করোনা কেড়ে নিয়েছে ৮৪ পুলিশের প্রাণ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসকদের পর করোনায় আক্রান্ত হয়ে পুলিশের মৃত্যুর হারই বেশি। সোমবার (৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত সারাদেশে কনস্টেবল থেকে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার মোট ৮৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে নমুনা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার পুলিশ সদস্যের।
গত বছরের শুরুতে আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক থাকলেও বছরের শেষের দিকে অনেকটা কমে আসে। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে বাঁচতে সতর্কভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। পুলিশ সদরদফতর থেকেও একই নির্দেশনা দিয়ে করোনায় পুলিশ সদস্যদের মৃত্যু শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ৪ জানুয়ারি (২০২১) পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৮৬১ জন। এর মধ্যে র‌্যাব সদস্য রয়েছেন দুই হাজার ৫০১ জন। ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ১৯৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছেন ১৮ হাজার ৫৫২ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৪ জন। এর মধ্যে ৫ জন র‌্যাব সদস্য। আক্রান্তদের মধ্যে ছয়জন অতিরিক্ত আইজিপি, ১০ জন ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৯ জন, পুলিশ সুপার ১১৩ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১৮৬ জন, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ২৩০ জন, ইন্সপেক্টর ৯৫৬ জন, সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) তিন হাজার ১১ জন, অ্যাসিসটেন্ট সাব ইন্সপেক্টর (এএসআই) দুই হাজার ৮৩৯ জন, নায়েক ৫৫২ জন, কনস্টেবল আট হাজার ৮১৭ জন, অন্যান্য (সিভিলিয়ানসহ) শাখায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৮২জন। আক্রান্তদের মধ্যে নারী সদস্য রয়েছেন ৭৫৬ জন। পুলিশ সদস্যদের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৬৯ হাজার ৬৫৫ জনের।
তবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারায় পুলিশে করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে বলে মনে করেন পুলিশ সদর দফতরের কর্মকর্তারা। করোনা-দুর্যোগের শুরুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি মানুষকে সেবা দিতে গিয়েই পুলিশ সদস্যরা ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হন। নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তারা সাধারণ মানুষকে বাড়তি কিছু সেবাও দিয়েছেন। গত সপ্তাহে ডিএমপির মাসিক অপরাধ পর্যালোচনাসভায় পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এ সময় সবাইকে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সূত্র জানায়, কর্মকর্তাদের নিয়ে অভ্যন্তরীণ বৈঠকে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, করোনার দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে হবে। করোনায় মৃত্যু জিরোতে নিয়ে আসতে হবে। একইসঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে পুলিশ সদস্যদের রক্ষায় কাজ করতে হবে। পুলিশ সদরদফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি মো সোহেল রানা বলেন, ‘যখন কোনও সুরক্ষা সামগ্রী ছিল না, কোনও প্রস্তুতি ছিল না, তখন দায়িত্ব থেকে সরে না গিয়ে পুলিশ সদস্যরা মানুষকে সেবা দিয়ে গেছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে করোনায় মৃত রোগীর লাশ দাফনে যখন স্বজনরা এগিয়ে আসেনি তখন পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে গেছেন। রিলিফ বিতরণসহ সব ধরনের কাজও করেছে পুলিশ।’ সোহেল রানা বলেন, ‘আইজিপির নির্দেশনায় সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই, হান্ড স্যানিটাইজার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন বিষয়টি।’