মেয়াদ শেষের আগেই যেভাবে ক্ষমতাছাড়া হতে পারেন ট্রাম্প

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে বুধবার ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবে হতবাক হয়ে গেছে বিশ্ব। কংগ্রেসের আইনপ্রণেতারা যখন জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের জন্য অধিবেশনে বসেন ঠিক সে সময়ই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শত শত সমর্থক পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়েন এবং নজিরবিহীন তাণ্ডব শুরু করেন। দিনের শুরুতে হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক ‘আমেরিকা বাঁচাও’ নামে একটি গণজমায়েতে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে আসে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই জনসভায় ভাষণ দিয়ে জো বাইডেনকে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন। তারপরেই পার্লামেন্ট ভবনে সহিংসততার ঘটনা ঘটে। এদিকে, এমন নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার জোরালো দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল। তিনি তার সমর্থকদের থামানোর বদলে তাদের উস্কে দিয়েছেন বলেই তারা এমন তাণ্ডব চালানোর সাহস পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষোভের নামে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের আগ্রাসী তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন ডিসিতে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। সহিংসতার শুরুতেই পুলিশের গুলিতে এক নারী নিহত হন। পরে ‘মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি’ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় আহত আরও তিনজনের মৃত্য হয়।
যেভাবে ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষমতায় আছেন। সেদিন তিনি জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। অর্থাৎ তার হাতে আর দু’সপ্তাহেরও কম সময় আছে। কিন্তু বুধবারের সহিংসতার ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবেই ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু চাইলেই কি ট্রাম্পকে সরিয়ে দেয়া যায়? মোটেও না। এক্ষেত্রে অবশ্যই সংবিধানের কিছু নিয়ম মেনে সামনে অগ্রসর হতে হবে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দুইটি পথ খোলা আছে- ট্রাম্পের অভিশংসন অথবা মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী। উভয়ক্ষেত্রেই ট্রাম্প ক্ষমতাচ্যুত হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। অর্থাৎ ট্রাম্প ক্ষমতা হারালে আগামী ২০ জানুয়ারি জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত পেন্সের হাতেই ক্ষমতা থাকবে। কিন্তু বিদায়ী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ছাড়ার আর অল্প কিছুদিনই বাকি আছে। এই সময়ের মধ্যে অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। ফলে অপর পথটিই এখন খোলা অর্থাৎ সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর মাধ্যমেই ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব। এই সংশোধনী অনুযায়ী, কোন প্রেসিডেন্ট যদি তার কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হিসেবে বিবেচিত হন তবে নতুন কাউকে সেই দায়িত্ব দেওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সম্মতির প্রয়োজন। এর আগে মার্কিন সংবিধানে এই সংশোধনী আনা হয় ১৯৬৭ সালে। এছাড়া আগেও একবার অভিশংসনের মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্প। যদিও সে যাত্রায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা হারানো থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। তবে এবার সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা অনেকটা সহজ। এই সংশোধনীর ৪নং ধারায় এমন অবস্থার কথা বলা হয়েছে যখন কোনো প্রেসিডেন্ট তার কাজ করতে অক্ষম হওয়ার পরও তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে এবিসি নিউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দেশটির সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর ৪নং ধারা কার্যকরের বিষয়ে আলোচনায় বসেছেন। এছাড়া, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করে তার জায়গায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে দায়িত্ব নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট সদস্য। হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির সব ডেমোক্র্যাট সদস্যের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ করে দিয়েছেন, তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ এবং ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল বাস্তবায়ন ও গ্রহণ করতে অক্ষম। ডেমোক্র্যাটদের কথায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার দেখিয়েছেন, তিনি গণতন্ত্র রক্ষা এবং অফিসের দায়িত্ব পালনে অনিচ্ছুক। ট্রাম্পকে ক্ষমতাছাড়া করার আহ্বান জানিয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠনও। ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশেন অব ম্যানুফ্যাকচারার্স নামে এ সংগঠনের সদস্য হিসেবে রয়েছে এক্সন মোবিল করপোরেশন, ফাইজার, টয়োটা মোটরসের মতো বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীগুলো। সংগঠনটির সভাপতি জে টিমনস বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ধরে রাখার প্রয়াসে সহিংসতায় প্ররোচণা দিয়েছেন এবং যেসব নির্বাচিত নেতা তাকে সমর্থন দিচ্ছেন, তারা সংবিধান লঙ্ঘন করছেন ও নৈরাজ্যের পক্ষে গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করছেন। ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসছাড়া করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির গণমাধ্যমকর্মীরাও। ওয়াশিংটন পোস্টের এডিটোরিয়াল বোর্ড বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে প্রেসিডেন্টের বিপুল ক্ষমতা থাকার প্রতিটি সেকেন্ড আইন-শৃঙ্খলা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। প্রায় একই কথা বলেছে মায়ামি হেরাল্ডও। পত্রিকাটি তাদের সম্পাদকীয়তে লিখেছে, তার (ট্রাম্প) কথাগুলো কোনও কুকুর ডাকার শিস ছিল না, এটা ছিল পুরোদমে যুদ্ধের আহ্বান। ট্রাম্প তার অ-আমেরিকান বক্তব্য এবং গণতন্ত্রবিরোধী কাজকর্মের মাধ্যমে এই বিদ্রোহে এমনভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যেন তিনি নিজেই ক্যাপিটলে ঝড় তুলছেন।