পর্যটনে পিছিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা প্রয়োজন

0

মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহারসহ অর্থনীতির অনেক সূচকে দণি এশিয়ার অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে জিডিপির হিসাবে দণি এশিয়ায় শীর্ষে এবং এশিয়ায় চতুর্থ স্থানে থাকবে বাংলাদেশ। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে পর্যটন খাতে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো সবার পেছনে পড়ে রয়েছে। পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেগুলোর জাতীয় আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের জিডিপিতে ২০১৮ সালে পর্যটন খাতের অবদান ছিল ৯.২ শতাংশ। কর্মসংস্থানে পর্যটনের অবদান ছিল ৮.১ শতাংশ। বাংলাদেশের চেয়ে দুর্বল অবকাঠামো নিয়েও পর্যটনে অনেকটা এগিয়ে নেপাল। দেশটির জিডিপিতে এই খাতের অবদান ৯ শতাংশ। আর বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ২.২ শতাংশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান মাত্র ১.৮ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৯ অনুযায়ী, বন্দর ও বিমান পরিবহন অবকাঠামো, নিরাপত্তা, সংস্কৃতি, বাসস্থান, আর্থিক মান, স্থিতিশীল ভ্রমণের সুযোগসহ ৯০টি মানদণ্ড বিবেচনা করে ১৪০ দেশের র্যাংকিংয়ে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ততায় বাংলাদেশ না এগিয়ে বরং পিছিয়েছে। ১০৪তম অবস্থান থেকে পিছিয়ে হয়েছে ১১৪তম। এটি মূলত ভিসার আবশ্যিক শর্ত বাড়ানোর কারণে হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটক সেবা অবকাঠামোয় বাংলাদেশ বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। এই তালিকায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত ৩৪তম, শ্রীলঙ্কা ৭৭তম ও নেপাল ১০২তম। অথচ বাংলাদেশে পাহাড়, সাগর, নদী, বন, পুরাকীর্তি, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিসহ পর্যটক আকর্ষণের অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেগুলোকে আমরা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছি না। বিশ্বের কাছে ঠিকমতো তুলে ধরতে পারছি না। এ ছাড়া পর্যটন গন্তব্যগুলোয় দুর্বল অবকাঠামো, মানসম্মত সেবা ও সুযোগের অভাব, প্রশাসন ও স্থানীয় অধিবাসীরা পর্যটনমনস্ক না হওয়া, পর্যটনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, আমলান্ত্রিক জটিলতা, পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবসহ আরো অনেক কারণেই দেশের পর্যটনশিল্প এগোতে পারছে না। তার ওপর করোনা মহামারির আঘাত এই খাতকে রীতিমতো ধ্বংস করে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যটন খাতে দ জনবলেরও অভাব রয়েছে। হোটেল ও ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট খাতে মানসম্মত প্রশিণ আরো বাড়াতে হবে। পর্যটনকেন্দ্রগুলোর কাছাকাছি স্থানীয় জনগণের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতœতাত্ত্বিক বা ঐতিহাসিক নিদর্শন কিংবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানগুলোতে যোগাযোগ, নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। আমরা আশা করি, পর্যটন খাতের উন্নয়নে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে এবং তার ভিত্তিতে দ্রুত উন্নয়নকাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।