ছাত্র আন্দোলনে সহমত পোষণে অপসারণ হচ্ছেন খুবির ৩ শিক্ষক

0

খুলনা সংবাদদাতা॥ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহমত পোষণকারী তিনজন শিক্ষককে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটি। গত সোমবার (১৮ জানুয়ারি) বিশেষ সিন্ডিকেট কমিটির মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই তিন শিক্ষক হলেন, বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক আবুল ফজল, বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এরমধ্যে ছিল বেতন কমানো, আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করা, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অবকাঠামো নির্মাণ ও ছাত্রবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ওই আন্দোলনের সময়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছিলেন কয়েকজন শিক্ষক। এর মধ্যে এই তিনজন শিক্ষকে গত বছরের ১৩ অক্টোবর কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নোটিশে বলা হয়েছিল, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা রকমের মিথ্যা তথ্য প্রদান, কুৎসা রটানো ও উসকানিমূলক তথ্য প্রচার করেছিলেন তারা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহমত পোষণ করার জন্য অন্যান্য শিক্ষকদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো থাকা সত্ত্বেও তারা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে ওই শিক্ষকরা কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দেন।
এ বছরের ১৮ জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের মিটিংয়ে বলা হয়, ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক তাদেরকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে ওই শিক্ষকদের জানিয়ে নোটিশে পাঠানো হয়েছে। নোটিশে আরও বলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় কেন অপসারণ করা হবে না তা আগামী ২১ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে, ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী বলেন, মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টায় আমাকে মেইলের মাধ্যমে নোটিশ করা হয়েছে। এদিন বেলা ১১টার দিকে বাসায় চিঠি এসেছে। সেখানে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অপসারণের কথা জানানো হয়েছে এবং ২১ জানুয়ারির মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। নোটিশের জবাব দেয়ার জন্য আমাদের কমপক্ষে ১০ দিন সময় দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। খুবির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সময় তারা যা করেছিল তা উল্লেখ করেই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। তাদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তারা তদন্ত কমিটিকে বক্তব্য দিতে হাজির হননি। সিন্ডিকেটের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনেই যথাযথ প্রক্রিয়ায় ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি দুই শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, তদন্ত ও একাডেমিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তারা হলেন, বাংলা ডিসিপ্লিনের মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান (১৮ ব্যাচ) এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের ইমামুল ইসলাম (১৭ ব্যাচ)। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে গত ১৫ জানুয়ারি প্রেস কনফারেন্স করে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু প্রশাসন এই সময়ের মধ্যে তাদের শাস্তি প্রত্যাহার করেনি। পরে ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকে খুবির প্রশাসনিক ভবনের সামনে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন তারা।