চরমপন্থি রিপন ফকির আটক : অস্ত্র-গুলি উদ্ধার : চাচির পরকীয়ায় সৃষ্ট দ্বন্দ্বে খুন হন অভয়নগরের আল-মামুন আকুঞ্জি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চাচির পরকীয়া নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে চরমপন্থি রিপন ফকিরের হাতে খুন হয়েছেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া গ্রামের আল-মামুন আকুঞ্জি। তবে মূল টার্গেট ছিলো আল-মামুনের চাচাতোভাই মাসুম আকুঞ্জি। গত বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন। এর আগে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীনগর থানার সলিমগঞ্জ এলাকা থেকে আল-মামুন আকুঞ্জি হত্যা মামলার প্রধান আসামি রিপন ফকিরকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরে তার স্বীকারোক্তিতে শুভরাড়া গ্রাম থেকে দুটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। আটক চরমপন্থি রিপন ফকিরকে গত বুধবার দুপুরের পর আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী মাসুম আকুঞ্জিও আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মামুনুর রহমান তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
অপরদিকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আটক রিপন ফকিরের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় গত বুধবার আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার আদালতে তার ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। গত বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপার সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে বলা হয়, শুভরাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল গফুর ফকিরের ছেলে রিপন ফকির নিউ পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। নিহত আল-মামুন আকুঞ্জির ভাই আরমান আকুঞ্জিও এক সময় তার সাথে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ের সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু পরে দু জনে আলাদা হয়ে যান। অপরদিকে রিপন ফকির নিহত আল-মামুনের চাচি বেবি বেগমের সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে তিনি বেবি বেগমকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন। তাকে ভারতে নিয়ে দুজনে সেখানে বসবাস করতে থাকেন। পরে রিপন ফকির ভারত থেকে দেশে চলে আসেন। তবে মায়ের সাথে রিপন ফকিরের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি বেবি বেগমের ছেলে মাসুম আকুঞ্জি। রিপন আকুঞ্জির প্রতি তার ক্ষোভ ছিলো। বিষয়টি জানতে পেরে রিপন ফকির এক সময় দলবল নিয়ে খুলনার ফুলতলা থেকে একবার মাসুম আকুঞ্জিকে তুলে আনতে গিয়েছিলেন। তবে সেই মিশন সফল হয়নি।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, রিপন ফকিরের সাথে বিরোধের বিষয়টি এক পর্যায়ে চাচাতোভাই আল-মামুন আকুঞ্জিকে জানান মাসুম আকুঞ্জি। এ সময় আল-মামুন আকুঞ্জি এ বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার কথা জানান। কিন্তু এরই মধ্যে মাহাবুব নামে এক সহযোগী রিপন ফকিরের কাছে গিয়ে উল্টো খবর দেন। তিনি তাকে জানান যে, মাসুম আকুঞ্জি হত্যার পরিকল্পনা করেছেন। বিষয়টি সত্য ভেবে গত ১৭ অক্টোবর বিকেলে শুভরাড়া গ্রামের সোহান মোল্যার বাড়ির সামনে মাসুম আকুঞ্জি ও আল-মামুন আকুঞ্জির ওপর দলবল নিয়ে চড়াও হন রিপন ফকির। এ সময় আল-মামুন তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, তিনি বিষয়টি মীমাংসা করে দিতে চান। তবে তার কথায় বিশ্বাস না করে মাসুম আকুঞ্জিকে লক্ষ্য করে গুলি করেন রিপন ফকির। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সেই গুলি আল-মামুন আকুঞ্জির গায়ে লাগলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আল-মামুন আকুঞ্জিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। ওই ঘটনার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান রিপন ফকির।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, ডিবি পুলিশের একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীনগর থানার সলিমগঞ্জ এলাকার একটি বাড়ি থেকে অভিযুক্ত চরমপন্থি রিপন ফকিরকে আটক করে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে শুভরাড়া থেকে দুটি পাইপগান, ২ রাউন্ড বন্দুকের গুলি, ৪ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ও ৪টি ককটেল উদ্ধার করে। প্রেস ব্রিফংয়ে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দিন শিকদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল-নাসের, ডিবি পুলিশের ওসি সোমেন দাশ উপস্থিত ছিলেন। ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম পিপিএম জানান, বুধবার দুপুরের পর আটক রিপন ফকিরকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। জবানবন্দিতে আল-মামুন আকুঞ্জি হত্যাকা-ের বর্ণনা দিয়েছেন রিপন ফকির। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে রিপন ফকির আদালতে বলেছেন, তিনি মাসুম আকুঞ্জির মা বেবি বেগমকে বিয়ে করেন। এ জন্য তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মাসুম আকুঞ্জি। তাকে ধরিয়ে দিতে তার ফুফাতোভাই মাহাবুবকে ৫০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলেন মাসুম আকুঞ্জি। তবে মাহাবুব ঘটনাটি তার কাছে ফাঁস করে দেন। এ ঘটনার পর তিনি এবং তার সহযোগী বিল্লালসহ কয়েকজন পানের বরজের ভেতরে মাটিতে পুঁতে রাখা আগ্নেয়াস্ত্র তুলে ঘটনার দিন মাসুম আকুঞ্জিকে খুঁজতে যান। পথে মাসুম আকুঞ্জি ও আল-মামুন আকুঞ্জির সাথে তাদের দেখা হয়ে যায়। তার কাছে অস্ত্র দেখতে পেয়ে মাসুম আকুঞ্জি তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, গুলি করার ক্ষমতা নেই তোমার। এই কথা শুনে তিনি আল-মামুন আকুঞ্জি বুকে গুলি করেন। পরে তারা সেখান থেকে চলে যান। পুলিশ জানায়, অস্ত্র-গুলি ও ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় আটক রিপন ফকিরের বিরুদ্ধে গত বুধবার অভয়নগর থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অস্ত্র আইনের এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে তার ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়।