আন্তর্জাতিক সংবাদ

0
তুরস্কে হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে ৮ করোনা রোগীর মৃত্যু
লোকসমাজ ডেস্ক ॥ অক্সিজেন মেশিনে অগ্নিকাণ্ডে তুরস্কের দণিপূর্বাঞ্চলীয় গাজিয়ানতেপ প্রদেশে একটি হাসপাতালে অন্তত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সানকো ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের করোনা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ আরও জানায়, উচ্চ মতা সম্পন্ন ওই অক্সিজেন মেশিন দিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের থেরাপি দেয়া হচ্ছিল। দুর্ঘটনাস্থলেই সাত জনের মৃত্যু হয়। অন্য হাসপাতালে নেয়ার পর অপরজন মারা যায়। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বয়স ৬৫ থেকে ৮৫’র মধ্যে। বিস্ফোরণের সময় বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পাঠানো ১৪ করোনা আক্রান্ত রোগী ইনটেনসিভ কেয়ারে চিকিৎসাধীন ছিলেন।অগ্নিকাণ্ডের পরপরই তাৎণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস। ঘটনা অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারি হিসেবে দেশটির ৭৪ শতাংশ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রোগী ভর্তি রয়েছে। যদিও মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, প্রতিটি হাসপাতালে ধারণ মতার চেয়ে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। শুক্রবার রাতে তুর্কি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গেল ২৪ ঘণ্টায় ২৬ হাজার ৪১০ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মার্চ থেকে এ নিয়ে মোট আক্রান্ত প্রায় ২০ লাখ।
ফাইজারের টিকা নেয়ার পরই অচেতন নার্স
লোকসমাজ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের টিনেসিতে একজন নার্সকে ফাইজার-বায়োএনটেক আবিষ্কৃত করোনা ভাইরাসের টিকা দেয়ার পরপরই তিনি অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। এর কিছুণ পরেই আবার তিনি সুস্থ হয়েছেন। তবে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করে বলেছেন, টিকার সঙ্গে তার এই অসুস্থতার কোনো সম্পর্ক নেই। এ খবর দিয়েছে অনলাইন নিউজউইক। এতে বলা হয়, টিনেসির ছাত্তনুগায় অবস্থিত সিএইচআই মেমোরিয়াল হাসপাতালের নার্স টিফফানি ডোভারকে ওই টিকা দেয়া হয়েছিল। এর প্রায় ১৫ মিনিট পরে তার ঝিম ঝিম অনুভূতি হতে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি পড়ে যাচ্ছিলেন।তখন পাশে থাকা একজন ডাক্তার তাকে ধরে ফেলেন। তবে দ্রুততার সঙ্গে তিনি সুস্থ হয়েছেন এবং দাঁড়াতে সম হয়েছেন। এরপর হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। ডব্লিউটিভিসি নিউজ চ্যানেল ৯’কে উদ্ধৃত করে রিপোর্টে আরো বলা হয়, নার্স ডোভার বলেছেন- আকস্মিকভাবে আমার ভিতর কেমন যেন অনুভূতি হলো। আমি বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা হতে যাচ্ছে। কিছুটা দিশেহারা মনে হয়েছিল। তবে এখন ভাল আছি। আমার বাহুতে যে ব্যথা ছিল তাও এখন আর নেই। ওদিকে সিএইচআই মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, নার্স ডোভার যে সমস্যার আক্রান্ত হয়েছেন তার সঙ্গে ফাইজারের টিকার কোনো উপাদানের সম্পর্ক নেই। এই টিকাটি কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদন দিয়েছে। নার্স ডোভার বলেছেন, তিনি যখন ব্যথা বোধ করেন তখন তিনি মাঝে মাঝে অচেতন হয়ে পড়েন। তাই তিনি টিকা নেয়ার পরে অচেতন হওয়াকে বিস্ময়ের কিছু বলে দেখছেন না। তার ভাষায়- আমার একরকম স্নায়ু সংক্রাস্ত অতিমাত্রায় সংবেদনশীলতা আছে। কখনো ব্যথা পেলেই তা তীব্র হয়ে ওঠে। এটা এমন এক বিষয় যাতে শরীরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই স্নায়ু ব্রেন থেকে শুরু করে মুখমণ্ডল, থোরাক্স এবং পেট পর্যন্ত বিস্তৃত। ব্যথা সহ বিভিন্ন রকম বিষয়ে এই স্নায়ু সংবেদনশীল হতে পারে। যখনই এমনটা হয় তখনই একজন মানুষের মধ্যে ঝিম ধরা ভাব আসতে পারে। তিনি অচেতন হতে পারেন। ফলে নার্স ডোভালের ঘটনার সঙ্গে ফাইজারের টিকার কোনো সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন সিএইচআই মেমোরিয়ালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের মেডিকেল পরিচালক ডা. জেসে টাকার।
রেস্টুরেন্টের বাথরুমে মেক্সিকোর সাবেক গভর্নরকে গুলি করে হত্যা
বিদেশ ডেস্ক ॥ মেক্সিকোর সহিংসতা কবলিত পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য জালিসকোর সাবেক এক গভর্নরকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার জনপ্রিয় পর্যটন উপকূল পুয়ের্তো ভাল্লারতায় একটি রেস্টুরেন্টের বাথরুমে অ্যারিসতোতেলেস সান্দোভালের ওপর গুলি চালানো হয়। পরে তার দেহরীরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে চাইলেও রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বন্দুকধারীরা। এর কিছুণ পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জালিসকো প্রদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল জেরার্ডো অক্টাভিও সোলিস জানান, অ্যারিসতোতেলেস সান্দোভাল অপর চার ব্যক্তিকে নিয়ে রাতের খাবার খেতে যান। রাত দেড়টার দিকে তিনি টেবিল থেকে উঠে বাথরুমে যান। সেখানে পেছন দিক থেকে তার ওপর গুলি চালানো হয়। পরে তার দেহরীরা তাকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলে বন্দুকধারীরা আবারও গুলি চালিয়ে রাস্তা আটকানোর চেষ্টা করে। সেসময় এক দেহরী মারাত্মক আহত হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেখানেই তিনি মারা যান। অ্যারিসতোতেলেস সান্দোভালের নিরাপত্তায় ১৫ জন পুলিশ দেহরী নিযুক্ত থাকলেও হামলার সময়ে মাত্র দুই জন উপস্থিত ছিলো। নিরাপত্তা বিশ্লেষক অ্যালেজান্দ্রো হোপ বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড বিপুল পরিকল্পনা নিয়ে করা হয়েছে- এর অর্থ কেউ তাকে কয়েক সপ্তাহ ধরেই খুঁজে বেড়াচ্ছিল। কেউ হয়তো তার গতিবিধি জানতো, আর কমবেশি এটাও জানতো কখন তার দেহরী কম থাকবে।’ অ্যাটর্নি জেনারেল জেরার্ডো অক্টাভিও সোলিস জানান, রেস্টুরেন্টের কর্মীরা ক্রাইম সিন পরিষ্কা করে ফেলেছে, রক্ত এবং গুলির বাক্স সরিয়ে ফেলেছে এমনকি হামলার ভিডিও ফুটেজ মুছে দিয়েছে। তিনি বলেন, কোনও কু পাওয়া যায়নি-তারা কার্যত জায়গাটি পরিষ্কার করে ফেলেছে। তিনি দাবি করেন, হামলায় আট থেকে দশ জন সন্দেহভাজন হামলাকারী যুক্ত ছিলো। তবে এই ঘটনায় কারা জড়িত ছিলো সে সম্পর্কে কোনও ইঙ্গিত দেননি তিনি। এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ম্যানুয়েল লোপেজ অব্রাডোর।
রাখাইনে ধর্ষণ, ৩ সেনার ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড : আল জাজিরা
লোকসমাজ ডেস্ক ॥ মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে গণধর্ষিত হয়েছিলেন থিয়েন নু। কিন্তু তিনি মাথা নত করে মেনে নেননি সব। দেশটির সবচেয়ে শক্তিধর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। সেই মামলায় কয়েক মাস ধরে লড়াই করেছেন। অবশেষে তিনি বিজয় পেয়েছেন। পেয়েছেন সুবিচার, যা মিয়ানমারে কল্পনা করাও কঠিন। থিয়েন নু’কে ধর্ষণকারী তিন সেনা সদস্যকে কঠোর শ্রম সহ ২০ বছরের জেল দিয়েছে আদালত। এতে থিয়েন নু মনে করেন, এই শাস্তি অন্য যেসব ধর্ষিতা আছেন বা নির্যাতিতা আছেন তাদেরকে সাহস যোগাবে। সেনাবাহিনীর দায়মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন তারা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। থিয়েন নু ৩৬ বছর বয়স্ক চার সন্তানের মা। জুনে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে তাকে গণধর্ষণ করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এই অঞ্চলেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, গুলি করে হত্যা, রোহিঙ্গাদের ধনসম্পদ ধ্বংস করে দেয়া সহ ইত্যকার অভিযোগ আছে। তা প্রামাণ্য আকারেও উপস্থাপন করেছে অনেক মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন। জাতিসংঘ একে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। থিয়েন নু ধর্ষিত হওয়ার পর সেনাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি বলেন, আমার মতো অনেক নারীই একই ঘটনার শিকার হয়েছেন। তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখেছেন। কিন্তু তাদের মতো আমি যদি এটা গোপন করে যেতাম তাহলে রাখাইনে আরো মানুষ একই ঘটনার শিকার হতেন। সেনাবাহিনী রাখাইনে কোনো ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত নয় বলে আন্তর্জাতিক সংগঠনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু থিয়েন নু প্রমাণ করে দিয়েছেন, রাখাইনে ধর্ষণ করা হচ্ছে। আর তাতে জড়িত সেনাবাহিনী। কিন্তু তিনি অভিযোগ করেছেন। সাহস দেখিয়েছেন। ফলে সমাজে তাকে কলঙ্কিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এমনকি তার স্বামী পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা বলেন না। থিয়েন নু বলেন, একই সঙ্গে আমি খুশি এবং দুঃখিত। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে, সামরিক বিচারে তার পে রায় দেয়া হবে। তবু থিয়েন নু বলেন, আমি বিচার পাওয়ার পরও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, এই রায়ে ধর্ষণ বন্ধ হবে। সংঘাতকবলিত এলাকাগুলোতে নারীর বিরুদ্ধে নির্যাতন বন্ধ হবে। কারণ, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হলো অবিশ্বস্ত দু’মুখো মানুষ। শনিবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর আদালত তাদের সেনা সদস্যদের অন্যায়ের বিরল স্বীকারোক্তি দিয়েছে এই শাস্তি ঘোষণার মাধ্যমে। তারা ধর্ষক তিন সেনা সদস্যকে জেল দিয়েছে। তবে পর্যবেকরা এতে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে ‘ওয়াটারশেড’ দেয়া হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তারা সতর্কতা দিয়েছেন। হিউম্যান রাইট ওয়াচের ফিল রবার্টসন বলেছেন, সেনাবাহিনীর র‌্যাংকধারীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মোকাবিলার জন্য মিয়ানমারেরে সেনাবাহিনী প্রস্তুত কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। এর আগে সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিল। কোনো কোনো েেত্র তারা ভিকটিমের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেছে। ফিল রবার্টসন আরো বলেন, অনেক মামলার এমন বিচার দাবি করে। সামরিক আদালত তো কাজ করে রুদ্ধদ্বার।এখন থেকে প্রায় ৬ মাস আগে থিয়েন নু-এর ওপর নেমে এসেছিল নৃশংস, ভয়াল সেই রাত। সে কথা এখনও দিবালোকের মতো স্পষ্ট স্মরণ করতে পারেন তিনি। তিনি বলেন, অন্ধকার নেমে আসার পর পরই গ্রামে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হলো। তিনি মেয়ে ও অন্যদের নিয়ে শাশুড়ির বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। সঙ্গে ছিলেন অন্য নারী ও তাদের সন্তানরা। মধ্যরাতের দিকে চারজন সেনা সদস্য জোর করে তাদের ঘরে প্রবেশ করে। শিশুরা কান্নাকাটি করছিল। ফলে সহজেই তাদেরকে শনাক্ত করতে সম হয় সেনারা। থিয়েন নু বলেন- আমি বুঝতে পারছিলাম যে তিন সেনা সদস্য আমাকে ধরেছে, তাদের চেয়ে শক্তিতে আমি দুর্বল। ফলে তাদের হাত থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। সেই রাতে তাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে ওই সেনারা। এ ঘটনার পর সন্তানদের নিয়ে তিনি গ্রাম ছেড়ে পালান। চলে যান সিতওয়েতে। সেখানে গিয়েই তিনি বিচার চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মনে করেন, তিন ধর্ষণকারী বাদেও চতুর্থ যে সেনা কর্মকর্তা সেখানে ছিল, তিনি ওই ধর্ষণ থামাতে পারতেন। তারও বিচার হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। আরাকান ওমেন নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান নাইও আয়ি বলেন, যেহেতু বিচার করা হয়েছে, তাই এখন অন্য ধর্ষিতাদের সামনে এসে বিচার চাওয়া উচিত। উল্লেখ্য, থিয়েন নু ও তার পরিবারকে আইনি সহায়তা, পরামর্শ ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে আরাকা ওমেন নেটওয়ার্ক।