দুই সপ্তাহে করোনা সনদ ছাড়া ফিরেছেন ১৫৬৫ যাত্রী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নির্দেশনা অমান্য করে করোনা সনদ ছাড়াই দেশে আসছেন বিমান যাত্রীরা। নেগেটিভ সনদ ছাড়া বিমানবন্দরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, সনদ ছাড়া যাত্রী নেয়ার কারণে এয়ারলাইন্সকে জরিমানা এবং নানা সতর্কতামূলক আগাম বার্তা দেয়ার পরও বিমানবন্দর দিয়ে সনদ ছাড়া যাত্রীরা আসছেন। আসছেন করোনা রোগীও। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে দেশে করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদেশ থেকে ফেরত আসা কোনো যাত্রী দেশে প্রবেশ করতে চাইলে অবশ্যই তাকে ৭২ ঘণ্টা আগের প্রাণঘাতী করোনা মুক্তির সনদ লাগবে। তারপরও নানা অজুহাতে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইটে করে নেগেটিভ সনদ ছাড়াই যাত্রী আনছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ২ সপ্তাহে করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়াই ১ হাজার পাঁচশ’ ৬৫ জন যাত্রী শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে এসেছেন। এরমধ্যে ৫ জন করোনা রোগীও ছিলেন।
সনদ ছাড়া যারা দেশে এসেছেন তাদের আইসোলেশনে পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আক্রান্ত ৫ জন করোনা রোগীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া দেশে যাত্রী নিয়ে আসার কারণে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। করোনা সনদ ছাড়া দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে না বলে এয়ারলাইন্সগুলোকে আগাম বার্তা দিয়েছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। যদি তারা এ সতর্কতামূলক বার্তা না মানেন এবং করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী নিয়ে আসা অব্যাহত রাখে তাহলে তাদের বাংলাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফ্লাইটসেবা বন্ধ করে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও কর্তৃপক্ষ বাড়তি সতর্কতা হিসেবে সনদ যাচাইয়ের পাশাপাশি যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছে। এ বিষয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদুল আহসান মানবজমিনকে জানান, ‘করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া কোনো যাত্রীকে বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এয়ারলাইন্সগুলোকে জরিমানা করা হচ্ছে।’ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, শীত মৌসুম আসার পর দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। বিদেশ থেকে ফেরত আসা যাত্রীদের দ্বারা কেউ যাতে আক্রান্ত না হন এজন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যাতে বাংলাদেশে আছড়ে পড়তে না পারে এজন্য ৫ই ডিসেম্বর থেকে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের করোনা নেগেটিড সনদ বাধ্যতামূলক করে বিমানবন্দর ও বেবিচক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেও সনদ ছাড়াও এবং আক্রান্ত রোগীদের আসা-যাওয়া হচ্ছে বিমানবন্দরে। সূত্র জানায়, প্রায় ১৩টি এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইটে করে সনদ ছাড়াই যাত্রীদের নিয়ে এসেছে। এরমধ্যে রয়েছে, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স, মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্স, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া এয়ারলাইন্স, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, এমিরেটস, কুয়েত এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ও গালফ এয়ার।
সূত্র জানায়, গত ১৫ই ডিসেম্বর সাউদিয়া এয়ারলাইন্স করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়াই ২৬০ জন যাত্রী নিয়ে বিমানবন্দরে আসে। এর আগের দিন তারা আরো ২৫৯ জন যাত্রী নিয়ে বিমানবন্দরে আসে। আগের ফ্লাইটে শ্রমিকরা এসেছিল বলে জানা গেছে। তাদের কেউ কেউ খালি পায়ে এসেছেন। কারও ল্যাগেজ ছিল না। এমনকি অনেকের শীতের কাপড়ও ছিল না। সনদ ছাড়াই যাত্রী নিয়ে আসার কারণে ওই এয়ারলাইন্সকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সনদ ছাড়া গত ৫ই ডিসেম্বর ৩০৪ জন, ৬ই ডিসেম্বর ১৯৫ জন, ৭ই ডিসেম্বর ২৩৫ জন, ৮ই ডিসেম্বর ৮০ জন, ৯ই ডিসেম্বর ৪৮ জন, ১০ই ডিসেম্বর ১১৮ জন, ১১ই ডিসেম্বর ৩০ জন, ১২ই ডিসেম্বর ২৩ জন, ১৩ই ডিসেম্বর ৪ জন, ১৪ই ডিসেম্বর ৩ জন, ১৫ই ডিসেম্বর ৬ জন, ১৬ই ডিসেম্বর ৪ জন যাত্রী বিদেশ থেকে এসেছেন। তাদের আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানায়, যদি এয়ারলাইন্সগুলো সনদ ছাড়াই দেশে যাত্রী নিয়ে আসে তাহলে শাস্তি হিসেবে প্রথমবার নিয়ম ভাঙলে ১টি ফ্লাইট, দ্বিতীয়বার নিয়ম ভাঙলে ৩টি ফ্লাইট, ৩ বার নিয়ম ভাঙলে ১ সপ্তাহের ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এরপরও যদি তারা সতর্কতা না মানেন চতুর্থবারের মতো করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়াই যাত্রী আনে তাহলে তাদের ১ মাসের জন্য ফ্লাইট বাতিল করা হবে।