করোনার টিকা নিয়ে যেন দুর্নীতি না হয়

0

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ প্রতিরোধী প্রথম টিকা গ্রহণ করে ইতিহাস হয়ে থাকলেন যুক্তরাজ্যের কভেন্টি শহরের নব্বই বছর বয়সী নারী মার্গারেট কিনান। আর করোনা প্রতিরোধী টিকার আবিস্কার ও প্রয়োগে বিশ্বে এগিয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার কোম্পানি। প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য দুই ডিসেম্বর মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের টিকা আমদানি ও ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এই টিকা উদ্ভাবনে ফাইজারকে সহযোগিতা করেছে জার্মানির প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক। ফাইজারের দাবি, মানবদেহে এই টিকা ৯৫ শতাংশ কার্যকর ও নিরাপদ। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন এফডিএ বলেছে, এই টিকার প্রথম ডোজ প্রয়োগের ১০ দিন পরেই দৃঢ় প্রতিরোধ দিতে সম করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে। হুইল চেয়ারে বসে টিকা গ্রহণকারী বর্ষীয়ান ওই নারী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এটি জন্মদিনের আগে সবচেয়ে বড় উপহার। উল্লেখ্য, টিকা পেতে অগ্রাধিকার পাবেন বেশি বয়সী ব্যক্তি ও প্রথম সারিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাংলাদেশেও ফাইজারের টিকা আমদানি ও প্রয়োগের জোর প্রচেষ্টা চলছে। টিকা প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে আরও এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না, অক্সফোর্ডের এ্যাস্ট্রোজেনেকা এবং চীনের সিনোভ্যাক।
বাংলাদেশী সব নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, যা স্বস্তিদায়ক। যা জনমনে এটি ব্যাপক আশা ও উদ্দীপনার সঞ্চার করেছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা যে দেশই প্রথম আবিষ্কার করুক না কেন, ব্যাপক চাহিদার প্রেেিত তা খুব সুলভ ও সহজপ্রাপ্য হবে না- এ কথা বলাই বাহুল্য। অনেক উন্নত ও ধনী দেশই টিকা সংগ্রহের ব্যাপারে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে এগিয়ে থাকবে। সে তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। তবে সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে বলা যায়। এখানে বলা আবশ্যক, এই হন্তারক মহামারী প্রতিরোধে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ নানা পদেেপর ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বাংলাদেশে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন চাই, সরকার প্রতিশ্রুত করোনা প্রতিরোধী টিকা সংগ্রহ তথা আমদানি করে দেশবাসীকে তা বিনামূল্যে সরবরাহ ও প্রয়োগ করা। এর জন্য সরকার অবশ্য পৃথক অর্থ বরাদ্দও রেখেছে ১২০০ কোটি ডলার। এর বাইরেও বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইইউবি ও জাইকার কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার করে অনুদান চেয়ে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। দেশে বিদ্যমান বিনামূল্যে ইপিআই টিকাদান কর্মসূচির মতোই বিতরণ ও প্রয়োগ করা হবে এই ভ্যাকসিন। উল্লেখ্য, এেেত্র বাংলাদেশের বিশেষ সাফল্য রয়েছে, যার স্বীকৃতি মিলেছে বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক। টিকা প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই টিকা পাবে তাতে সন্দেহ নেই। এখন প্রয়োজন সবার জন্য বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। তবে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে যেন কোন দুর্নীতি-অনিয়ম বা নয়-ছয় না হয়, তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে সংশ্লিষ্টদের। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে সব সাফল্য ম্লান হয় দুর্নীতি আত্মসাৎ আর স্বজনপ্রীতিতে।