শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতাপ্রার্থীর ভাই খুন হওয়ার পাঁচ ঘণ্টা পর অপর প্রার্থীর লাশ উদ্ধার

0

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। পাঁচ ঘন্টার ব্যবধানে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর লাশ উদ্ধার ও অপর প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাই নিহত হওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে পৌর এলাকায়। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের ভোট স্থগিত করেছে। আগামীকাল শনিবার (১৬ জানুয়ারি) শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার ভোটের দুই দিন আগে বুধবার রাতে এক কাউন্সিলর প্রার্থীসহ দুই জন নিহত হয়েছেন। ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে শৈলকুপার কবিরপুর এলাকায় ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত হোসেনের ভাই আওয়ামী লীগের উমেদপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডিশ ব্যবসায়ী লিয়াকত হোসেন বল্টু (৫০) ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তিনি শৈলকুপা উপজেলার ষষ্ঠীবার গ্রামের মৃত মসলেম উদ্দীনের ছেলে। তিনি পৌর এলাকার কবিরপুর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে ছুরিকাঘাতের শিকার হন। প্রতিদ্বন্দ্বী পাঞ্জাবী প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হোসেন বাবুর সমর্থক বাপ্পির নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী বল্টু ও তার ভাই শওকতকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় বল্টুকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শৈলকুপা পৌর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার দিন রাতেই নিহত বল্টুর ওপর হামলাকারী কবিরপুর গ্রামের সামছুদ্দিনের ছেলে বাপ্পি (৩০) অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে আহত হয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। এদিকে সহিংসতা ও ভাঙচুর এড়াতে গোটা শহরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
বল্টু নিহত হওয়ার পাঁচ ঘন্টা পর খবর আসে পাঞ্জাবী প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হোসেন বাবুর লাশ কুমার নদে পড়ে আছে। কীভাবে মৃত্যু হয়েছে এই প্রার্থীর তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। বল্টু নিহত হওয়ার পেছনে বাবুর সমর্থকদের দায়ী করা হচ্ছিল। বিষয়টি পরিষ্কার হয় হামলাকারী বাপ্পি আহত হয়ে হাসপাতালে আসার পর। কারণ বাপ্পি ছিল বাবুর সমর্থক। ফলে নদীতে বাবুর লাশ পাওয়া ও বাপ্পির ওপর হামলা একই সূত্রে গাঁথা বলে অভিযোগ করেন বাবুর স্ত্রী ফজিলতুন্নেছা ইতি। তিনি বলেন, এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। বল্টু নিহত হবার পর বাবু তার স্ত্রীকে ফোন করে জানিয়েছিলেন ‘আমি নিরাপদে যাচ্ছি’ কেউ বাড়ি এসে দরজা খুলতে বললে যেন না খোলে। এটাই ছিল স্ত্রীর সঙ্গে বাবুর শেষ কথা। এর কিছুক্ষণ পরই বাবুল লাশ মেলে বরইপাড়া এলাকার কুমার নদে। পুলিশ মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে।
এক দিনে আওয়ামী সমর্থক দুই ব্যক্তির লাশ পাওয়ার ঘটনা পৌর নির্বাচনকে আরও সংঘাতময় ও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অনেক মনে করেন একটি ঘটনার জের ধরে আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। এদিকে কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হোসেন বাবুর সমর্থক ও পরিবার দাবি করছে পরিকল্পিত ভাবে বাবুকে হত্যা করা হয়েছে। শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুটি মৃত্যুর ঘটনায় এখনো কেউ মামলা করেনি। তাই গ্রেফতারও নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শহরের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এদিকে প্রার্থীসহ দুই জনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় দুটি পরিবারের স্বজনরা হতাশায় রয়েছেন।