ তারিখ বেলা ১২টার সময় লিখিত পত্রের মাধ্যমেও তারা একই কথা জানান। সেই পত্রটি তদন্ত কমিটির সভাপতি বিএ ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ড. ফিরোজ আহমেদ নিজ হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর ১২ তারিখে নির্ধারিত সময়ে তারা তাদের ব্যাখ্যাও প্রদান করেন। কিন্তু কমিটি তার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, তারা কোন মাধ্যমে তাদের ব্যাখ্যা প্রদান করতে চান, সে সম্পর্কে কমিটিকে কিছু জানাননি। আর এই অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কমিটি বলেছে, ‘তারা কোন মাধ্যমে তাদের জবাব দিতে চায় তা ১০.০১.২০২১ তারিখের মধ্যে না জানানোয় ১২.০১.২০২১ তারিখে তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত পত্রগুলো আমলে নেয়া হয়নি।’
অর্থাৎ, অভিযুক্ত শিক্ষকদের ১২ তারিখের পত্রটি আমলে না নেয়ার অজুহাত হিসেবে উক্ত কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মিথ্যা কথা লিখেছে। যার মাধ্যমে উক্ত কমিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এবং অভিযুক্ত শিক্ষকদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন বলে মনে করছেন ওই তিন শিক্ষক।
শিক্ষকদের ১২ তারিখের ব্যাখ্যাকে আমলে না নেয়ার অজুহাত হিসেবে যে কমিটি এমন একটি মিথ্যা কথা লিখতে পারে, সেই কমিটির প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষকেরা। তারা বলেছেন, ‘এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উক্ত কমিটি যেহেতু অমন একটি গুরুতর মিথ্যাচার করেছেন সেহেতু উক্ত কমিটির প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে আমাদের দোষী সাব্যস্ত করাটা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।’
উল্লেখ্য, ৯ ডিসেম্বর তারিখে এই কমিটির কাছে ন্যায়বিচার ও নিরপেক্ষতা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে এই কমিটির প্রতি অনাস্থা এনেছিলেন অভিযুক্ত শিক্ষকেরা। তদন্ত কমিটি পুনর্গঠনের জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু সেই অনাস্থা জ্ঞাপনের জন্য কর্তৃপক্ষ তাদেরই দ্বিতীয় বার শোকজ করেছিল। অভিযুক্ত শিক্ষকেরা বলেছেন, ‘কমিটির এই ষড়যন্ত্রমূলক ও অনিরপেক্ষ আচরণে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, অনাস্থাজ্ঞাপন পত্রে উল্লিখিত আমাদের সেই আশঙ্কা যথার্থ ছিল। এই কমিটির কাছে আমরা পক্ষপাতদুষ্ট ও ন্যায়বিচার-পরিপন্থী আচরণের শিকার হয়েছি।’ তারা এই বিষয়ে সব সিন্ডিকেট সদস্যের মনোযোগ আকর্ষণ করে, ন্যায়বিচার দাবি করেন।