করোনা ঠেকাতে ভ্রমণ বিধিনিষেধ জারির পক্ষে ইইউ নেতারা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা ইউরোপীয়দের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করেছেন এবং করোনাভাইরাস প্রতিরোধ প্রচেষ্টায় কয়েকদিনের মধ্যে ভ্রমণ বিধিনিষেধ আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। মহামারির দ্বিতীয় ওয়েব মোকাবিলায় ইইউ ব্লকের ২৭টি দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে চার ঘণ্টাব্যাপী সম্মেলনের পর ইইউ প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইন এবং চার্লস মিশেল এই সতর্কতা জারি করেন। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এখবর জানিয়েছে।
ইইউভুক্ত দেশগুলোর উন্মুক্ত সীমানা শুধু মানুষ ও পণ্য নয়, করোনা ভাইরাসের অবাধ সংক্রমণের পথও সুগম করে দিচ্ছে। গত বছর সংক্রমণের ‘প্রথম ঢেউ’ দেখা দেওয়ার পর একাধিক দেশ লকডাউনের পাশাপাশি সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। শীতকালে ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ দেখা দেওয়ার পর অবশ্য ইইউ অভ্যন্তরীণ সীমান্তে তেমন কোনও কড়াকড়ি দেখা যায়নি। কিন্তু পরিস্থিতির অবনতির জের ধরে ইইউ নেতারা নাগরিকদের অবাধ চলাচলের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই সঙ্গে আরও পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের চাপও বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইউরোপের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বেড়ে চলা করোনা সংক্রমণ এবং করোনার নতুন সংস্করণের প্রাদুর্ভাবের কারণে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
তার মতে, ইউরোপের একক বাজারের স্বার্থে অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ করা উচিত হবে না। পণ্য এবং শ্রমিক-কর্মীদের অবাধ চলাচল অত্যন্ত জরুরি। সংক্রমণের ঝুঁকি অনুযায়ী বিভিন্ন অঞ্চলকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রায় গোটা ইউরোপের মানচিত্রই লাল হয়ে উঠেছে। এবার বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিকে গাঢ় লাল হিসেবে তুলে ধরে সেখানে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দিয়েছেন ফন ডেয়ার লাইয়েন। অর্থাৎ অতি জরুরি কারণ ছাড়া সেখান থেকে মানুষ বের হতে পারবেন না। করোনা পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে। ইউরোপীয় সরকার পরিষদের প্রধান শার্ল মিশেলও অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রায় চার ঘণ্টার ভিডিও কনফারেন্সে ইইউ শীর্ষ নেতারা করোনা সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপের বদলে সাধারণ মানদণ্ডের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন। যেমন, করোনা টিকা নিলে মানুষকে সাধারণ সার্টিফিকেট দেবার প্রস্তাব বিবেচনা করছেন তারা। জানুয়ারি মাসেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তবে গ্রিস ও স্পেনের অনুরোধ মেনে এমন সার্টিফিকেট সম্বল করে অবাধ ভ্রমণের প্রস্তাব সম্পর্কে এখনো ঐকমত্য সম্ভব হয়নি। টিকা নিলেও কোনো মানুষ সংক্রমণের উৎস হতে পারে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থাকায় ফ্রান্স এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। বেলজিয়াম পর্যটনের মতো কম প্রয়োজনীয় ভ্রমণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ভিডিও কনফারেন্সের আগে করোনা সংকটের ‘তৃতীয় ঢেউ’ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতি এড়াতে ব্রিটেনে করোনা ভাইরাসের মিউটেশনের ফলে নতুন সংস্করণের জোরালো মোকাবিলা করা প্রয়োজন তুলে ধরেন তিনি। তিনি সীমান্ত বন্ধের সম্ভাবনা এখনো উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে এমন পদক্ষেপ এড়াতে চান ম্যার্কেল।
বৃহস্পতিবারের আলোচনার পর আগামী কয়েক দিনে পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে আরো কড়া পদক্ষেপ নিয়ে ভাবনাচিন্তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। গত বছরের মতো আতঙ্কের জের ধরে জাতীয় স্তরে একক পদক্ষেপ এড়িয়ে চলতে চায় ইইউ। আগামী রবিবার থেকে অতি প্রয়োজনীয় কারণে কেউ ইইউ-তে প্রবেশ করলে ফিরে যাবার আগে কোভিড ১৯ পরীক্ষা করতে হবে।