যশোরে চিহ্নিত সন্ত্রাসী বিষে খুন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে প্রতিপক্ষের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন চিহ্নিত সন্ত্রাসী আমিনুর রহমান বিষে (৪৫)। গতকাল সোমবার বিকেলে যশোর শহরের আরবপুর মোড়ে এ হত্যাকান্ড ঘটে। বালি উত্তোলনের দখলদারিত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত নিহত আমিনুর রহমান বিষের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলাও রয়েছে। আমিনুর রহমান বিষে আরবপুর রেলগেট এলাকার আব্দুল মালেক হাওলাদারের ছেলে। হত্যাকান্ডের পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে ঘটনার সাথে জড়িত দুর্বৃত্তদের তারা আটক করতে পারেননি। নিহতের ছোটভাই শুভ হাওলাদার জানান, সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া কলোনি মোড় এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাগর ও তার লোকজন নারাঙ্গালী গ্রামের এক ব্যক্তির জমি দখল করে সেখান থেকে বালি উত্তোলন এবং বিক্রি করে আসছেন। জমির মালিক এ বিষয়টি তার ভাই বিষেকে জানান প্রতিকার পাওয়ার জন্য। পরে সাগরের কাছে গিয়ে তার ভাই অন্যের জমি থেকে বালি উত্তোলনের প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনায় সাগর তার ভাইয়ের ওপর ক্ষিপ্ত হন। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তার ভাই বিষে আরবপুর মোড় এলাকার আসলামের হোটেলে ভাত খাচ্ছিলেন। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে করে সাগরসহ তিন জন সেখানে আসেন এবং হোটেল থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাকে ডাক দেন। বিষে সাগরের ডাক শুনে হোটেল থেকে বেরিয়ে কিছ ুদূরে তাদের কাছে যান। এ সময় কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই সাগরের নেতৃত্বে সহযোগীরা বিষের ওপর আক্রমণ করেন। তারা তার বুকে ও পেটের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতের পর মোটরসাইকেলে করে খোলাডাঙ্গার দিকে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত তার ভাই বিষেকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে তার ভাই মারা যান।
হাসপাতালের চিকিৎসক দিপ্তী ত্রিপুরা জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, বিষে চিহ্নিত সন্ত্রাসী। নারাঙ্গালীতে বালি উত্তোলন করে ব্যবসা করেন তার প্রতিপক্ষ সাগর। বিষয়টি বিষের নজরে পড়ে। তিনি ওই স্থানটি দখলের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে মূলত দু’জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এর জের ধরে বিষেকে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. মনিরুজ্জামান জানান, কী বিষয় নিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটলো সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে দু’জনে (সাগর ও বিষে) একসময় একসাথে চলাফেরা করতেন বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন। নিহতের ভাই শুভ হাওলাদার জানান, তার ভাইয়ের হত্যার সাথে জড়িত সাগর এমপি কাজী নাবিল আহমেদ গ্রুপের লোক। তার ভাই বিষে একসময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চালকাদারের গ্রুপের সাথে ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি কোনো গ্রুপের সাথে ছিলেন না। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, আরবপুরের আলোচিত সন্ত্রাসী দাঁতাল বাবুর অন্যতম সহযোগী ছিলেন বিষে। চাঁদাবাজিসহ বহু অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন । ২০১৬ সালে তিনি ওয়ান স্যুটারগানসহ পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি এলাকায় চাঁদাবাজিকালেও আটক হন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, বিষে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় হত্যা, বিস্ফোরক, অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও মারামারিসহ ৯টি মামলা আছে। বালিয়া ভেকুটিয়া এলাকার সাগরসহ ৩/৪ জন তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। জড়িতদের আটকের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা সূত্র জানায়, হত্যার সাথে জড়িত সাগরও একজন চিহ্নিত অপরাধী। ২০১৬ সালে কোতয়ালি থানায় দায়েরকৃত ডাকাতির প্রস্তুতির একটি মামলার আসামি তিনি।