সুপার কম্পিউটারে চাঁদের জন্মরহস্য উদঘাটন

    0

    লোকসমাজ ডেস্ক॥কোটি কোটি বছর আগে চাঁদের গঠন কিভাবে হয়েছিল তা রহস্যঘেরা। তবে এবার এ রহস্যের সমাধানে এগিয়ে এসেছে প্রযুক্তি। চাঁদের জন্মরহস্য উদ্ঘাটন করেছে সুপার কম্পিউটার। যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সুপার কম্পিউটারে একাধিক সম্ভাবনার সিমুলেশন প্রস্তুত করে দেখিয়েছেন কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ।
    চাঁদের গঠন নিয়ে প্রচলিত ‘বিগ স্প্ল্যাশ’ বা ‘জায়ান্ট-ইমপ্যাক্ট হাইপোথিসিস’ তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই সিমুলেশনটি প্রস্তুত করেছে সুপার কম্পিউটার। তত্ত্বটি হলো, আজ থেকে প্রায় সাড়ে চারশো কোটি বছর আগে থিয়া নামের একটি গ্রহের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পৃথিবীর। তাত্ত্বিকভাবে ধরে নেওয়া হতো তার আয়তন ছিল মঙ্গল গ্রহের থেকে খানিকটা ছোট। থিয়ার গতিবেগ এবং ঘূর্ণনের কারণেই পৃথিবী থেকে একটি অংশ ছিটকে বেরিয়ে আসে বাইরে। তারপর পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের প্রভাবে তা প্রদক্ষিণ করতে থাকে পৃথিবীকে। সৌরজগৎ সৃষ্টি হওয়ার ১৫০ মিলিয়ন বছর পর এভাবেই জন্ম হয়েছিল চাঁদের।
    ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রচলিত এই তত্ত্ব নিয়ে কাজ করলেও, তার বেশ কিছু অংশে পরিবর্তন আনেন। শূন্য ঘূর্ণন হার থেকে অত্যন্ত দ্রুত ঘূর্ণাবর্তের সম্ভাব্য শর্তকে সিমুলেশনে উপস্থাপিত করেন। আর তাতেই স্পষ্ট হয় আসল দৃশ্য। সুপার কম্পিউটারের ফল বলছে, থিয়া যদি সামান্যতমও ঘূর্ণায়মান হতো, তাহলে একটি নয় পৃথিবীর আকাশে আজ দেখা যেত দু’-দুটি চাঁদ।
    তবে জন্মলগ্নে চাঁদের ভর ছিল বর্তমান ভরের ৮০ শতাংশ। ক্রমে বিভিন্ন উল্কা এবং ধূমকেতুর সঙ্গে সংঘর্ষ হতে হতে ভর বাড়ে চাঁদের। পাশাপাশি পৃথিবী আর চাঁদের দূরত্ব আরও কম ছিল বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা। ধীরে ধীরে ভর বাড়ার কারণে মহাকর্ষ বলের প্রভাবে দূরে সরে যায় পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ।
    শুধু চাঁদের সৃষ্টিই নয়, সুপার কম্পিউটার সিমুলেশন থেকে জানা গেছে চাঁদের রাসায়নিক গঠনের রহস্যও। থিয়ার সঙ্গে পৃথিবীর ধাক্কার সময় লোহার মতো ভারী মৌলগুলোর অধিকাংশই থেকে যায় পৃথিবীতে। যার কারণে মাত্র ১ শতাংশ লোহা রয়েছে চাঁদের কেন্দ্রে। অন্যদিকে হাইড্রোজেন, অক্সিজেনের মতো হালকা মৌলগুলো চাঁদের ছিটকে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড তাপমাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশে। ফলে পৃথিবীর উপগ্রহটিতে কোনো বায়ুমণ্ডলের অস্তিত্ব নেই।
    সুপার কম্পিউটারে প্রস্তুত নতুন সিমুলেশনগুলো যদিও চাঁদের উৎপত্তি সম্পর্কে চূড়ান্ত প্রমাণ নয়, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের নিকটতম প্রতিবেশীর সৃষ্টি কিভাবে হয়েছিল তা বোঝার একটি আশাব্যাঞ্জক উপায় এটি।