খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার তিন শিক্ষককে অপসারণ চেষ্টা!

0

খুলনা সংবাদদাতা॥ ক্রমেই জটিল হচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি। দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের পর এবার তিন শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানো, শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে এই তিনজন শিক্ষককে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরা হলেন হলেন বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক আবুল ফজল, একই ডিসিপ্লিনের শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানো তিন শিক্ষককে চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়, গত ১৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক তাদের অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আলাদা আলাদা পত্রে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য, কুৎসা রটানো এবং উস্কানিমূলক তথ্য প্রচার, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে অন্যান্য শিক্ষকদের আহ্বান জানিয়েছিলেন তারা। এমনকি শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো থাকার পরও তারা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছেন।’ নোটিশে আরও বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কেন তাদের অপসারণ করা হবে না তা ২১ জানুয়ারি মধ্যে জানাতে হবে।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক আবুল ফজল বলেন, যেসব সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদেরকে পরীক্ষা করার সুযোগ আমাকে দেওয়া হয়নি। এমনকি তারা যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার কোনও অনুলিপিই আমাকে দেওয়া হয়নি, যা আইনত আমার প্রাপ্য। পরপর দুইটি বিশেষ সিন্ডিকেট সভা বসিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা প্রমাণ করে সম্পূর্ণ বিষয়টিই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী বলেন, নোটিশের জবাব দেওয়ার জন্য আইনত আমার ১০ দিন সময় পাওয়া উচিত ছিল। এতো কম সময়ের মধ্যে এই নোটিশের উত্তর দেওয়া দুরহ কাজ। খুবি ভিসি ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, যেহেতু তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ আছে, তাই এ বিষয়ে আমার চূড়ান্ত মন্তব্য করার সময় এখনও আসেনি। তবে ওই সময় তারা শিক্ষার্থীদের ইন্ধন দিয়ে উত্তপ্ত করে রাস্তায় নামিয়েছেন, পেছনে থেকে সহযোগিতা করেছেন। সার্বিক বিষয়ে যদি তারা অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চান তবে হয়তো পরবর্তী সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। এর আগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দুইজন শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচারণ ও তদন্তে অসহযোগিতার দায়ে বাংলা বিভাগের মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান (১৮ ব্যাচ) এবং ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের ইমামুল ইসলামকে (১৭ ব্যাচ) বহিষ্কার করা হয়। এদিকে, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের পর আমরণ অনশন অব্যাহত রেখেছেন খুবি’র এই দুই শিক্ষার্থী। আর তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও তিন শিক্ষককে অপসারণ প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে খুলনার সচেতন নাগরিক ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর ব্যানারে ২১ জানুয়ারি বেলা ১১টায় মহানগরীর শিববাড়ি মোড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে খুবির প্রকৃত ঘটনা না জেনে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য বা বিবৃতি প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষকের সঙ্গে দুইজন শিক্ষার্থীর অসদাচারণের অভিযোগ তদন্ত শেষে সম্প্রতি শৃঙ্খলা বোর্ড বিভিন্ন মেয়াদে তাদের শাস্তি প্রদান করে। এই শাস্তি প্রত্যাহারে ঐ দুই শিক্ষার্থী অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। শাস্তি প্রত্যাহারে বা শাস্তি কমানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মাতান্ত্রিক পথ রয়েছে। কিন্তু তারা এ পথ অনুসরণ করে আবেদন করছে না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক কয়েক দফা ঐ শিক্ষার্থীদ্বয়ের কাছে গিয়ে পরামর্শ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদেরকে সঠিক পথ অবলম্বনের পরামর্শ দিলেও তারা তা গ্রহণ করেনি। অপরদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাত্র রাজনীতিমুক্ত। কিন্তু সে বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে এবং প্রকৃত ঘটনা না জেনে কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যান্যারে বিবৃতি প্রদান করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতোপূর্বে ঐ দুই শিক্ষার্থীকে শাস্তি প্রদানের কারণ উল্লেখ করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনও ঘটনার প্রকৃত তথ্য বা কারণ না জেনে বিবৃতি প্রদানের ফলে যেমন একপেশে তথ্য পাওয়া যায়, তেমনি তাতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অবকাশ থাকে। এমতাবস্থায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উক্ত শিক্ষার্থীদ্বয়ের ঘটনাসহ সাম্প্রতিক বিষয়ে প্রকৃত তথ্য জ্ঞাত হয়েই বিবৃতি বা মন্তব্য প্রদান সমীচীন বলে কর্তৃপক্ষ মনে করে।