বৃটেন ফেরত দুই যাত্রীর শরীরে করোনা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বৃটেন ফেরত দু’জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি মিলেছে। করোনার নতুন স্ট্রেইনের আতঙ্কের মধ্যেই বাংলাদেশে বৃটেন ফেরত এই দু’জনের দেহে করোনা শনাক্ত হলো। এর মধ্যে ৬৩ বছর বয়সী একজন নারী এবং ৪৭ বছর বয়সী একজন পুরুষ রয়েছেন
। উভয়ের করোনা পজেটিভ চিহ্নিত হয় গত ১৬ই জানুয়ারি। তারা দু’জনে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। বর্তমানে তারা করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত উত্তরায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, করোনা আক্রান্ত দুই যাত্রী ৩রা জানুয়ারি ঢাকায় আসেন। ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক হওয়ায় তারা একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন।
কোয়ারেন্টিন সময় শেষ হওয়ায় তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হলে গত শনিবার করোনা পজেটিভ আসে। এরপর তাদের করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই দুই যাত্রীর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এটি বৃটেনে চিহ্নিত করোনার নতুন স্ট্রেইন (প্রজাতি) কিনা? এ বিষয়ে এখনো পরিষ্কার কিছু জানাতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বৃটেনে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস ধরা পড়ায় বৃটেন ফেরত যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও গত সপ্তাহ থেকে তা কমিয়ে ৪ দিন কার্যকর হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, বৃটেন ফেরত দু’জনের শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। নতুন স্ট্রেইন কিনা ওভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। আরো পরীক্ষার পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য, দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, এদের আলাদা রাখতে হবে। কেয়ারফুল থাকতে হবে। নতুন স্ট্রেইনের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। তিনি আরো জানান, পরামর্শক কমিটি বৃটেনফেরতদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের কথা বলছে। আর এই কোয়ারেন্টিন হতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক। হোম কোয়ারেন্টিন নয়। কিন্তু সরকার সেটি করেনি। সরকার বৃটেনফেরত যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের বাধ্যবাধকতা জারি করলেও গত সপ্তাহ থেকে তা কমিয়ে ৪ দিন কার্যকর করা হয়। এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এটা সঠিক হয়নি। যদি নতুন স্ট্রেইন ঢুকে যায় তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হবে।
জানা গেছে, বৃটেনে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস ধরা পড়ে ডিসেম্বরের শেষদিকে। নতুন স্ট্রেইনটি আগের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়ায়। দেশটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। লন্ডনের নতুন যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ৬০ শতাংশই নতুন ভাইরাসের কবলে পড়েছেন। দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা এমনিতেই মারাত্মক। ফলে করোনা হলে তাতে জীবনের ঝুঁঁকি থাকে। সে জন্যই দ্রুত করোনা ছড়ালে তা আরো মারাত্মক হয়ে উঠতে বাধ্য। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী লেন, ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন একটি আদর্শ সময়। এরপর করোনা শনাক্ত হলে সেটা বেশি সংক্রমণ করতে পারবে না। আর যারা বৃটেন থেকে আসছেন তাদেরকে বিমানে ওঠার ৪ দিন আগে নেগেটিভ সনদ এবং ৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখার পর পরীক্ষা করলে যদি নেগেটিভ হয় সেটাও আইডিয়াল হিসেবে নেয়া যায়। তিনি বলেন, নতুন এই স্ট্রেইন অধিক সংক্রামক, কন্টাজিয়াস অর্থাৎ ছড়ায় বেশি, কিন্তু অতিরিক্ত ডেডলি না। অ্যাভেইলেবল ভ্যাকসিনগুলো তার বিরুদ্ধে কাজ করবে। কারণ, এখন এমনো মিউটেশন হয়নি যে, ভ্যাকসিনকে প্রভাবিত করতে পারে। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি খুব দ্রুত ছড়ালেও এখনো পর্যন্ত এতে মৃত্যুহার বেশি এটা প্রমাণিত নয়। গত ১৪ই জানুয়ারি চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সমীর সাহা অনলাইনে এক মতবিনিময় সভায় জানিয়েছেন, বৃটেনে করোনার যে নতুন স্ট্রেইন (প্রজাতি) পাওয়া গেছে তা এখনো বাংলাদেশে আসেনি। তবে যেকোনো সময় আসতে পারে। সংস্থাটি বর্তমানে দেশে করোনার জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করছে।