সব রাজনৈতিক দলকেই একটি জায়গায় আসা দরকার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিএনপি’র মতো বড় রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে মনে করেন ডাকসুর সাবেক ভিপি, আলোচিত ছাত্রনেতা নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, শুধু বিএনপি নয়, সব রাজনৈতিক দলকেই একটি জায়গায় আসা দরকার। গত বৃহস্পতিবার মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন। প্রয়োজন হলে বিএনপি’র সঙ্গে জোট বেঁধে আন্দোলন-সংগ্রাম করবো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আসছে জানুয়ারিতেই তাদের নতুন দল আত্মপ্রকাশ করবে বলে জানান নুর। বলেন, আমরা আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে চাই। হয়তো সাফল্য পাবো না। কিন্তু জনগণের কাছে একটি বার্তা যাবে।
পরের নির্বাচনে হয়তো আমাদের অবস্থান শক্ত হবে। সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতা প্রসঙ্গে নুর বলেন, এটাকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। দীর্ঘদিন সরকার ভিন্নমত, বিরোধী দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা, দিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছে। কিন্তু বর্তমানে একটু ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছে। মাঠে নামার চেষ্টা করছে। এই সরকার অগণতান্ত্রিকভাবে দুইবার ক্ষমতায় আছে। তারা ক্ষমতায় আছে কারণ মাঠে বিরোধী দলের কোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেই। সরকার কোনো চাপ বোধ করছে না। সেই কারণেই বিভিন্ন ইসলামিক দল, ছোট রাজনৈতিক দলগুলো কিংবা মূল ধারার রাজনৈতিক দলের ছোট ছোট আন্দোলন গড়ে উঠছে। এগুলো আসলে বড় আন্দোলনের গড়ে ওঠার একটি ইতিবাচক প্রস্তুতি। এরশাদ সরকার যেদিন ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল সেদিনও কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট করে হলেও একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল। এভাবে আসলে বড় আন্দোলনের সূচনা হয়। তিনি বলেন, বিএনপি নেতৃবৃন্দের কথাবার্তা বিভিন্ন সময় শুনেছি। বিএনপি নেতারাই বিভিন্ন সময় বলেছেন, কেউ সরকারের দালাল, কেউ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে রাজনীতি করছে। বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা মিছিল- মিটিংয়ে স্ল্লোগান দিয়েছে ‘খালেদা তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’। অথচ খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পরে একদিনতো তারা রাজপথে নামেনি। এটা আমার কথা না বিএনপি’র লোকেরাই এসব কথা বলে থাকেন। এসব কারণেই বিএনপি’র সিনিয়র নেতা মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ কিংবা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, তারা কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারার কারণে সরকার বেগম জিয়াকে ভেতরে রাখতে পেরেছে। নুর বলেন, আমরা নিজেরা এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল না। আমরা রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা করছি আর আমাদের চারটি অঙ্গসংগঠন রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি কিছু জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি পালন করার এবং এর মাধ্যমে সে দাবি আদায় করার। সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা, আন্দোলন সফল করার মতো অধিক পরিমাণ নেতাকর্মী এখনো আমাদের নেই। বিভিন্ন দল ও সংগঠনের সঙ্গে আমরা কিছু কর্মসূচি পালন করছি। যেমন আমরা মওলানা ভাসানীর জন্মদিন, মৃত্যুদিন স্মরণ করলাম। ভাসানী আমাদের জন্য অবিসংবাদিত নেতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরে যদি কেউ থাকে তিনি মওলানা ভাসানী। কিন্তু এটা আমাদের দলীয় সংকীর্ণ রাজনীতির কারণে আওয়ামী লীগও সামনে আনে না বিএনপিও সামনে আনে না। আওয়ামী লীগ ভাসানীকে সামনে আনলে বিব্রত হয়। কারণ সেই দলের প্রতিষ্ঠাতা ভাসানী। আবার বিএনপি রাজনৈতিক কৌশলের কারণে ভাসানীকে ওইভাবে সামনে আনে না। এসব কারণে আমরা নিরপেক্ষ জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি ভাসানীকে তুলে ধরা। সামনে আরো এ রকম ইস্যুতে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি হতে পারে। এটা কোনো রাজনৈতিক জোট কিংবা নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট না। আমরা সরকার পতনের আন্দোলন করবো সেইরকম জোটও না। মানুষের সঙ্গে কাজ করলে আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়। একটি পর্যায়ে যাওয়ার পর বোঝা যাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো কিনা। শেষ পর্যন্ত এই যাত্রা কোন দিকে যাবে। নুর বলেন, এই মুহূর্তে সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়করণ করে রেখেছে। সেটা বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ সব জায়গায়। এসবের বিপক্ষে আন্দোলন করতে হলে সমস্ত রাজনৈতিক দল, সংগঠনকে একটি কমিটমেন্টের মধ্যে আসতে হবে।