দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন সহিংসতা ও জবরদস্তির অভিযোগ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিএনপির বর্জন ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীদের ভোট কেন্দ্র ও ভোটারদের উপর জবরদস্তির অভিযোগের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলে। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েক জায়গায় সহিংসতা, অধিকাংশ স্থানে ভোটার ও এজেন্টদের বের করে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে নির্বাচন শেষ হয়। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার একজন প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় ভোট স্থগিত করা হয়। আর ৬০টি পৌরসভার ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হয়। নারায়ণগঞ্জের তারাব, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙুরা ও পিরোজপুরে মোট চারটি পৌরসভায় ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। তাই বাকি ৫২টিতে মেয়র পদে ভোট হয়।
গত ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ২৯টি পৌরসভায় ইভিএমে এবং বাকি ৩১টি পৌরসভায় কাগজের ব্যালটে ভোট হয়। এই ধাপের নির্বাচনে মেয়র পদে ২১১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ২৩২ জন এবং সংরতি কাউন্সিলর পদে ৭২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ছাড়া বাকি ৫৪টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা মেয়র পদে দাঁড়ান। তবে ভোট শুরুর পর বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কিছু পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে বাগেরহাটের মোংলায় মেয়রসহ ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীসহ মোট ১৫ জন, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এছাড়া মাগুরা ও পাবনায় বিএনপির প্রার্থীরা ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেওয়া, মারধর ও ভোটে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন। এছাড়া ঝিনাইদহের শৈলকুপা, ফেনী ও কুমিল্লায় সহিংসতার খবর পাওয়া যায়।
স্টাফ রিপোর্টার ঝিনাইদহ জানান, শৈলকুপা পৌর নির্বাচনে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও স্বতন্ত্র (আ’লীগের বিদ্রোহী) প্রার্থীর গাড়ি ভাংচুরের মধ্য দিয়ে শনিবার নির্বাচন শেষ হয়েছে। তবে বড় ধরণের কোন অপ্রীকর ঘটনা ঘটেনি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে নারী ভোটাররা দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ভোট দেবার জন্য অপেক্ষা করেন। দুপুর পর পুরুষ ভোটাররা ব্যাপক হারে ভোট দিতে দেখা যায়। দুপুর ১২টার মধ্যে ৬৩% ভোট পোল হওয়ার কথা জানান কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসররা। সকালে শৈলকুপা পৌর এলাকার শাহী মসজিদ এলাকার ভোট কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ঢুকতে বাধা দেয়। খবর পেয়ে প্রশাসনের লোকজন পরিবেশ ফিরিয়ে আনে। সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে পৌরসভার খুলনা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে। নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আযম ও স্বতন্ত্র জগ মার্কা প্রতীকের প্রার্থী তৈয়ব খার সমর্থকদের মাঝে প্রথমে উত্তেজনা ও পরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ ঘটনায় আহত হয় দুই জন। আহতদের উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। দুপুর ১২ টার দিকে ঝাউদিয়া ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তৈয়বুর রহমানের গাড়ি ভাংচুর করে প্রতিপ। তবে এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈয়বুর রহমান খান অভিযোগ করেন, বেলা ১২ টার দিকে ঝাউদিয়া ভোট কেন্দ্রে গেলে নেকৈা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে পালিয়ে যায়। শৈলকুপা উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার জুয়েল আহমেদ জানান, নির্বাচনে ১টি চেয়ারম্যান পদের বিপরীতে ৪জন, ৯জন সাধারণ কাউন্সিলর পদের বিপরীতে ৩৬ জন, ও ৩ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদের বিপরীতে ১২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শৈলকুপা পৌরসভায় মোট ভোটার ছিল ২৮ হাজার ৬৩২। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ১১৩ ও মহিলা ভোটার ১৪ হাজার ৫১৯ জন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিভিন্ন কেন্দ্রে ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, শহরে দুই প্লাটুন বিজিবি, ৪শ’ পুলিশ সদস্য এবং ১৩৫ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করার কারণে বড় ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপুর্ন হওয়ায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।
এছাড়া,ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর দুইটা। বাইরে নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ভোট কে চলছে ভোটগ্রহণ। কেন্দ্রের কে গিয়ে চোখে পড়ল, এক এজেন্ট গোপন কে ভোটারের সঙ্গে অবস্থান করছেন। ঘটনাটি ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভার ছয় নম্বর কেন্দ্র শৈলকূপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের। প্রায় ২০ মিনিট ওই কে নজর রাখেন গনমাধ্যমকর্মীরা। ওই এজেন্ট নিজের নাম বলেন পুতুল খাতুন। তিনি নিজেকে নৌকার এজেন্ট বলে পরিচয় দেন। দেখা গেছে, তিনি এজেন্টদের নির্দিষ্ট স্থান থেকে উঠে করে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন। কখনো কখনো গোপন কওে প্রবেশ করছেন। এ বিষয়ে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মাসুদ আহমদ সাংবাদিকদের জানান, ‘ভোটকে কোনো প্রার্থীর এজেন্ট স্থান ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারেন না। আপনারা (সাংবাদিক) বললেন, আমি বিষয়টি দেখছি।’ ফেনীর দাগনভূঞা পৌরসভা নির্বাচনে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণে তিন জন আহত হন বলে অভিযোগ ওঠে। এদের মধ্যে একজন পুলিশের, একজন আনসার সদস্য ও একজন স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থক। এছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এদিকে কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার নির্বাচনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে চার জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার ভোট শুরুর পর সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হারং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের পাশে এ সংঘর্ষ হয়। নির্বাচনে বড় দুই দল ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি’র প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন। টাঙ্গাইললের ধনবাড়ি, নাটোরের গোপালগঞ্জ, বাগেরহাটের মোংলা, খাগড়াছড়ি, পাবনার বেশ কয়েক জায়গায় আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ভোটারদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে বের করে দেওয়া, ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে নৌকায় সিল মারা, বিএনপির এজেন্টদের মারধর ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে। এদিকে শীতের মধ্যেও বেশির ভাগ এলাকায় ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচনের