কিস্তি আদায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় উদ্বেগে পোশাক শিল্প

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সচল রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হয়েছে সহজ শর্তের ঋণ। দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর ৩ জানুয়ারি চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি মাসের জানুয়ারি থেকে সমান ১৮টি কিস্তিতে প্রতি মাসের শেষ সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে অর্থ পরিশোধের বিষয়ে চিঠিতে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম মহাপরিচালক মো. সাহেদুল হাসান। ইউসিবির মতো দেশের অর্ধশতাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রায় সবগুলোতেই এ চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নভেল করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলার লক্ষ্যে সচল রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে সহজ শর্তে ঋণের কিস্তি আদায় প্রসঙ্গেই গত ৩ জানুয়ারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চিঠি পাঠানো হয়েছে দেশের প্রায় সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে। এতে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএ। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংগঠনটির সভাপতি ড. রুবানা হক।
বিজিএমইএ সভাপতির ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০২১ সালের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত পরশু দিন এ মর্মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পত্র জারি করেছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এ নির্দেশনা এমন সময়ে দেয়া হলো, যখন কিনা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে শিল্প গভীর অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্ততপক্ষে ছয় মাসের জন্য স্থগিতকরণ অথবা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ অন্ততপক্ষে আরো অতিরিক্ত এক বছর (বর্তমানে ২৪ মাস) সম্প্রসারিত করা না হলে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা দুরূহ হবে।
সমগ্র বিশ্ব দেখেছে, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের প্রভাব কী এবং খুচরা বিক্রয় ও চাহিদার ওপর সেগুলো কী প্রভাব রেখেছে—এমন তথ্য উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ব দেখেছে স্মরণকালের সবচেয়ে মন্দ ক্রিসমাস সেল। এসবের প্রভাবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে পণ্যের মূল্য কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় আমরা বিপর্যস্ত। যেহেতু ভ্যাকসিন প্রাপ্যতা এখনো নিশ্চিত হয়নি এবং এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরাজ করছে, তাই আমাদের আশঙ্কা, রফতানির এই নিম্নমুখী প্রবণতা সম্ভবত চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বজায় থাকবে।
শিল্প খাত সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি চিঠিতে বলেছেন, যথাযথ পুনর্গঠনের সুযোগ এমনকি প্রস্থান নীতি না থাকায় পশ্চিমা ক্রেতাদের দেউলিয়াত্ব বরণ, নির্দয়হীনভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল এবং ফোর্স মেজিউর ক্লজেসের কারণে শিল্প চরমভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কারখানাগুলো টালমাটাল পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাণান্তকর সংগ্রাম করে কোনোভাবে টিকে রয়েছে। শিল্প ভালো করছে এবং সরকারের কাছ থেকে সব সহযোগিতা পাচ্ছে, এই যে একটি ধারণা অনেকেই পোষণ করছেন, তার আজ প্রকৃত পুনর্মূল্যায়ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ পরিস্থিতিতে আমি আপনাদের সবার সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করি, যাতে করে আমরা নীতিনির্ধারকদের শিল্পের বর্তমান প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝাতে সক্ষম হই।