মনিরামপুর লাউড়ী-রামনগর কামিল মাদ্রাসা অধ্যক্ষের কাছে হিসাব চাইলেন সভাপতি, ১০ জনের পদত্যাগ

0

স্টাফ রিপোর্টার, মনিরামপুর (যশোর) ॥ যশোরের মনিরামপুরে লাউড়ী-রামনগর কামিল (এমএ) মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়া এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভা করার নির্দেশনা দেওয়ার প্রতিবাদে গভর্নিং বডির ১০ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। অধ্যক্ষের দাবি, মাদ্রাসার পরিবর্তে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভা করতে চাওয়ায় সদস্যরা পদত্যাগ করেন। তবে পদত্যাগকারী সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন মতামত পাওয়া গেছে। পদত্যাগের বিষয়টি জানেন না গভর্নিং বডির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা-আইসিটি) শাম্মী ইসলাম। এদিকে পদত্যাগের বিষয়টি জানাজানি হলে অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাউড়ী-রামনগর কামিল (এমএ) মাদ্রাসাটি। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন গতবছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকার গতবছরের জুন মাস থেকে দেশের সব ফাজিল এবং কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতির পদ থেকে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীদের বাদ দিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়। সে মোতাবেক লাউড়ী-রামনগর কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কে এম মুফিজুর রহমান যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা-আইসিটি)কে গভর্নিং বডির সভাপতিসহ অন্য সদস্যদের নাম দিয়ে মোট ১৫ সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ নিয়মিত কমিটি অনুমোদনের জন্য ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। ফলে আরবী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই কমিটি অনুমোদন করেন গত আগস্ট মাসে। নিয়ম রয়েছে, অনুমোদনের পর সদস্য সচিব মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কমিটির সভাপতির অনুমতিক্রমে প্রথম সভা আহবান করবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোন সভা আহবান করা হয়নি। তবে মাদ্রাসার প্রধান অফিস সহকারি জমিরুল ইসলাম জানান, কমিটি অনুমোদনের পর থেকে এ পর্যন্ত পর পর চারমাসের এমপিও (বেতন) শিটে তিনি সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা-আইসিটি) শাম্মী ইসলামের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেন। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ কেএম মুফিজুর রহমান কমিটির সভা আহবানে অনুমতির জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের সাথে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। অধ্যক্ষ জানান, এ সময় সভাপতি মাদ্রাসার পরিবর্তে ২৩ ডিসেম্বর তার কার্যালয়ে (যশোর ডিসি অফিসে) সভা আহবান করতে বলেন। এছাড়াও ওই সভায় অধ্যক্ষকে বিগত বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব উত্থাপন করতেও নির্দেশনা দেন। তবে বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি অধ্যক্ষ এবং কমিটির কতিপয় সদস্য। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে স্থানীয় কোন ব্যক্তিকে নতুন করে সভাপতি করার। ফলে একে একে কমিটির ১০ জন সদস্য সভাপতি এবং সদস্য সচিব বরাবর পদত্যাগ করেন। তবে পদত্যাগকারীদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। অভিভাবক সদস্য মঈন খান জানান, মাদ্রাসার পরিবর্তে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে সভায় অংশ নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তিনি পদত্যাগ করেছেন। অপর সদস্য এসএম আনিছুর রহমান লিটন জানান, ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকায় তার পক্ষে মাদ্রাসার কর্মকান্ডে সময় দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তিনি পদত্যাগ করেছেন। বিদ্যুৎসাহী সদস্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহমেদ শফি জানান, ব্যক্তিগতভাবে তিনি কমিটিতে থাকা স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন না। তাই তিনি পদত্যাগ করেছেন। সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য আহাদুল করিম জানান, ইতিপূর্বে এ মাদ্রাসার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। তখন অধিকাংশ সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার প্রশ্ন, তবে এখন কেন সেখানে সভা করা যাবে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক সদস্য জানান, অধ্যক্ষ নিজেকে রক্ষা করতে সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে পদত্যাগ করিয়েছেন। অপরদিকে কমিটির সহসভাপতি (দাতা) হাজী জবেদ আলী সরদার ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মূলত মাদ্রাসার আয় ব্যয়ের প্রায় কোটি টাকার হিসাব চাওয়ায় অধ্যক্ষ নাখোশ হয়ে কমিটি বাতিল করে এডহক কমিটি গঠনের ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। তবে অধ্যক্ষ কেএম মুফিজুর রহমান এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আয় ব্যয়ের সকল হিসাব তার কাছে আছে। শুধুমাত্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভায় অংশ না নেওয়ার জন্য সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১০ সদস্যের পদত্যাগপত্র তিনি ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা-আইসিটি) শাম্মী ইসলাম জানান, সদস্যদের পদত্যাগের বিষয়টি এখনও তাকে কেউ অবহিত করেননি। তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে জানান, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে মাদ্রাসার পরিবর্তে তার কার্যালয়ে সভা আহবান এবং আয় ব্যয়ের হিসাব দাখিলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।