সব হারিয়ে এখন শুধু কাঁদছেন তারা

0

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা॥ ছিনতাইকারীদের দেয়া চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ার পাঁচদিন পর জ্ঞান ফিরেছে যমজ শিশু সাফিয়া-মারিয়ার বাবা সেই আনিসুর রহমানের। তবে হারিয়েছেন শিক্ষক-ছাত্রদের উপহার হিসেবে দেয়া আয়ের একমাত্র সম্বল ইজিবাইকটি। এখন শুধু হাসপাতালে শুয়ে কাঁদছেন তিনি। গত ছয়দিনে ফুরিয়ে গেছে যমজ দুই শিশুর দুধও। কীভাবে জোগাড় করবেন বাচ্চাদের খাবার আর কীভাবে চালাবেন সংসার, সেই ভাবনাই এখন তার চোখে-মুখে।
আনিসুর রহমান সাতক্ষীরা সদরের ফিংড়ি ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা। অভাবী পরিবারটির একটি কুঁড়েঘর ছাড়া কিছুই নেই। অভাবের তাড়নায় যমজ শিশু সাফিয়া-মারিয়াকে দুধের বদলে ময়দা গোলা পানি খাওয়াতেন তার মা-বাবা। এভাবেই খেতে খেতে অসুস্থ হয়ে পড়ে তারা। গত ৩০ জুলাই মরণাপন্ন অবস্থায় তাদের ভর্তি করা হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। ঘটনাটি জাগো নিউজে প্রকাশ হওয়ার পর আলোচনায় আসে পরিবারটি। সংবাদ প্রকাশের পর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী পরিবারটির পাশে দাঁড়ান। পরিবারটি স্বাবলম্বী করতে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে গত ১৮ অক্টোবর যজম শিশু দুটির বাবা আনিসুর রহমানকে একটি নতুন ইজিবাইক উপহার দেন। সেটির উপার্জনের টাকা দিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। সেই সংসারে আবারও দুর্দিন নেমেছে গত ১২ ডিসেম্বর। ছিনতাইকারীরা চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে আনিসুর রহমানের সেই ইজিবাইকটি ছিনতাই করে। ওই দিন বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া-নওয়াপাড়া বাইপাস সড়কের কলিয়া আমবাগান এলাকায় অচেতন দেহটি মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দিয়ে যায়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে প্রথমে তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই এখনো চিকিৎসাধীন আনিসুর রহমান।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আনিসুর রহমান বলেন, ১২ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে সাতক্ষীরা জেলগেট এলাকা থেকে চারজন পাটকেলঘাটা যাবেন বলে জানায়। পরে আমাকে চা খেতে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর আমি অচেতন হয়ে পড়ি। এরপর কি ঘটেছে আমি কিছুই জানি না। তিনি আরও বলেন, স্যারেরা ইজিবাইকটা দিয়েছিলেন। আমি আবার নিঃস্ব হয়ে গেলাম। বাচ্চাদের কী খাওয়াব, সংসার কীভাবে চালাব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আনিসুর রহমানের স্ত্রী স্বপ্না বেগম বলেন, বাচ্চা দুটোকে দুধ কিনে খাওয়াতে পারতাম না। তারপর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সংবাদ হলে স্যারেরা পাশে দাঁড়ান। ইজিবাইক কিনে দেন। সেটি দিয়ে উপার্জনের টাকায় সংসার চলছিল। ইজিবাইকটি ছিনতাই হওয়ার পর আজ ছয়দিন দুধও খেতে পারছে না বাচ্চারা। স্বামীর চিকিৎসা করাব, সে টাকাও নেই। একদম পথে নেমে গেছি। ছিনতাইয়ের ব্যাপারে জানতে সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আহম্মদ আলী বলেন, ওইদিন একইভাবে সাতক্ষীরা থেকে তিনটি ইজিবাইক ছিনতাই হয়েছে। অচেতন অবস্থায় তিন ইজিবাইক চালককে তিন স্থানে পাওয়া যায়। একজনকে তালা থানায় ও দু’জনকে পাটকেলঘাটা থানার পৃথক দুটি স্থানে পাওয়া যায়। ঘটনার পরদিন রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি ইজিবাইকসহ দু’জনকে গ্রেফতার করে সেখানকার থানা পুলিশ। সেখানে একটি মামলা হয়। তিনি আরও বলেন, পরে ইজিবাইকটি সদরের রইচপুর এলাকার খায়রুল ইসলামের বলে শনাক্ত হয়। গ্রেফতার ওই দু’জনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় পৃথক আরেকটি মামলা হয়েছে। এ মামলায়ও গ্রেফতার দু’জনকে শোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। এসআই আলী বলেন, আগামী ২৩ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা আদালতে শুনানি হবে। তাদের আমাদের হেফাজতে নেয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে ছিনতাই হওয়া আরও দুটি ইজিবাইকের ব্যাপারে তথ্য জানা যাবে।